বলি অভিনেত্রী মালাইকা অরোরার বাবা অনিল কুলদীপ মেহতা আত্মঘাতী হয়েছেন সম্প্রতি। সেই খবর সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে অভিনেত্রী জানাতেই নেটব্যবহারকারীদের মনে প্রশ্নচিহ্ন ঘোরাফেরা করতে শুরু করে। কারণ, বাবার সঙ্গে মালাইকার বয়সের পার্থক্য মাত্র ১২ বছরের। এ কী করে সম্ভব? কৌতূহল জেগে ওঠে মালাইকার মায়ের পরিচয় নিয়েও। অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত নন তিনি। তবে তিনি কী করেন?
বলিপাড়া সূত্রে খবর, মালাইকার মায়ের নাম জয়েস পলিকার্প। মালয়ালি খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম তাঁর। অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল না জয়েসের। রান্নাবান্না করতেই বরাবর ভালবাসতেন তিনি।
ধীরে ধীরে রান্না করাই পেশা হয়ে ওঠে জয়েসের। অভিনব পদ্ধতিতে রান্না করে সকলকে চমকে দিতে শুরু করেন তিনি।
সমাজমাধ্যমেও রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন জয়েস। দুই অভিনেত্রী মালাইকা অরোরা এবং অমৃতা অরোরার মা হিসাবে তো বটেই, অন্য পরিচয়ও তৈরি হয় জয়েসের।
রান্না করে তার ভিডিয়ো ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করতে শুরু করেন জয়েস। খুব কম সময়ের মধ্যেই রন্ধনশিল্পী হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়ে যান তিনি। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় ৪০ হাজারের বেশি অনুগামী রয়েছে তাঁর।
বুধবার ঘটনার সময় মালাইকার বাবার সঙ্গে মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটে ছিলেন জয়েস। ঘরের ভিতর অনিলের চটি দেখতে পান তিনি। কিন্তু অনিল ছিলেন না। জয়েস ভাবেন, প্রতি দিন সকালে বারান্দায় খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস রয়েছে অনিলের। তাই অনিলের সঙ্গে দেখা করতে ফ্ল্যাটের বারান্দায় গিয়েছিলেন তিনি।
বারান্দায় গিয়ে অনিলের দেখা পাননি জয়েস। বারান্দা থেকে নীচের দিকে ঝুঁকে দেখতেই চমকে যান তিনি। ফ্ল্যাটের নীচে পড়ে রয়েছে অনিলের দেহ। সেই সময় ফ্ল্যাটের নিরাপত্তারক্ষী সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলেন। মালাইকার মা জানিয়েছেন, তেমন কোনও অসুস্থতা ছিল না অনিলের। সামান্য হাঁটুর ব্যথায় ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু কী কারণে তিনি এমন চরম পদক্ষেপ করলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় মুম্বইয়ের বান্দ্রার বাড়ি থেকে ঝাঁপ দেন অনিল। একটি অনুষ্ঠান উপলক্ষে মুম্বই থেকে পুণে গিয়েছিলেন মালাইকা। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুণে থেকে রওনা দেন তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, মালাইকার পৌঁছনোর আগে প্রাক্তন শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে যান মালাইকার প্রাক্তন স্বামী আরবাজ় খান। ফ্ল্যাটের বাইরে তখন দাঁড়িয়ে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স এবং মুম্বই পুলিশের গাড়ি। অনিলকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন সেখানকার চিকিৎসকেরা।
বুধবার অনিলের মারা যাওয়ার খবর জানাতে তাঁর উদ্দেশে সমাজমাধ্যমের পাতায় একটি পোস্ট করেন মালাইকা। অভিনেত্রী লেখেন, ‘‘খুব দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের বাবা অনিল কুলদীপ মেহতা প্রয়াত হয়েছেন। তিনি খুবই ভাল মানুষ ছিলেন। একজন দাদু, স্বামী এবং বন্ধু হিসাবেও তিনি খুব ভাল ছিলেন। ওঁকে হারিয়ে আমাদের পরিবার শোকাচ্ছন্ন। এই কঠিন সময়ে আমাদের ব্যক্তিগত পরিসর অক্ষত রাখার জন্য সংবাদমাধ্যম এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুরোধ করছি। আপনারা যে বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন এবং শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’’ অনিলের সঙ্গে একটি ছবিও পোস্ট করেন মডেল-অভিনেত্রী। সেখানে বাবার জন্মতারিখ উল্লেখ করেন তিনি।
