জাপানের ব্যস্ততম শহর থেকে ট্রেনে চেপে বসলেই ম্যাজিক। আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই শহরের কোলাহল থেকে যাত্রীদের দূরে নিয়ে যায় জাপানের এই ট্রেন। সমুদ্র থেকে পাহাড়— প্রায় সব সৌন্দর্যই ধরা পড়ে এই যাত্রায়। আদ্যেপান্ত বিলাসিতায় মোড়া এই ট্রেনে যাতায়াত করতে কত খরচ হয় যাত্রীদের?
স্থানীয় সময় অনুযায়ী প্রতি দিন সকাল ১১টা নাগাদ জাপানের টোকিয়ো শহর থেকে ছাড়ে ‘স্যাফায়ার ওদোরিকো’। বিলাসবহুল এই ট্রেনের গন্তব্যস্থল জাপানের ইজ়ু শহর। টোকিয়ো থেকে শেষ গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা।
টোকিয়ো থেকে ইজ়ু যাওয়ার পথে যাত্রীদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাক্ষী রাখতে পুরো ট্রেন জুড়ে রয়েছে বিশাল বিশাল কাচের জানলা। শুধু তা-ই নয়, বিশেষ ধরনের কামরার ছাদের একাংশও কাচ দিয়ে তৈরি। সহজে ভাঙা যায় না, এমন কাচই ব্যবহার করা হয়েছে।
ট্রেনের আসনগুলিও আরামপ্রদ। ট্রেনের সামনের দিকে আসনগুলির মুখ থাকলেও যাত্রীদের সুবিধা মতো তার দিকবদল করা যায়। অর্থাৎ, যাত্রীরা তাঁদের ইচ্ছা মতো জানলার দিকে আসন ঘুরিয়ে বসতে পারেন।
আসনে হাত-পা ছড়িয়ে বসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। ফোন অথবা ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার জন্য রয়েছে আলাদা চার্জিং পয়েন্ট। প্রয়োজন মতো সেখানে ডেটা কেব্লের তারও লাগানো যেতে পারে।
আসনে বসে যাত্রীরা যদি পড়াশোনা করতে চান, তার জন্য রয়েছে বিশেষ আলোর ব্যবস্থা। আসনে লাগানো সুইচ টিপলেই সেখানকার আসনে থাকা ‘রিডিং লাইট’টি জ্বলে উঠবে।
ট্রেনের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কামরা রয়েছে। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য আলাদা ভাবে ঘরও বুক করতে পারেন যাত্রীরা। সেই ঘরে একটি লম্বা টেবিল ঘিরে পাতা থাকে কয়েকটি চেয়ার। জানলার দিকে টেবিলের মুখ করা থাকে।
কোনও কোনও ঘরে একসঙ্গে চার জন, আবার কোনও ঘরে একসঙ্গে ছ’জন যাত্রীও থাকতে পারেন। বিশ্রামের জন্য রাখা থাকে বিছানাও।
ট্রেনের ভিতর আলাদা করে রয়েছে একটি বিলাসবহুল ক্যাফেটেরিয়া। স্যুপ থেকে ন্যুডল্স, এমনকি স্থানীয় বিশেষ খাবারও সেখানে পাওয়া যায়। তবে ট্রেনে আসন সংরক্ষণ করার সময় খাবারের জন্য অর্ডার দিয়ে রাখতে হয়।
ট্রেনের যে যাত্রীরা ব্যক্তিগত ঘরে যাতায়াত করছেন, তাঁদের খাবার ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অন্য যাত্রীদের খাবার ক্যাফেটেরিয়ার ভিতর পরিবেশন করা হয়।
তবে কুকিজ় অথবা পানীয় অর্ডার করলে তা ক্যাফেটেরিয়া থেকে সব যাত্রীর আসনে পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা রয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, এই ট্রেনে যাতায়াত করতে মাথাপিছু খরচ হয় ভারতীয় মুদ্রায় ছ’হাজার টাকার কাছাকাছি।
শুধু আসনই নয়, এই ট্রেনের শৌচালয়ও নজরকাড়া। বোতাম টিপে শৌচালয়ের দরজা খোলা যায়। বিশাল আয়তনের শৌচালয়টিও বেশ বিলাসবহুল।
সব ছবি: সংগৃহীত।