বলিপাড়ার ‘চকোলেট বয়’। পাঁচ দশক হিন্দি চলচ্চিত্রজগতে অভিনয় করেছেন তিনি। সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশকে রোম্যান্টিক ঘরানার ৯২টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ঋষি কপূর। শুধু বড় পর্দায় নয়, অভিনেতার ব্যক্তিগত জীবনেও ছিল ভরপুর রোম্যান্স। একাধিক সহ-অভিনেত্রীর সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল তাঁর। কানাঘুষো শোনা যায়, প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলার জন্য নাকি স্ত্রী নীতু কপূরের কাছে বায়নাও করতেন প্রয়াত অভিনেতা।
১৯৭৩ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ববি’। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি খ্যাতি অর্জন করেন ঋষি। ‘ববি’ ছবিতে ঋষির বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় অভিনেত্রী ডিম্পল কপাডিয়াকে। বলিপাড়ায় জনশ্রুতি, ‘ববি’ ছবির শুটিং চলাকালীন নাকি ডিম্পলের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন অভিনেতা।
‘খুল্লম খুল্লা’ নামে একটি বইয়ে নিজের জীবনের গোপন কথা লিখেছিলেন ঋষি। সেই বইয়েই ডিম্পলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের সমীকরণ খোলসা করেছিলেন অভিনেতা। এমনকি তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন যে, ডিম্পলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকায় চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন নীতু।
ঋষি লিখেছিলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ডিম্পলের শুধুমাত্র বন্ধুত্ব ছিল। হতে পারে, ‘ববি’ ছবির শুটিংয়ের সময় তা বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আমার সঙ্গে ডিম্পলের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বড্ড চিন্তা করত নীতু।’’
‘ববি’ ছবি মুক্তির ১২ বছর পর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘সাগর’। এই ছবিতেও ঋষি এবং ডিম্পল একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। ঋষি তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেন যে, ‘সাগর’ ছবির শুটিংয়ের সময় ডিম্পলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেন নীতু।
ঋষি লিখেছিলেন, ‘‘চিন্তা করার মতো কিছু ছিল না নীতুর। ডিম্পল তত দিনে সংসার সামলে দুই সন্তানের মা। আমারও সন্তান, সংসার ছিল। ১০ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গিয়েছিল। আমি জীবনে থিতু হয়ে গিয়েছিলাম।’’
তবে ডিম্পলের সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন ঋষির প্রেমজীবনে যে ক্রমশ সমস্যার কারণ হয়ে উঠছিল তা জানিয়েছিলেন খোদ অভিনেতা। ঋষি জানিয়েছিলেন, ‘ববি’ ছবিটি মুক্তির পর দর্শকমহলে ঋষি এবং ডিম্পলের জুটি নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে যে সত্যিই সম্পর্ক রয়েছে সে খবর ছড়াতে বেশি সময় লাগেনি। সেই সময় এক বিখ্যাত পত্রিকায় খবরটি ছাপাও হয়। সেই খবরটি পড়েই নাকি ঋষির সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানেন তাঁর তৎকালীন প্রেমিকা ইয়াসমিন মেহতা।
