Uyghur Rebels and China

সিরিয়ায় বসে ড্রাগন-বধের নীল নকশা! ‘উইঘুর ক্ষত’ ধ্বংস করবে চিনা সাম্রাজ্য?

‘উইঘুর’ মুসলিম যোদ্ধাদের নিয়ে তৈরি সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি’র থেকে এ বার সরাসরি হুমকি পেল চিন। ড্রাগনল্যান্ড ভেঙে নতুন পূর্ব তুর্কিস্তান দেশ তৈরির স্বপ্ন দেখছেন তাঁদের আমির।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:২১
০১ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

‘উইঘুর’ কাঁটার ঘা শুকোচ্ছে না ড্রাগনের। উল্টে সেখানে জমা হতে শুরু করেছে পশ্চিম এশিয়ার গৃহযুদ্ধের গরম বারুদ! সামান্য একটা ফুলকিতে গোটা এলাকা যে ছারখার হবে, তা বলাই বাহুল্য। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় হেঁটেছে লালফৌজের দেশ। এর জেরে অচিরেই সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে সেখানকার মাটি রক্তে লাল হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

০২ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর এক সপ্তাহও কাটেনি। তার মধ্যেই এ বার চিনকে সরাসরি হুমকি দিয়ে বসেছে সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি’ বা টিআইপি। ড্রাগনল্যান্ড ভেঙে নতুন দেশ তৈরির শপথ নিয়েছে তারা। উল্লেখ্য আসাদ সরকারের পতনের নেপথ্যে অন্যতম বড় ভূমিকা রয়েছে টিআইপির।

০৩ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

কিন্তু, কেন হঠাৎ বেজিংকে শত্রু হিসাবে ঘোষণা করল সিরিয়ার এই সশস্ত্র গোষ্ঠী? সেটার এক এবং একমাত্র কারণ হল উইঘুর মুসলিমদের উপর চিনের শি জিনপিং সরকারের পাশবিক অত্যাচারের অভিযোগ। তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির যোদ্ধাদের নেতৃত্বে রয়েছেন এই উইঘুররা। সিরিয়ার পর এ বার ড্রাগনের সঙ্গে যাবতীয় হিসাব কড়ায়গন্ডায় বুঝে নিতে চাইছেন তাঁরা।

Advertisement
০৪ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

চিনের শিনজিয়ান প্রদেশে মূলত উইঘুর মুসলিমরা বসবাস করেন। অভিযোগ, ধর্মাচরণ থেকে শুরু করে খাদ্যাভাস, গত কয়েক বছরে তাঁদের যাবতীয় স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে জিনপিং প্রশাসন। প্রতিবাদ করলেই উইঘুরদের ঠাঁই হচ্ছে ‘পিপলস্ লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএর ক্যাম্পে।

০৫ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

এ ছাড়া চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে উইঘুর জনবহুল এলাকায় মসজিদ ভাঙার অভিযোগও রয়েছে। সেগুলিকে নিজেদের প্রাচীন সংস্কৃতির আদলে নতুন করে নির্মাণ করছে বেজিং। চাপ দিয়ে ধর্মান্তরিত করা, বিনা বিচারে আটক বা মৃত্যুদণ্ড, নানা কারণে শিনজিয়ানের উইঘুরদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে একাধিক পশ্চিমি সংবাদমাধ্যম।

Advertisement
০৬ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

এই পরিস্থিতিতে চলতি বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পরই বেজিংকে হুমকি দিয়ে ভিডিয়ো প্রকাশ করে টিআইপি। সেখানে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, শিনজিয়ানের কাশগড়, উরুমচি এবং আকসুর মতো এলাকাগুলিতে ‘জিহাদ’ শুরু করবে তারা। ড্রাগনল্যান্ড ভেঙে উইঘুরদের জন্য আলাদা দেশ গঠন না হওয়া পর্যন্ত চলবে এই ‘ধর্মযুদ্ধ’।

০৭ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

চিনকে দেওয়া টিআইপির হুমকি সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে আনে ‘দ্য টেলিগ্রাফ’। এই সংবাদ সংস্থায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অনেক যোদ্ধাই ড্রাগনল্যান্ডের উইঘুর-প্রধান এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছেন। কাশগড়, উরুমচি বা আকসুকে তালুর মতো চেনেন তাঁরা। দামাস্কাসের কায়দাতেই শিনজিয়ানের দখল নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

Advertisement
০৮ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

‘তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি’র আমির তথা প্রধান হলেন আবদ হক আল-তুর্কিস্তানি। পূর্ব তুর্কিস্তানকে চিনের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। এই এলাকা জোর করে ড্রাগন কব্জা করেছে বলে অভিযোগ তাঁদের। উল্লেখ্য, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে সিরিয়ায় সক্রিয় রয়েছেন টিআইপির এই আমির। দামাস্কাসের পতনের পর অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মতো শক্তি প্রদর্শন করেন তাঁর যোদ্ধারাও।

০৯ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

সিরিয়া ও চিনের মধ্যে দূরত্ব কয়েক হাজার মাইল। মাঝে রয়েছে একাধিক দেশ। কিন্তু তার পরেও টিআইপির হুমকিকে একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা। উল্টে ড্রাগনল্যান্ডের ভিতরে আত্মঘাতী হামলার প্রভূত আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা।

