রিচার্ড জন বিংঘাম, সংক্ষেপে তিনি লর্ড লুকান নামে পরিচিত। ব্রিটেনের অন্যতম নৃশংস হত্যাকারীদের তালিকায় রয়েছে তাঁর নাম। কিন্তু ১৯৭৪ সালে যে খুন লুকান করেছিলেন, এখনও তাঁকে তার শাস্তি দেওয়া যায়নি।
ছবি: সংগৃহীত।
বাড়ির পরিচারিকাকে খুন করার অভিযোগ ছিল লুকানের বিরুদ্ধে। ওই পরিচারিকা লুকানের সন্তানদের দেখাশোনা করতেন। মূলত, স্ত্রীর প্রতি আক্রোশ এবং সন্তানদের কাছে পাওয়ার আশাতেই এমন নৃশংস হয়ে উঠেছিলেন তিনি, মনে করেন গোয়েন্দারা।
ছবি: সংগৃহীত।
১৯৭৪ সালে ৭ নভেম্বর বাড়িতে খুন হয়েছিলেন স্যান্দ্রা রিভেট। রান্নাঘর থেকে তাঁর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। লুকানের স্ত্রীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। তাঁর তিন সন্তানের দেখাশোনা করতেন।
ছবি: সংগৃহীত।
তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ভারী কিছু দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে রিভেটকে। তাঁর সারা শরীর এক প্রকার থেঁতলে গিয়েছিল। এই নৃশংস হত্যাকারীকে খুঁজে বার করতে পারেননি গোয়েন্দারা।
ছবি: সংগৃহীত।
লুকান এর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বিবাহবিচ্ছেদ হয় ১৯৭২ সালে। সন্তানরা কার কাছে থাকবে, আদালতে সেই মামলায় হেরে যান লুকান। তার পর থেকেই স্ত্রীর প্রতি আক্রোশ ছিল তাঁর। নানা ভাবে সন্তানদের নিজের কাছে ফিরে পেতে চাইতেন।
ছবি: সংগৃহীত।
তদন্তকারীদের দাবি, ঘটনার দিন স্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে রান্নাঘরে আগে থেকেই লুকিয়েছিলেন লুকান। সেখানে চা করতে গেলে রিভেটের উপর তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা ভারী পাইপ উদ্ধার করেছে পুলিশ। খুনে এই পাইপ ব্যবহৃত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
ছবি: সংগৃহীত।
রান্নাঘরে ঢুকতেই রিভেটকে পাইপ দিয়ে মারতে শুরু করেন লুকান। যত ক্ষণ রিভেট পুরোপুরি নিথর হয়ে পড়ছেন, তত ক্ষণ পর্যন্ত থামেননি। রান্নাঘরেই লুটিয়ে পড়েন লুকানের সন্তানদের দেখভালকারী পরিচারিকা।
ছবি: সংগৃহীত।
পরিচারিকার দেহ একটি ব্যাগে ভরে লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল। তাঁকে খুঁজতে রান্নাঘরে আসেন লুকানের স্ত্রী ভেরোনিকা। স্ত্রীকেও মারতে শুরু করেন লুকান। বেশ কিছু ক্ষণ ধস্তাধস্তির পর তাঁদের মধ্যে ‘সমঝোতা’ হয়।
ছবি: সংগৃহীত।
লুকানকে তাঁর স্ত্রী প্রথমে সাহায্যের আশ্বাস দেন। যে খুন তিনি করেছেন, তার দায় এড়াতে, পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে তিনি তাঁকে সাহায্য করবেন, এই আশ্বাস দিয়ে ভেরোনিকা লুকানকে ঘরে নিয়ে যান। তার পর লুকান শৌচালয়ে গেলে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে আসেন। তাঁদের তিন সন্তান ওই বাড়িতেই তখন ঘুমোচ্ছিল।
ছবি: সংগৃহীত।
