বলিপাড়ায় নবাগত তারকারা আজকাল শুধু সিনেমাজগৎ নিয়েই ব্যস্ত নন, তাঁদের দেখা যায় নামী ব্র্যান্ডের মুখ হিসাবেও। দৈনন্দিন সামগ্রী থেকে বিলাসবহুল সামগ্রী প্রস্তুতকারী সংস্থারাও তাদের প্রচারের জন্য এই তারকাদেরই বেছে নেয়। শাহরুখ খান থেকে টাইগার শ্রফ সকলেই বিজ্ঞাপনজগতের পরিচিত মুখ।
সিনেমাজগতের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনজগৎ নিয়ে এই তারকারা কতটা উদ্বিগ্ন তা নিয়ে মুখ খুললেন বলিউডের জনপ্রিয় পরিচালক সুভাষ ঘাই।
বলিউডের নতুন প্রজন্মকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের নায়ক-নায়িকারা সিনেমার চেয়ে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা বিজ্ঞাপনের শুটিংকেই বেশি গুরুত্ব দেন বলেও অভিযোগ সুভাষের।
এই প্রসঙ্গে শাহরুখ খান, সলমন খানের মতো অভিনেতাদের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সুভাষ জানান, শাহরুখ-সলমনরাও বিজ্ঞাপনে অভিনয় করতেন, কিন্তু তাঁরা সবার আগে ছবির শুটিংয়ের কাজে মনোনিবেশ করতেন।
সুভাষের দাবি, যত ক্ষণ শুটিং শেষ না হয়, তত ক্ষণ সেটেই থাকতেন অভিনেতারা। কিন্তু বলিউডের নবাগতরা আজকাল ছবির কাজকে ততটা গুরুত্ব দেন না বলেও দাবি করেছেন পরিচালক।
সুভাষ এ-ও জানিয়েছেন যে, অনেক সময় অভিনেতারা দিনের পর দিন রাতের ঘুমের তোয়াক্কা না করে শুট করে গিয়েছেন।
কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের তারকাদের মধ্যে এই আগ্রহ, উদ্যম লক্ষ করা যায় না বলেই দাবি করেছেন সুভাষ।
বরং তাঁরা শুটিঙের কাজ কোনও রকমে শেষ করে বিজ্ঞাপনের কাজের জন্য বেরিয়ে যান, এমনটাই দাবি করেন পরিচালক।
বলিউডের নবাগত তারকাদের সম্পর্কে তাঁর মত, ‘এঁরা সবাই সাবান-তেলওয়ালা’। আলাদা করে কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি জানান, সাবান বা তেল বিক্রি করতেই নয়া প্রজন্মের তারকাদের উৎসাহ বেশি।
‘‘শাহরুখ, আমির, সলমনরা শুটিং শেষ করে সোজা নিজেদের বাড়ি চলে যেত। কিন্তু এখনকার সবাই রোজগার নিয়ে বেশি চিন্তিত।’’ বলেন পরিচালক।
শুধু নয়া প্রজন্মের অভিনেতাদের নিয়েই মন্তব্য করেননি সুভাষ। বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রিতে যে প্রযোজক-পরিচালকেরা কাজ করছেন, তাঁদের নিয়েও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে অবশ্য তাঁর মত, বিদেশে যে ধরনের ছবি বানানো হয় সেই ধাঁচেরই ছবি তৈরি হয় বলিউডে।
সুভাষের মতে, ছবিতে অনেক কিছুই দেখানো হয়, কিন্তু দর্শকের সঙ্গে সেই ভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন না নির্মাতারা। কারণ তাঁদের চিন্তাভাবনার মধ্যেও প্রাচ্যের সংস্কৃতি মিশে রয়েছে।
তার ছাপ চিত্রনাট্যেও পড়ে। ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না বলেই দর্শক নিজেদের জীবনের সঙ্গে সিনেমার গল্প আত্মস্থ করতে পারেন না।
সুভাষের মতে, প্রযুক্তির সাহায্য নিলেও ছবি তৈরির ক্ষেত্রে ভারতীয় সমাজের স্বাদ যেন ফুটে ওঠে সে দিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন।
আগে অভিনেতারা ছবির গল্পকে প্রাধান্য দিতেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, মূল কাহিনি ভাল হলে উপার্জন নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
ভাল কাজ করলে অর্থ উপার্জন খুব সহজেই করা যায়। কিন্তু বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা নাকি ঠিক বিপরীত।
সুভাষ জানিয়েছেন, এখনকার তারকারা দুই-তিন দিন ধরে ছবির শুটিং করে সাময়িক বিরতি নিয়ে নেন।
সেই সময় বিজ্ঞাপনের জন্য শুট করে আবার নিজেদের ছবির কাজে ফেরেন তারকারা, জানিয়েছেন পরিচালক।