ছক কষেছিলেন, উড়ানে থাকাকালীন ল্যাপটপে রাখা একটি বোমায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিমানের সমস্ত যাত্রীকে উড়িয়ে দেওয়ার। তবে তার বদলে সেই বিস্ফোরণের জেরে বিমান থেকে উড়ে গেলেন খোদ আত্মঘাতী হামলাকারী জঙ্গি। ২০১৬ সালে একটি বিমানের ভিতর বিস্ফোরণ-কাণ্ডে এমনই দাবি উঠেছিল।
প্রতীকী ছবি।
২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুতে ওই বিস্ফোরণ-কাণ্ডে সে দেশের জঙ্গি সংগঠন আল-শাবাবের উপর দায় চাপিয়েছিল প্রশাসন। ঘটনার পর তা নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটলেও পরে সে অপরাধের দায়স্বীকার করে আল-শাবাব।
প্রতীকী ছবি।
২ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার মোগাদিশু বিমানবন্দর থেকে রওনা হওয়ার পর আফ্রিকার দেশ জিবুটিতে যাওয়ার কথা ছিল ডালো এয়ারলাইন্সের বিমান এয়ারবাস ৩২১-এর। তবে বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মাঝআকাশে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে সেটি। এর পর তড়িঘড়ি বিমানটিকে মোগাদিশুতে নামিয়ে এনেছিলেন চালক।
ছবি: সংগৃহীত।
তদন্তকারীদের দাবি, ল্যাপটপের ভিতরে রাখা একটি ‘ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস’ (আইইডি)-এ আচমকা বিস্ফোরণ ঘটাতেই এই বিপত্তি ঘটেছে। সে সময় ওই বিমানে ৭৪ জন যাত্রী ছিলেন। বরাতজোরে ৭৩ জন রক্ষা পেলেও বেঁচে ফেরেননি আবদুল্লা আবদিসালাম বোরলে নামে এক যাত্রী।
ছবি: সংগৃহীত।
বিস্ফোরণের অভিঘাত এতটাই ছিল যে তার জেরে ওই বিমানে একটি বড়সড় গর্ত হয়ে যায়। ওই গর্ত দিয়ে বিমান থেকে ছিটকে বহু দূরে গিয়ে পড়েন আবদুল্লা।
ছবি: সংগৃহীত।
তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, মোগাদিশু থেকে প্রায় ২৯ কিলোমিটার উত্তরে আবদুল্লার দেহ উদ্ধার হয়েছিল। প্রশাসনের দাবি, বিস্ফোরণের জেরেই হয়তো বিমান থেকে ছিটকে পড়েছিলেন আবদুল্লা। আবদুল্লাই যে ‘আত্মঘাতী হামলাকারী’ সে দাবি করেছিল প্রশাসন। বিস্ফোরণের সময় তিনিই ওই বিমানে ছিলেন বলেও দাবি তদন্তকারীদের।
প্রতীকী ছবি।
ঘটনার পর ৬ ফেব্রুয়ারি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন সোমলিয়ার তৎকালীন তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী আলি জমা জানগালি। মোগাদিশুতে ওই সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘তদন্তের পর বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন যে বিমানে বোমার মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।’’
ছবি: সংগৃহীত।
জানগালির দাবি ছিল, ‘‘বিমানের সমস্ত যাত্রীদের উড়িয়ে দেওয়ার জন্যই তার ভিতরে বোমা রাখা হয়েছিল। বোমাকাণ্ডে আল-শাবাবের হাত রয়েছে।’’
প্রতীকী ছবি।
বিস্ফোরণে হত আবদুল্লা যে আল-শাবাবের আত্মঘাতী জঙ্গি, সে দাবিও করেছিল সোমালিয়ার পরিবহণ মন্ত্রক। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিমানের সমস্ত যাত্রীকে খুন করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।
প্রতীকী ছবি।
ঘটনার সময় বিমানটির চালক ছিলেন ক্যাপ্টেন ভ্লাটকো ভোডোপিভেক। কপালজোরে প্রাণে বেঁচে যাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘এই প্রথম বিমানে বোমা বিস্ফোরণের সাক্ষী হলাম। আশা করি, আমার জীবনে এটা শেষ বার হবে।’’
প্রতীকী ছবি।
চালক আরও বলেছিলেন, ‘‘বিমানটির ৩০ হাজার ফুট উপরে ওঠার কথা ছিল। তবে বিস্ফোরণের সময় সেটি মাটি থেকে প্রায় ১১ হাজার ফুট উপরে উড়ছিল।’’
প্রতীকী ছবি।
মাঝ আকাশে আরও উঁচুতে ওঠার পর বিস্ফোরণ হলে বিমানটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হত বলে জানিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন ভোডোপিভেক। বিমানে ‘এক্সপ্লোসিভ ডিকম্প্রেশন’ (ইডি) হলে সীমিত অক্সিজেনে তা ক্ষতিকর হত বলেও মত তাঁর।
প্রতীকী ছবি।
এক সোমালি গোয়েন্দা আধিকারিক জানিয়েছিলেন, এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৬ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিমানবন্দরের সিসিটিভি দেখে তাঁর পাকড়াও করা হয়েছিল।
প্রতীকী ছবি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সোমালিয়ার অসামরিক পরিবহণ মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেছিলেন, ‘‘মৃত ব্যক্তিকে আত্মঘাতী হামলাকারী বলে সন্দেহ করার কারণ রয়েছে। কারণ, সম্ভবত তিনিই ল্যাপটপে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন। তবে ল্যাপটপে বোমা রাখা ছিল কি না, তা নিয়ে এখনই কিছু বলা সমীচীন নয়।’’
প্রতীকী ছবি।
ওই ঘটনার দিন কয়েক পর একটি বিবৃতিতে আল-শাবাব জানিয়েছিল, ‘‘ওই বিমানে থাকা পশ্চিমি দেশগুলির কয়েক জন গোয়েন্দা-সহ নেটোয় তুরস্কের প্রতিনিধিদের খুন করাই এই বিস্ফোরণের লক্ষ্য ছিল। এই অপারেশনের পরিকল্পনামাফিক বিমানটিকে মাটিতে নামানো যায়নি বটে। তবে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা গিয়েছে।’’ যদিও অত্যাধুনিক সুরক্ষাবলয় ভেদ করে ওই সন্দেহভাজন কী ভাবে বিমানে উঠলেন, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল সোমালিয়া সরকার।
গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।