অপেশাদার হিসাবে মহাকাশে পদচারণা করে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন ৪১ বছর বয়সি ধনকুবের জেয়ার্ড আইজ়্যাকম্যান। স্পেসএক্সের ‘ডন পোলারিস’ বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক মিশন, যেখানে উপস্থিত মহাকাশচারীরা মহাকাশে পদচারণা করবেন।
প্রথম অপেশাদার নভোচর হিসাবে সফল ভাবে এই মাইলফলক ছুঁতে পেরেছেন জেয়ার্ড। আমেরিকান কোটিপতি ও মহাকাশ পর্যটক নাম লিখিয়েছিলেন স্কুলছুটদের দলেও।
নিউ জার্সির বাসিন্দা আইজ়্যাকম্যান ও স্পেসএক্সের ইঞ্জিনিয়ার সারাহ গিলিস ২০২৪ সালে স্পেসএক্সের পোলারিস ডন মিশনের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার উপরে ড্রাগন ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে মহাকাশে হাঁটার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সালে শুরু হওয়া পোলারিস ডন মিশন সফল ভাবে মহাকাশে পাঁচ দিনের যাত্রা সম্পন্ন করেছে। এই সাফল্য ভবিষ্যতের বাণিজ্যিক মহাকাশ অনুসন্ধানের পথ প্রশস্ত করেছে।
পাঁচ বছর বয়স থেকেই মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন এই প্রযুক্তিবিদ। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তৈরি করে ফেলেন আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত সংস্থা ‘শিফ্ট৪’।
এই সংস্থার জন্য জেয়ার্ডকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। দাদুর কাছ থেকে আট লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ির নীচে একটি ঘরে ‘শিফ্ট৪’-এর যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি।
সেই সংস্থার বর্তমান বাজারমূল্য ৬ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা। গোটা আমেরিকা জুড়ে সংস্থার ২ হাজার কর্মী ছড়িয়ে রয়েছেন।
মহাকাশে যাওয়ার খরচ বিপুল। স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলে একটি আসনের দাম প্রায় ৪৬১ কোটি টাকা।
চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর কেপ কার্নিভাল থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় ড্রাগন ক্যাপসুলের। এর জন্য ফ্যালকন-৯ রকেটের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। এটি একটি ঐতিহাসিক মিশন বলে মনে করছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা।
জ্যারেড ও সারার পরনে ছিল বিশেষ ভাবে নকশা করা নতুন পোশাক (স্পেস স্যুট)। তাঁরা ১০-১৫ মিনিট করে মহাকাশযানের বাইরে কাটান। অভিযানে অংশ নেওয়া বাকি দু’জন ক্যাপসুলের ভিতরেই ছিলেন।
গত রবিবার ভোরে ফ্লোরিডার উপকূলে ড্রাই টর্তুগাসে অবতরণ করে স্পেসএক্সের ‘ক্রু ড্রাগন’ ক্যাপসুলটি। মহাকাশে পাঁচ দিনের মিশন শেষে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন স্পেসএক্সের ‘পোলারিস ডন’ মিশনের চার মহাকাশচারী।
পোলারিস ডন মিশনটির সমস্ত খরচ যৌথ ভাবে ইলন মাস্কের স্পেস এক্স এবং আইজ়্যাকম্যান বহন করেছেন। আইজ়্যাকম্যান ও সারাহ ছাড়া পাইলট স্কট পোটিট এবং আনা মেনন ছিলেন এই মিশনের বাকি দুই সদস্য।
মহাকাশে পা রাখার আগে প্রায় ৪০ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয় নভোচরদের নিয়ে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল স্টারলিঙ্ক ব্যবহার করে মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে সরাসরি ভিডিয়ো সংযোগ স্থাপন করা।
২০০৯ সালে আইজ়্যাকম্যান মাত্র ৬২ ঘণ্টারও কম সময়ে বিমানে সারা বিশ্ব ভ্রমণ করে নজির গড়েন। আগের রেকর্ডধারীর চেয়ে প্রায় ২০ ঘণ্টা কম সময়ে তিনি এই রেকর্ড গড়েন।
তিন বছর পরে তিনি ‘ড্রাকেন ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যা আমেরিকান বিমানবাহিনীর জন্য ছাত্রদের বিমানচালকের প্রশিক্ষণ দেয়। পরে বিনিয়োগ সংস্থা ব্ল্যাকস্টোনের কাছে তিনি এটিকে বিক্রি করে দেন।
মহাকাশে রওনা হওয়ার আগে সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে তিনি জানিয়েছিলেন, এক সময় পিৎজ়ার খরচ মেটানোর জন্য নিজের বাড়ির নীচে এক সংস্থা তৈরি করেন যা আজ ‘সাম্রাজ্যের’ আকার নিয়েছে।
সব ছবি: সংগৃহীত।