দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে সদ্যোজাত অথবা সদ্য হামাগুড়ি দিতে শেখা শিশু। মায়ের কোলে চেপে, হাত ধরে বা ক্রিবে চড়ে হোটেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অপত্য স্নেহে কখনও তার মুখ মুছিয়ে দিচ্ছেন, আবার কখনও আলতো করে চুল আঁচড়ে দিচ্ছেন মা।
কিন্তু কাছে গিয়ে সেই সব শিশুকে ভাল করে দেখলে চমকে উঠতে পারেন! কারণ এরা কেউই জীবন্ত মানবশিশু নয়। এক নয়, একাধিক মহিলার কোলে সদ্যোজাত শিশুর মতো দেখতে এক বিশেষ ধরনের পুতুল দেখতে পাওয়া গিয়েছে একটি হোটেলে।
যিনি চেষ্টা করেও মা হতে পারেন না বা বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার কারণে গর্ভপাতের মতো ঘটনার সম্মুখীন হন, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে এমন প্রয়াস দেখা যায় বিভিন্ন দেশে। তবে এই নিয়ে রয়েছে বিতর্কও।
জন্মের আগেই সন্তানকে হারানোর যন্ত্রণা থেকে নিজেদের মনকে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দিতে আমেরিকা, ব্রিটেনে ২০১০-১১ সাল নাগাদ এই পুতুল তৈরির তাগিদ শুরু হয়। সন্তানহারা মায়ের জীবনে তৈরি হওয়া শূন্যতাকে ভরিয়ে তুলতে বিভিন্ন ধরনের পুতুল তৈরি হতে থাকে।
সদ্যোজাত শিশুর মতো দেখতে হয় বলে অনেকে মনে করেন, এগুলোর মাধ্যমে কাছের মানুষের ফিরে আসার অনুভূতি পাওয়া যায়। সেই জন্যই এদের বলা হয় পুনর্জন্মের পুতুল!
পুতুলগুলি মূলত ক্লে দিয়ে তৈরি। সেগুলি যাতে আসলের মতো দেখতে হয়, তাই মাথার চুল হিসাবে আসল চুল ব্যবহার করা হয়।
শিশুদের শরীরে যে বিশেষ গন্ধ থাকে তার অনুকরণে বিশেষ সুগন্ধি ছড়িয়ে দেওয়া হয় পুতুলের গায়ে।
শুধুমাত্র সন্তান হারানো মা নয়, পুনর্জন্মের পুতুলগুলিকে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগ উপশমের ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো হয়ে থাকে।
জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও শিশু খুবই পছন্দ করেন। এই পুতুলের মধ্যে দিয়ে তাঁদের ফেলে আসা জীবন ও সন্তানের স্মৃতিকে রোমন্থন করতে ভালবাসেন তাঁরা।
২০১৭ সালে ডিমেনশিয়া রোগীদের চিকিত্সায় এই বিশেষ ধরনের পুতুল ব্যবহার করে আশাব্যঞ্জক ফল পান মনোচিকিত্সকেরা। ২০২২ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মানসিক অবস্থাকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে এই পুতুল।
একাধিক দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন গুরুতর অস্টিয়োপোরোসিস, আর্থ্রাইটিস, বাইপোলার এবং অন্যান্য উদ্বেগজনিত ব্যাধি যাঁদের রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, পুতুলগুলি তাঁদের মানসিক সমস্যা কম করতে সাহায্য করতে পারে।
পুতুলগুলির দাম ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
তবে সন্তানহারা মায়ের কোল ভরাতে এক মহিলাকে এই ভাবে ভ্রান্তির দিকে ঠেলে দেওয়ার পক্ষপাতী নন অনেকেই। বিষয়টিকে অনেকে অস্বস্তিকর বলেও আখ্যা দিয়েছেন। জীবন্ত মানবশিশুর মতো দেখতে হলেও তাদের ভীতিজনক বলে মনে করেন অনেকেই।
তবে এক জন নারীর সন্তান হারানোর বেদনার সমব্যথী হয়ে অনেক মানুষই এই পুতুলগুলির মধ্যে খারাপ কিছু দেখছেন না।
—সব ছবি সংগৃহীত।