ভাবনাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে অ্যামাজ়নের কৃত্রিম মেধা বা ডিজিটাল সহকারী অ্যালেক্সাকে। এত দিন তাকে কথা বলে নিয়ন্ত্রণ করতে হত। অদূর ভবিষ্যতে নাকি তা স্রেফ ভাবনা দিয়েই চালানো যাবে!
বিশেষ ‘ডিজেনারেটিভ’ রোগে আক্রান্ত এক রোগী সম্প্রতি তাঁর চিন্তাভাবনা দিয়েই আলেক্সাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে দাবি সিনেক্রোন নামে এক সংস্থার। তথ্যপ্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা ওই সংস্থা সোমবার ঘোষণাটি করেছে।
অ্যালেক্সা এমন এক ডিজিটাল সহকারী যা স্মার্টফোন, ক্যামেরা, আলো, পাখা, শীতাতপ যন্ত্রের মতো যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই সংস্থাটির দাবি, মানসিক শক্তি দিয়ে নিজের পছন্দ মতো সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ় চালাতে এবং বিভিন্ন অত্যাধুনিক গ্যাজেট নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছেন মার্ক নামে ওই রোগী।
নিউ ইয়র্কের ওই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটি জানিয়েছে, ৬৪ বছর বয়সি মার্কের মস্তিষ্কের রক্তনালিতে একটি বিশেষ চিপ বসানো হয়েছে। ওই চিপের সাহায্যে মন দিয়েই নাকি বিভিন্ন অত্যাধুনিক যন্ত্র এবং ট্যাবলেটের আইকন ‘ট্যাপ’ করতে পারছেন তিনি।
‘অ্যামিয়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস (এএলএস)’ রোগ থাকা মার্ক মস্তিষ্ক দিয়ে আলেক্সাকে নির্দেশ দিতে, ভিডিয়ো কল করতে, গান চালাতে, স্মার্ট ডিভাইস দিয়ে বাড়ির আলো-পাখা নিয়ন্ত্রণ করতে, এমনকি অনলাইনে কেনাকাটা অবধি করতে পারছেন বলেও সংস্থার দাবি।
পাশাপাশি দাবি করা হয়েছে, নিজের ভাবনা দিয়ে বই পড়তেও সক্ষম হচ্ছেন এএলএস আক্রান্ত বৃদ্ধ।
এএলএস হল এমন একটি ডিজেনারেটিভ স্নায়ুরোগ, যা একজন মানুষের পেশি দুর্বল করে দেয়। ধীরে ধীরে পক্ষাঘাতের দিকে ঠেলে দেয় একজন মানুষকে।
এই প্রসঙ্গে মার্ক নাকি বলেছেন, ‘‘আমি যে কাজগুলি করতে পারছিলাম না, তার অনেক কাজ আবার করতে পারছি। স্বাধীনতা ফিরে পাচ্ছি, যা আমি হারাচ্ছিলাম।’’
ওই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সিইও টম অ্যাক্সলের দাবি, ‘‘অনেক স্মার্ট সিস্টেম আছে, যা মানুষের কন্ঠস্বরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের যন্ত্রের সাহায্যে সরাসরি মস্তিষ্ক থেকে সঙ্কেত পাঠাচ্ছি এবং নিয়ন্ত্রণ করছি।’’
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কের এই সংস্থা ছাড়াও এই একই বিষয় নিয়ে কাজ করে চলেছে আমেরিকার ধনকুবের ইলন মাস্কের সংস্থা নিউরালিঙ্ক।
জানুয়ারিতে পথ দুর্ঘটনার পরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক ব্যক্তির মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করে চিপ লাগিয়েছিল মাস্কের সংস্থা। সেই অস্ত্রোপচার সফল বলেও দাবি করা হয়।
মাস্কের সংস্থা ভাবনায় কম্পিউটারের মাউস চালানোর কথাও ঘোষণা করেছিল। নিউরালিঙ্ক সংস্থা খুলে অনেক দিন ধরেই এ বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন মাস্ক।
গবেষণার পর্বে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়েছে মানবশরীরের উপর। এ ব্যাপারে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে পাওয়া গেলেও পরীক্ষা চালানোর অনুমতি মিলছিল না। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সেই অনুমতি আসে নিউরালিঙ্কের হাতে। তার পরেই কাজে নামে মাস্কের সংস্থা।
সাধারণত মস্তিষ্ক, হাত আর মাউস— এই তিনের মেলবন্ধনে কম্পিউটার কাজ করে। কী খুঁজবে বা কী চায়, তা ভাবে মস্তিষ্ক। হাতকে সেই অনুযায়ী নির্দেশ দেয়। হাত নির্দেশানুসারে মাউসকে নাড়াচাড়া করে সেইখানে নিয়ে যায়, যেখানে গেলে কাঙ্ক্ষিত তথ্য মিলবে। মাউসে আলতো ক্লিক খুলে ফেলে বন্ধ দরজা।
এই কাজটিই নতুন আবিষ্কারে সম্পন্ন হবে এক নিমেষে। ইলনের দাবি, নিউরালিঙ্ক প্রযুক্তির সাহায্যে শুধু ভাবনা দিয়েই খুলে ফেলা যাবে কম্পিউটারের ওই কাঙ্ক্ষিত দরজার চাবি।
কিন্তু এই নিউরালিঙ্ক প্রযুক্তি আসলে কী? এটি আসলে একটি চিপ, যা মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করলে সেটি মানুষের ভাবনা এবং ডিজিটাল দুনিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে। মস্তিষ্ক যেমন সঙ্কেত পাঠিয়ে আমাদের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে, ঠিক তেমনই এই চিপ মস্তিষ্কের সঙ্কেত ডিজিটাল ক্ষেত্রে পাঠাতে সাহায্য করবে।
কিন্তু তাতে এমন কী বেশি লাভ হবে! কেনই বা মাস্কের মতো ব্যবসায়ীরা এই বিষয় নিয়ে কাজ করতে চাইছেন? মাস্কের দাবি, তিনি বিশ্বাস করেন মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি কম্পিউটারকে যুক্ত করতে পারলে মানুষের মন আরও বেশি বিকশিত হবে। একই সঙ্গে মানুষ বহু সীমাবদ্ধতাও অতিক্রম করতে পারবে।
মাস্কের কথা সত্যি হলে এআইয়ের সঙ্গে মানুষকে টক্কর দিতে সাহায্য করবে এই নতুন নিউরালিঙ্ক প্রযুক্তি। মাস্কের অভিমত, এর সাহায্যে মানুষ নিজের মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে পারবে।
সব ছবি: সংগৃহীত।