পালিয়ে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন ভেরোনিকা। সেখান থেকেই পুলিশে খবর দেন। লুকান এর পর নিজের মাকে একটি ফোন করেছিলেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। মাকে তিনি জানিয়েছিলেন, ভেরোনিকার বাড়িতে ভয়ঙ্কর কিছু কাণ্ড হয়েছে। তাই ছেলেমেয়েদের সেই বাড়ি থেকে যেন লুকানের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
ছবি: সংগৃহীত।
এর পর এক বন্ধুর বাড়িতেও গিয়েছিলেন লুকান। কিন্তু তার পর থেকেই তাঁর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল বন্ধুর বাড়িতেই। এর পর যেন কর্পূরের মতো উবে গিয়েছিলেন লুকান।
ছবি: সংগৃহীত।
তদন্ত চলাকালীন নানা জায়গা থেকে লুকানের খোঁজ আসতে শুরু করে। অনেকেই অনেক সময় পুলিশকে জানান, যে নৃশংস খুনি খোঁজ চলছে, তাঁকে তাঁরা দেখেছেন। কিন্তু কোনও সূত্র থেকেই লুকান সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য মেলেনি। লুকানকে খুঁজেও পায়নি পুলিশ।
ছবি: সংগৃহীত।
১৯৯৯ সালে লুকানকে আনুষ্ঠানিক ভাবে মৃত বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয়। আইনি জটিলতা কাটিয়ে ২০১৬ সালে তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্র হাতে পান লুকানের ছেলে। তাঁর সম্পত্তি ভোগের অধিকারও দেওয়া হয় ছেলেকে।
ছবি: সংগৃহীত।
কিন্তু ১৯৭৪ সালের এই কাহিনির মোড় ঘুরে গিয়েছে ২০২২ সালে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় ‘মৃত’ লুকানের খোঁজ মিলেছে বলে দাবি। তদন্তকারীদের একাংশ দাবি করেছে, লুকান এখনও জীবিত রয়েছেন। তিনি রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়।
ছবি: সংগৃহীত।
বেঁচে থাকলে লুকানের বয়স এত দিনে হত ৮৭ বছর। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের কাছে যে বৃদ্ধের হদিস পাওয়া গিয়েছে, তাঁর বয়সও ৮৭। মুখের গড়ন থেকে শুরু করে অন্যান্য নানা বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে দেখে তদন্তকারীরা কেউ কেউ নিশ্চিত হয়েছেন, এই বৃদ্ধই সেই লুকান।
ছবি: সংগৃহীত।
৪৮ বছর আগে ব্রিটেন থেকে খুন করে পালিয়ে যাওয়া লুকানকে খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিল পুলিশ। তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মৃত রিভেটের পরিবার হাল ছাড়েনি। তাঁর ছেলে নেইল বেরিম্যান মায়ের খুনির সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার এই বৃদ্ধের খোঁজও তিনিই পান।
ছবি: সংগৃহীত।
নেইল জানান, গত ৯ বছর ধরে তিনি দাবি করে এসেছেন এই বৃদ্ধই তাঁর মায়ের খুনি লুকান। কিন্তু পুলিশ তাঁর কথায় বিশ্বাস করেনি। সম্প্রতি নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরাও দাবি করেছেন, অস্ট্রেলিয়ার রহস্যময় বৃদ্ধ ৪৮ বছর আগে পালিয়ে গা ঢাকা দেওয়া লুকান হতে পারেন। পুলিশকে অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
ছবি: সংগৃহীত।
অস্ট্রেলিয়ার এই বৃদ্ধ দাবি করেন, তিনি এক সময় ব্রিটেনে থাকতেন। পরে সেখানে ‘ভয়ঙ্কর কিছু কাণ্ড’ হওয়ায় তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসতে হয়েছিল। তাঁর এই দাবির উপর ভিত্তি করেও অনেকে মনে করছেন, লুকান-কাণ্ডের সঙ্গে তাঁর যোগ থাকতে পারে।
ছবি: সংগৃহীত।