তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ফের একবার আমেরিকা সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিন দিনের সফরে সেখানে কোয়াড সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন তিনি। রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর সস্ত্রীক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নমো।
বিশ্বের ক্ষমতাশালী দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দেখা হলেই তাঁদের কিছু না কিছু উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এ বারও তার অন্যথা করেননি তিনি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং তাঁর স্ত্রী জিলের হাতে রুপোর কারুকার্য করা স্টিম ইঞ্জিন চালিত ট্রেনের মডেল ও পশমিনা শাল উপহার দিয়েছেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রী মোদী রুপোর যে ট্রেনের মডেলটি উপহার দিয়েছেন, তাতে রয়েছে ভারতীয় রেলের ট্যাগ। ট্রেনটিতে প্রতীকী ভাবে দিল্লি থেকে ডেলাওয়্যার রুটের দিক নির্দেশ করা রয়েছে। আমেরিকার এই ডেলাওয়্যার শহরের বাসিন্দা প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এ বার সেখানেই বসছে কোয়াড সম্মেলন।
সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রুপোর ট্রেনের ওই মডেলটি তৈরি করেছেন মহারাষ্ট্রের শিল্পীরা। এতে রুপোর পরিমাণ ৯২.৫ শতাংশ বলে জানা গিয়েছে। মডেলটির মাধ্যমে ভারতের ধাতুশিল্পের গৌরব তুলে ধরা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের স্ত্রী তথা আমেরিকার ফার্স্ট লেডি জিলকে পশমিনা শাল উপহার দিয়েছেন মোদী। জম্মু-কাশ্মীরের এই শালের ভুবনজোড়া খ্যাতি রয়েছে। হস্তশিল্পীদের দ্বারা তৈরি ঐতিহ্যবাহী ও কারুকার্যমণ্ডিত একটি বাক্সে ওই শালটি রাখা ছিল।
পশমিনা শালের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লাদাখের চাংথাঙ্গি ছাগলের গল্প। বরফে ঢাকা হিমালয়ের উপত্যকায় এই প্রাণীগুলিকে অবাধে বিচরণ করতে দেখা যায়। ওই ছাগলের গায়ের লোম বা পশম থেকে পশমিনা কথাটি এসেছে।
জম্মু-কাশ্মীরের কারিগরদের হাতের জাদুতে তৈরি হয় পশমিনা শাল। অত্যন্ত সূক্ষ্ম ভাবে তা তৈরি করতে হয়। গাছপালা ও খনিজ থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করেন তাঁরা। যা ওই শালকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
পশমিনা শালকে যে বাক্সে রাখা হয়, সেগুলির কারুকার্যও দেখার মতো। ঐতিহ্যগত ভাবে ওই শালগুলিকে বাক্সবন্দি করেন কাশ্মীরি শিল্পীরাই। কাগজ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয় এই বাক্স। সেগুলির গায়ে নকশা কেটে দেন শিল্পীরা।
পশমিনা শালের বাক্সে কাশ্মীরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরার রেওয়াজ রয়েছে। তেমনই একটি বাক্সে থাকা শাল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের স্ত্রী জিলকে উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। যা হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন আমেরিকার ফার্স্ট লেডি।
চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার মাটি ছোঁয় প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিমান। কোয়াড সম্মেলনের মধ্যেই তাঁকে নৈশাহারে আমন্ত্রণ জানান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এলাহি খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা ছিল সেখানে। মোদীর জন্য একাধিক নিরামিষ পদেরও আয়োজন করা হয়েছিল।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, মোদী-বাইডেনের নৈশাহারের যাবতীয় খাবার তৈরি করেছেন অ্যান্টিমো ডিমিয়ো। ডেলাওয়্যারের উইলমিংটন শহরের বারদোয়া রেস্তরাঁ গ্রুপের সহায়তায় নৈশাহারের যাবতীয় খাবার নিজের হাতে রান্না করেছেন তিনি।
আমেরিকার জনপ্রিয় শেফদের মধ্যে অন্যতম জেমস বিয়ার্ড। তাঁর লেখা একাধিক রান্নার বই আটলান্টিকের পারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সূত্রের খবর, মোদী-বাইডেনের নৈশাহারের খাবার তৈরির জন্য ডিমিয়োকে তিনি মনোনীত করেছিলেন। সরকারি ভাবে যা নিয়ে কিছু জানায়নি ওয়াশিংটন।
নৈশাহারের একেবারে প্রথমেই ছিল ক্যাপ্রেস স্যালাড। মোজারেলা ডি বুফালা, স্কারলেট রেড ছোট টম্যাটো, বেসিল ও সিসিলিয়ান অরিগ্যানো দিয়ে যা তৈরি করা হয়েছিল।
ডিমিয়ো প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্য রুট ভেজিটেবল পেভ, লেমন রিসোটো, পেস্তা ও ব্ল্যাক লাইম দিয়ে নিরামিষ প্লেট সাজিয়েছিলেন। আমিষের মধ্যে ছিল ওয়াগিউ স্ট্রিপ স্টেক, লেমন রিসোটো। এ ছাড়াও রেড স্ন্যাপার ও লেমন রিসোটো অতিথিদের দেওয়া হয়েছিল।
সবশেষে ছিল জেলটো ট্রিয়ো ডিশ। তাতে রাখা ছিল ভ্যানিলা বিন, চকোলেট, পেস্তা, কোকো ক্রাম্বল ও পিজ়েল। পাশাপাশি নৈশাহারে ঢালাও মদ্যপানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে রাখা ছিল, শ্রামসবার্গ, ব্ল্যাঙ্ক ডি ব্ল্যাঙ্কস, ক্যালিফোর্নিয়া মডেল ফার্ম, ওয়াইল্ডক্যাট মাউন্টেন, চার্ডোনে, সোনোমা কাউন্টি, ক্যালিফোর্নিয়া ও’শাঘনেসি, ক্যাবারনেট সউভিগনন, হাওয়েল মাউন্টেন, নাপা ভ্যালি, ক্যালিফোর্নিয়ার মতো দামি সুরা।
কোয়াড সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘‘চার দেশের এই জোট কারও বিরুদ্ধে নয়। সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ ভাবে আমরা একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছি।’’
কোয়াড সম্মেলনের মধ্যেই আলাদা করে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনিয়ো অ্যালবানিজ় ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিয়ো কিশিদার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এ বারের সফরে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার বক্তৃতা করবেন তিনি।
সূত্রের খবর, এ বারের সফরে নিউ ইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলসের বিএপিএস স্বামীনারায়ণ মন্দিরে ভাষণ দেবেন নমো। সেখানে প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটাতে পারেন তিনি। তবে এই নিয়ে সরকারি তরফে কিছু জানানো হয়নি।
সব ছবি: সংগৃহীত