সাউন্ড সিস্টেমের দুনিয়ায় অবিশ্বাস্য বিপ্লব ঘটিয়েছেন তিনি। মিউজিক সিস্টেম বানিয়ে তাক লাগিয়েছেন এই বঙ্গসন্তান। তৈরি করেছেন বিখ্যাত অডিয়ো সরঞ্জামের সংস্থা ‘বোস কর্পোরেশন’। সেই সংস্থার প্রাণপুরুষ হলেন অমরগোপাল বসু।
ছবি: সংগৃহীত।
অমরের উত্থান কাহিনি ইতিহাসের পাতায় ‘অমর’ হয়েই থেকে যাবে। অমরের বাবা ননীগোপাল বসু ছিলেন ভারতীয়। স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন তিনি। ব্রিটিশদের অত্যাচারে দেশ ছেড়েছিলেন। আশ্রয় নিয়েছিলেন আমেরিকায়।
ছবি: সংগৃহীত।
তার পর থেকেই আমেরিকায় নতুন জীবন শুরু হয় ননীগোপালের। অমরের জন্মও আমেরিকায়। ১৯২৯ সালের ২ নভেম্বর জন্ম তাঁর।
ছবি: সংগৃহীত।
আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় জন্ম অমরের। সেখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা। মা ছিলেন আমেরিকান। পেশায় স্কুলের শিক্ষিকা।
ছবি: সংগৃহীত।
ছোট থেকেই অডিয়ো সরঞ্জাম নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাতখরচ জোগাতে ফিলাডেলফিয়ার একটি রেডিয়োর দোকানে কাজ করেন। পরে বন্ধুদের নিয়ে শুরু করেন দোকান।
ছবি: সংগৃহীত।
সেই সময় মডেল ট্রেন, রেডিয়ো সারিয়ে রোজগার করতেন অমর। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৩। তবে এ সবের সঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
ছবি: সংগৃহীত।
অ্যাবিংটন সিনিয়র হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। পরে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন। পরে সেখান থেকে পিএইচডি করেন অমর।
ছবি: সংগৃহীত।
পঞ্চাশের দশকের কথা। সেই সময় স্নাতক পাশ করার পর ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেছেন অমর। ১৯৫৬ সালে একটি হাই-এন্ড স্টিরিও স্পিকার সিস্টেম কিনেছিলেন তিনি।
ছবি: সংগৃহীত।
ওই মিউজিক সিস্টেমে গান শুনে মন ভরেনি অমরের। মনে মনে ভাবলেন, কোনও অডিটোরিয়ামে গান শুনতে গেলে তো এমনটা মনে হয় না। কী কারণ তা হলে?
ছবি: সংগৃহীত।
এই কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়েই নতুন দিগন্ত খুলে যায় অমরের কাছে। তিনি দেখেন, অডিটোরিয়ামে শিল্পীর গলার ৮০ শতাংশ সরাসরি শ্রোতার কানে আসে না। দেওয়ালে, ছাদে ধাক্কা খেয়ে আসে। পদার্থবিদ্যার এই সূত্রকে কাজে লাগিয়েই নিজস্ব মিউজিক সিস্টেম তৈরির কাজে লেগে পড়েন অমর।
ছবি: সংগৃহীত।
কিশোরবেলায় রেডিয়ো সারানোর অভিজ্ঞতা ছিল অমরের। পরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুবাদে আরও কুশলী হয়ে উঠলেন তিনি। তার পর প্রেক্ষাগৃহে শব্দের প্রতিফলনের তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে বানালেন এক সাউন্ড সিস্টেমের নকশা।
ছবি: সংগৃহীত।
ওই সাউন্ড সিস্টেমের নকশাটি এমন ভাবে বানালেন, যাতে শ্রোতাকে প্রতিফলিত শব্দ শোনানো যায়। এই নিয়ে নিরন্তর পরীক্ষানিরীক্ষা করলেন। তার পরই জন্ম হল ‘বোস কর্পোরেশনে’র। সেটা ১৯৬৪ সাল।
ছবি: সংগৃহীত।
সংস্থার তৈরি প্রথম সাউন্ড সিস্টেম তেমন সাফল্য পায়নি। ১৯৬৮ সালে বাজারে আসে ‘বোস ৯০১ ডিরেক্ট/রিফ্লেক্টিং’ স্পিকার সিস্টেম। ওই সাউন্ড সিস্টেমটি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। তার পর থেকেই বাজারে আসতে থাকে সংস্থার তৈরি নানা ধরনের সাউন্ড সিস্টেম। জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যায় ওই সংস্থা।
ছবি: সংগৃহীত।
১৯৫৬ সালে এমআইটি-র অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন অমর। ৪৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। পাশাপাশি, সংস্থার কাজও দক্ষ হাতে সামলান। বলা যায়, অমরের জীবনের সঙ্গেই জড়িয়েছিল এমআইটি। ২০১১ সালে সংস্থার শেয়ারের বেশির ভাগটাই দান করেছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানকে।
ছবি: সংগৃহীত।
অমরের দুই সন্তান বানু এবং মায়া। প্রথম স্ত্রী প্রেমার সঙ্গে অবশ্য বিয়ে টেকেনি। তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। ২০১৩ সালের ১২ জুলাই ম্যাসাচুসেটসে মৃত্যু হয় অমরের। বয়স হয়েছিল ৮৩। মৃত্যুর পর এখনও সাউন্ড সিস্টেমের দুনিয়ায় তাঁর সংস্থার উজ্জ্বল উপস্থিতি। বহু মানুষের কাছেই তিনি থেকে গিয়েছেন ‘ধ্বনির জাদুকর’ হিসাবে।
ছবি: সংগৃহীত।