১৯৮৩ সালের ২৫ জুন। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা এক অধ্যায়। সে সময়ের প্রবল পরাক্রমী ওয়েস্ট ইন্ডিজ় দলকে হারিয়ে প্রথম বার বিশ্বকাপ জেতে ভারত। সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন কপিল দেব। তার পর ৪০ বছর কেটে গিয়েছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির হাত ধরে আবার বিশ্বকাপ পেয়েছে ভারত। কিন্তু এখনও ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের কথা বললে মনে পড়ে বিশ্বকাপ হাতে ধরে লর্ডসের মাঠে কপিলের সেই বিখ্যাত ছবি।
বিশ্বকাপজয়ী সেই দলকে কমবেশি সকলেই চেনেন। কিন্তু তাঁদের পুত্র-কন্যাদের বিষয়ে জানা আছে কি?
কপিল, সুনীল গাওস্কর, রজার বিন্নীর মতো ক্রিকেটারদের পুত্র-কন্যারা কেউ ক্রিকেটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে তো কেউ পরোক্ষ ভাবে যুক্ত। কারও আবার ক্রিকেটের সঙ্গে দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক নেই।
এই তালিকায় প্রথমেই যাঁর নাম আসে, তিনি কপিল-কন্যা অমিয়া দেব। অমিয়ার জন্ম ১৯৯৬ সালের ১৬ জানুয়ারি। দিল্লিতেই তাঁর জন্ম আর বেড়ে ওঠা। গুরুগ্রামের শ্রী রাম স্কুল থেকে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে আবার ভারতে ফিরে আসেন।
কপিলদের বিশ্বকাপ জয় নিয়ে সম্প্রতি একটি ছবিও হয়েছে। ছবির নাম ছিল ‘৮৩’। কপিলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অভিনেতা রণবীর সিংহ। সেই ছবিতেই পরিচালক কবীর খানের সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন অমিয়া।
১৯৮৩-এর ক্রিকেট বিশ্বকাপের ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন সুনীল গাওস্কর। সুনীল-পুত্র রোহন গাওস্কর ক্রিকেটে মোটামুটি পরিচিত নাম। ভারতের হয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচও তিনি খেলেছেন।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে ১১টি এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন রোহন। তবে আন্তর্জাতিক স্তরে ক্রিকেট নিয়ে বেশি দূর এগোতে পারেননি তিনি। বাবার মতো সাফল্যও পাননি। বর্তমানে ৪৭ বছর বয়সি এই প্রাক্তন ক্রিকেটার ধারাভাষ্যকার হিসাবে কাজ করেন।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের ভরসার জায়গা ছিলেন ক্রিকেটার কৃষ্ণামাচারি শ্রীকান্ত। ডানহাতি ব্যাটার হওয়ার পাশাপাশি আংশিক সময়ের অফ-স্পিন বোলারও ছিলেন তিনি।
কৃষ্ণামাচারির পুত্রের নাম অনিরুদ্ধ শ্রীকান্ত। বাবার মতোই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন অনিরুদ্ধ। তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটের পাশাপাশি আইপিএলেও খেলেছেন। তবে ক্রিকেটার হিসাবে সেই ভাবে সাফল্য না পাওয়ায় তিনি এখন কাজ করেন ধারাভাষ্যকার হিসাবে।
রজার বিন্নীর পুত্র স্টুয়ার্ট বিন্নীর জন্ম বেঙ্গালুরুতে। বেঙ্গালুরুর সেন্ট জোসেফ’স বয়েজ হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর ক্রিকেটকেই ধ্যানজ্ঞান করে প্রশিক্ষণ শুরু করেন তিনি।
অলরাউন্ডার হিসাবে ঘরোয়া ক্রিকেট এবং আইপিএলে ভাল খেললেও আন্তর্জাতিক স্তরে বিশেষ নাম করতে পারেননি স্টুয়ার্ট। ২০২১-এর ৩০ অগস্ট ক্রিকেটের সব ফরম্যাট থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেন তিনি। ২০১২ সালে স্টুয়ার্ট ক্রীড়া সাংবাদিক তথা সঞ্চালক মায়ন্তি ল্যাঙ্গারকে বিয়ে করেন।