পোস্টে দেখা যায়, অনিলের জন্ম ১৯৬২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ, মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৬২ বছর। অন্য দিকে মালাইকা কয়েক মাস পরেই ৫১ বছরে পা দিতে চলেছেন। পিতা এবং কন্যার মধ্যে বয়সের পার্থক্য মাত্র ১২ বছরের! তা দেখে সন্দেহ জেগে ওঠে অধিকাংশের মনে। এমনকি, তাঁর পদবিও অরোরা নয়।
পরে অবশ্য বলিপাড়া সূত্রে জানা যায়, অনিল আসলে মালাইকা-অমৃতার জন্মদাতা পিতা নন। তিনি মালাইকার সৎবাবা। মালাইকার নিজের বাবার নাম অনিল অরোরা।
জানা গিয়েছে, মালাইকার জন্মদাতা পিতা অনিল ভারতীয় নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। মালাইকার বয়স যখন ১১ বছর, তখনই অনিল অরোরার সঙ্গে অভিনেত্রীর মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে জয়েস বিবাহ করেন অনিল কুলদীপ মেহতাকে। মালাইকা এবং অমৃতা দু’জনেই বাবা বলে ডাকেন অনিল মেহতাকে।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, অনিলের সঙ্গেও নাকি বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় জয়েসের। তবে সংসার ভেঙে গেলেও তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। পরিবারের এক ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, অনিল এবং জয়েস একসঙ্গে মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটে থাকতেন। মালাইকা এবং তাঁর পুত্র আরহান খানের সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল তাঁদের। মাঝেমধ্যেই আরহান দাদুর বাড়িতে গিয়ে সময় কাটাতেন। ঘুরতে আসতেন মালাইকা এবং অমৃতাও।
বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজ়ে শেষকৃত্য করা হয়েছে অনিলের। ঘটনার তদন্তভার বর্তমানে মুম্বই পুলিশের হাতে রয়েছে। বুধবার রাত ৮টা নাগাদ অনিলের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বইয়ের কুপার হাসপাতালে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, অনিলের শরীরে একাধিক চোটই তাঁর মৃত্যুর কারণ। পুলিশি তদন্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত্যুর কিছু ক্ষণ আগে মালাইকা এবং তাঁর বোন অমৃতাকে ফোন করেছিলেন অনিল। ফোনে তিনি দুই কন্যাকে বলেছিলেন, “আমি অসুস্থ এবং ক্লান্ত বোধ করছি।”
অনিলের মৃত্যুর খবর পেয়ে সবার আগে বান্দ্রার ফ্ল্যাটে পৌঁছন মালাইকার প্রাক্তন স্বামী আরবাজ়। তার কিছু ক্ষণ পরেই ছুটে যান অভিনেত্রীর প্রাক্তন প্রেমিক অর্জুন কপূর। বিচ্ছেদের পর মালাইকা এবং অর্জুনকে একসঙ্গে দেখা না গেলেও বিপদের দিনে প্রেমিকার পাশে এসে দাঁড়ান অভিনেতা।
শোকসংবাদ পাওয়ার পর প্রাক্তন শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ, দেওর সকলেই যান মালাইকার বাড়ি। দেখা যায়নি শুধুমাত্র প্রাক্তন ভাসুর সলমন খানকে। বলিপাড়ায় গুঞ্জন, সম্প্রতি অভিনেতা তাঁর নতুন ছবি ‘সিকন্দর’-এর শুটিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে মালাইকার বাবার শেষকৃত্যে যেতে পারেননি।
অন্য দিকে কঠিন সময়ে প্রিয় বান্ধবীর পাশে থাকার জন্য নিজের সমস্ত কাজ বাতিল করে দিয়েছেন বলি অভিনেত্রী করিনা কপূর খান। বৃহস্পতিবার এক বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল করিনার। এ ছাড়াও নিজের সদ্যমুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘বাকিংহাম মার্ডার্স’-এর প্রচারানুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত করিনা। কিন্তু মালাইকা-অমৃতার সঙ্গে থাকবেন বলে সব অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন অভিনেত্রী।
সব ছবি: পিটিআই, সংগৃহীত।