ঋষি বলেছিলেন, ‘‘ডিম্পল এবং আমার সম্পর্কে লেখালিখি হলে ডিম্পলের কিছু যেত-আসত না। কারণ ও তখন বিবাহিত ছিল। আমার সঙ্গে সেই সময় সম্পর্ক ছিল ইয়াসমিনের। ওকে খুব ভালবাসতাম আমি। ডিম্পলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক রয়েছে জানতে পেরে ইয়াসমিন আমার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দেয়।’’
বিচ্ছেদের পর ইয়াসমিনের সঙ্গে একটি বার কথা বলার জন্য নাকি নীতুর কাছে বায়না করতেন ঋষি। তিনি জানিয়েছিলেন, ইয়াসমিনের সঙ্গে সদ্য বিচ্ছেদের পর কর্নাটকের চিত্রদুর্গে ‘জ়েহরিলা ইনসান’ ছবির শুটিংয়ে গিয়েছিলেন ঋষি। সেই ছবিতে ঋষির সহ-অভিনেত্রী ছিলেন নীতু। তখনই নাকি নীতুর কাছে বায়না করতেন ঋষি।
ঋষি লিখেছিলেন, ‘‘আমি কিছুতেই ইয়াসমিনকে ভুলতে পারতাম না। বার বার চেষ্টা করতাম ওর সঙ্গে সব ঝামেলা মিটে যাক। আবার নতুন করে সব শুরু করি। কিন্তু ইয়াসমিন তো আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেই চাইত না। শুটিংয়ের পর আমি মদ খেতাম আর নীতুর কাছে কান্নাকাটি করতাম। বায়না করতাম যেন ও আমার হয়ে একটি বার ইয়াসমিনের সঙ্গে কথা বলে। যেন ও ইয়াসমিনকে বোঝায় যে আমি কোনও দোষ করিনি।’’
পরে অবশ্য নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন ঋষি। বিচ্ছেদের পর ইয়াসমিনের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন তিনি। ঋষি বলেছিলেন, ‘‘ইয়াসমিনের সঙ্গে পরে আমি কয়েক বার দেখা করেছিলাম। আমারই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ইয়াসমিনের। কিন্তু আমি কোনও বাড়াবাড়ি করিনি। নীতুও ইয়াসমিনের সঙ্গে সৌজন্য বজায় রেখে মিশত।’’
নীতু এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, শুটিংয়ের জন্য ঋষি প্যারিসে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে নীতু ছিলেন কাশ্মীরে। প্যারিস থেকে কাশ্মীরে টেলিগ্রাম করে নীতুকে প্রেম নিবেদন করেছিলেন ঋষি। টেলিগ্রামে লেখা ছিল, ‘‘আমি তোমায় ভালবাসি। খুব মিস্ করছি তোমায়।’’ কয়েক বছর সম্পর্কে থাকার পর ১৯৮০ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েন দুই তারকা।
ডিম্পল একাই নন। টিনা মুনিম, দিব্যা ভারতী, জুহি চাওলা থেকে শুরু করে বলিপাড়ার একাধিক অভিনেত্রীর সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল ঋষির। সে সব নিয়ে নাকি অবগতও ছিলেন নীতু।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে নীতু বলেছিলেন, ‘‘ঋষি যখনই শুটিং করতে বাইরে যেত, তখনই কোনও না কোনও খবর আমার কানে পৌঁছত। আমি কী ভাবে সবার আগে ওর ব্যাপারে সব কিছু জেনে ফেলতাম তা ভেবে ও অবাক হয়ে যেত। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার প্রচুর চেনাশোনা লোকজন ছিলেন। তাঁরাই সব বলতেন আমায়। প্রথম প্রথম খুব ঝগড়া করতাম ঋষির সঙ্গে। তার পর বুঝলাম, এই সম্পর্কগুলো ক্ষণিকের।’’
নীতু বলেছিলেন, ‘‘ঋষিকে অন্য মহিলার সঙ্গে প্রেমালাপ করতে আমি চোখের সামনে দেখেছি বহু বার। কিন্তু আমি পরে ওর সঙ্গে এই নিয়ে ঝগড়া করা থামিয়ে দিয়েছিলাম। পুরুষেরা তো একটু ফ্লার্ট করবেনই। তাঁদের তো জোর করে কোনও দিন বেঁধে রাখা যায় না। একটু স্বাধীনতা দিতে হয়। আমি জানতাম, ঋষি আমার প্রতি কতটা নির্ভরশীল। সংসারেরও দায়িত্ব রয়েছে ওর উপর। ও কোনও দিনই আমায় ছেড়ে যাবে না। সেই ভরসাটা ছিল। তাই সব গা-সওয়া হয়ে গিয়েছিল আমার।’’
সব ছবি: সংগৃহীত।