সন্দীপ পাতিলের পুত্র চিরাগ পাতিল অবশ্য বাবার জুতোয় পা গলানোর চেষ্টা কখনও করেননি। প্রথম থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল অভিনেতা হওয়ার। বেশ কয়েকটি হিন্দি এবং মরাঠি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। অভিনেতা দেব আনন্দ পরিচালিত ‘চার্জশিট’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন চিরাগ।
‘৮৩’ ছবিতে বাবা সন্দীপের চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিরাগই। তবে অভিনেতা হিসাবে তিনি বিশেষ সাফল্য পাননি।
রবি শাস্ত্রীর কন্যা অলেখা শাস্ত্রী। বাবা নামী ক্রিকেটার হওয়া সত্ত্বেও অলেখা কিন্তু থাকেন প্রচারের আলোকবৃত্তের বাইরেই। সমাজমাধ্যমেও অলেখার কোনও অ্যাকাউন্টের খোঁজ মেলে না।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দলের উইকেটকিপার ছিলেন সৈয়দ কিরমানি। ব্যাটার হিসাবেও নাম ছিল তাঁর। কিরমানি-পুত্র সাদিক কিরমানি প্রত্যক্ষ ভাবে ক্রিকেট খেলার সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত।
সাদিকের একাধিক ক্রিকেট কোচিং সেন্টার রয়েছে। যেখানে তিনি তরুণ খেলায়াড়দের প্রশিক্ষণ দেন।
বিশ্বকাপজয়ী দলের ডানহাতি ব্যাটার হিসাবে উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল মহিন্দর ‘জিমি’ অমরনাথের। মহিন্দর এবং তাঁর স্ত্রী ইন্দেরজিতের এক কন্যা রয়েছে। তাঁর নাম সিমরন অমরনাথ। তিনিও থাকেন প্রচারের আলোর বাইরেই।
ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ১৯৮৩ বিশ্বকাপ খেলা ভারতীয় দলের ব্যাটার যশপাল শর্মার। ২০২১ সালের ১৩ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর এক ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে। তাঁর ছেলে চিরাগ শর্মা টুকটাক ক্রিকেট খেললেও সে ভাবে আগ্রহী ছিলেন না। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিরাগ বর্তমানে ব্রিটেনে রয়েছেন। (এই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল ক্রিকেটার যশপাল শর্মার মৃত্যু হয় ১৯২১ সালের ১৩ জুলাই। এই তথ্য ভুল। যশপাল শর্মার মৃত্যু হয় ২০২১ সালের ১৩ জুলাই। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।)
কপিলদের দলে আরও এক জন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন কীর্তি আজাদ। তিনি বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কীর্তির দুই পুত্র রয়েছে। সূর্যবর্ধন এবং সোম্যবর্ধন।
কীর্তির বড় পুত্র সূর্যবর্ধন দিল্লি অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ এবং অনূর্ধ্ব-২২ দলে খেলেছেন। ছোট ছেলে সোম্যবর্ধন খেলেছেন দিল্লির অনূর্ধ্ব-১৫ এবং অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে।
ওই একই দলের অন্যতম অলরাউন্ডার ছিলেন মদন লাল। মদন লালের এক পুত্র এবং এক কন্যা রয়েছেন। পুত্র কুণাল লাল টুকটাক ক্রিকেট খেললেও খুব বেশি সাফল্য পাননি। বর্তমানে তিনি বেশ কয়েকটি ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের মালিক। তরুণ খেলায়াড়দের নিজেও প্রশিক্ষণ দেন কুণাল।
সুনীল গাওস্কর এবং গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের পাশাপাশি সত্তরের দশকের শেষের দিকে এবং আশির দশকের শুরুতে ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে দিলীপ বেঙ্গসরকার ছিলেন অন্যতম। তিনিও ১৯৮৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন।
দিলীপের এক কন্যা রয়েছেন। পল্লবী বেঙ্গসরকার। তবে তিনি ক্রিকেটের জগৎ থেকে বহু ক্রোশ দূরে। মডেল হিসাবে নামডাক রয়েছে তাঁর।
— ফাইল চিত্র।