১০ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

বিশ্লেষকদের দাবি, এই ব্যাপারে পর্দার আড়াতে থেকে টিআইপিকে যাবতীয় সাহায্যে করবে আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ থেকে হাতিয়ার এবং টাকা পাবে সিরিয়ার এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। ফলে বেজিং-সহ চিনের শিল্প শহরগুলিতে জঙ্গি হামলা বা শিনজিয়ানে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি করা তাদের পক্ষে কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।

১১ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

গত কয়েক বছরে আর্থিক ও সামরিক দিক থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে চিন। ফলে নানা ইস্যুতে ড্রাগনের শাসানির মুখে পড়তে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। ‘সুপার পাওয়ার’ ওয়াশিংটন এ সব একেবারেই বরদাস্ত করতে নারাজ। বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, বেজিংকে শায়েস্তা করতে সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী টিআইপির হাতে ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র তুলে দিতে দ্বিতীয় বার ভাববে না পেন্টাগন।

১২ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

চলতি বছরের নভেম্বরে আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন তিনি। ইতিমধ্যেই চিনের বিরুদ্ধে শুল্ক যুদ্ধে নামার হুঙ্কার দিয়ে ফেলেছেন তিনি। বেজিং থেকে আমদানি করা যাবতীয় পণ্যের উপর বিরাট অঙ্কের শুল্ক চাপানোর পক্ষপাতী ট্রাম্প। আর এ ভাবেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষতি করে ড্রাগনকে ‘ভাতে মারার’ নীল নকশা ছকে ফেলেছেন এই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা।

১৩ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের আমলে চিনকে নিয়ে আমেরিকার বিদেশ নীতিতে বড় বদল দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাই শুল্ক যুদ্ধের পাশাপাশি বেজিংকে ভিতর থেকে দুর্বল করতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি করবেন না ট্রাম্প। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অস্ত্র হতে পারে ‘তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি’।

১৪ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান (স্পেশ্যাল মিলিটারি অপারেশন) চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরু হতেই আর্থিক ভাবে পঙ্গু করতে মস্কোর উপর সর্বাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয় আমেরিকা। ফলে ধীরে ধীরে চিনের সঙ্গে রাশিয়ার সখ্য বাড়তে থাকে। যুদ্ধের মাঝে বেজিং সফর করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক করেন ড্রাগন প্রেসিডেন্ট শি।

১৫ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র চিন-রাশিয়ার এই মৈত্রী মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না পেন্টাগনের সেনাকর্তারা। নিষেধাজ্ঞার বেড়া তৈরি করে মস্কোকে দুর্বল করার পরিকল্পনা সে ভাবে সফল হয়নি ওয়াশিংটনের। এ বার তাই বেজিংকে নিশানা করতে চাইছেন তাঁরা। ড্রাগন দুর্বল হলে গোটা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কায়েম হবে আমেরিকার প্রভুত্ব, বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

১৬ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

দামাস্কাসের পতনের পর থেকে সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’-এর (এইচটিএস) সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন নিজেই সে কথা স্বীকার করেছেন। এই অবস্থায় ‘তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি’র নেতাদের সঙ্গে সিআইএ বা পেন্টাগনের যোগাযোগ স্থাপন যে একেবারেই কঠিন হবে না, তা সহজেই অনুমেয়।

১৭ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

এ ছাড়া ড্রাগনভূমি কেটে নতুন দেশ গড়তে পাকিস্তানকে ব্যবহার করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। ‘চিন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’কে (চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর বা সিপিইসি) কেন্দ্র করে বর্তমানে ইসলামাবাদ ও বেজিংয়ের সম্পর্কে সামান্য চিড় ধরেছে। প্রকল্প অনুযায়ী পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের গ্বাদরে নৌসেনা ঘাঁটি তৈরি করার কথা রয়েছে পিএলএর।

১৮ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

কিন্তু এই ইস্যুতে পাক সেনার বিরুদ্ধে বেজিংকে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের খবর, গ্বাদর বন্দরের বদলে বেজিংয়ের কাছে দ্বিতীয় স্ট্রাইকে সক্ষম পরমাণু প্রযুক্তি চেয়েছেন ইসলামাবাদ। এর সাহায্যে ভারতের মতো পরমাণু হাতিয়ার বহনে সক্ষম ডুবোজাহাজ তৈরি করতে পারবে পাক ফৌজ।

১৯ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

সিপিইসিতে ৬,২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে ফেলেছে বেজিং। এই পরিস্থিতিতে প্রকল্প থেকে পিছিয়ে আসা চিনের পক্ষে এক রকম অসম্ভব। এতে বিরাট আর্থিক লোকসানের ধাক্কা সামলাতে হবে ড্রাগনকে। যদিও পাক সেনার শর্ত মানা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে জিনপিং প্রশাসন। পাশাপাশি কোনও রকমের ব্ল্যাকমেলিং বরদাস্ত করা হবে না বলেও স্পষ্ট করেছে বেজিং। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের এই সম্পর্কের ফাটলকে নিজের স্বার্থে ব্যবহারের প্রভূত সুযোগ রয়েছে আমেরিকার।

২০ ২০
Syrian Uyghur rebels will target Beijing to break China and create free East Turkistan

‘উইঘুর’ মুসলিম ইস্যুতে অবশ্য ইতিমধ্যেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে চিন। দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলালে তার ফল টিআইপিকে ভুগতে হবে বলে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেজিংয়ের বিদেশ মন্ত্রক। ভবিষ্যতে ‘উইঘুর ক্ষত’ চিনকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে কি না, সেটাই এখন দেখার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি