আঠারোর কোঠায় পৌঁছনোর আগে থেকে প্রায় প্রতি বছর নিয়ম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেছেন। তবে বয়স ষাটের পথে এগিয়ে চললেও সেই প্রবেশিকার গণ্ডি পেরোতে পারেননি চিনের লিয়াং শি।
ছবি: সংগৃহীত।
এক-দু’বার নয়, চিনের ‘সবচেয়ে কঠিন’ প্রবেশিকা পরীক্ষায় এখনও পর্যন্ত ২৭ বার বসেছেন ৫৬ বছরের লিয়াং। তবে তিনি আর পাঁচটা সাধারণ কলেজছাত্রের মতো নন। তাঁর অন্য পরিচয়ও রয়েছে।
ছবি: সংগৃহীত।
নিজের চেষ্টায় নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছেন লি। তবে বছরের পর বছর চেষ্টা করেও প্রবেশিকার গণ্ডি পেরোতে পারেননি। এ বার কি সুখবর পাবেন তিনি?
ছবি: সংগৃহীত।
প্রবেশিকার গণ্ডি পেরোতে প্রতি বছর প্রায় ১৩ কোটি পড়ুয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন লিয়াং। তবে গত ২৬ বার তাতে অসফল হয়েছেন। চলতি মাসের গোড়ায় ২৭তম বার এই পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি।
প্রতীকী ছবি।
চিনে প্রথাগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষায় ইচ্ছুকদের জন্য প্রতি বছর ‘ন্যাশনাল কলেজ এন্ট্রান্স এগ্জ়ামিনেশন’ (এনসিইই) হয়। সাধারণের কাছে তা পরিচিত ‘গাওকাও’ নামে। দেশের সমস্ত প্রবেশিকা পরীক্ষার মধ্যে এটিই সবচেয়ে কঠিন বলে মনে করেন অনেক পরীক্ষার্থীই।
ছবি: সংগৃহীত।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূলত চিনের মূল ভূখণ্ডের পরীক্ষার্থীদের জন্য এই প্রবেশিকার বন্দোবস্ত করা হয়। দু’তিন দিন ধরে ৯ ঘণ্টার বেশি সময় চলে পরীক্ষা। সাধারণত সিনিয়র হাই স্কুলের তৃতীয় বা শেষ বর্ষের পড়ুয়ারাই এতে ভাগ্যপরীক্ষা করান। তবে উচ্চশিক্ষায় উৎসাহী যে কেউ পরীক্ষা দিতে পারেন।
প্রতীকী ছবি।
প্রবেশিকার নিয়ম মেনে পরীক্ষার্থীদের চিনা ভাষা এবং অঙ্কের পরীক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া, এই প্রবেশিকায় বিদেশি ভাষার পরীক্ষাও চলে। ইংরেজি, ফরাসি, জাপানি, রাশিয়ান, জার্মান অথবা স্প্যানিশ ভাষা থেকে যে কোনও একটি পত্র বেছে নিতে পারেন পরীক্ষার্থীরা।
প্রতীকী ছবি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা বিভাগে পড়াশোনায় আগ্রহী হলে পড়ুয়াদের ইতিহাস, রাজনীতি এবং ভূগোলের পত্রের পরীক্ষা দিতে হয়। অন্য দিকে, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে তাঁদের পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানের পরীক্ষা দিতে হবে।
প্রতীকী ছবি।
চিনের প্রদেশগুলির নিয়মানুযায়ী, প্রবেশিকার সর্বোচ্চ নম্বর প্রায় প্রতি বছর হেরফের করতে পারে। তবে এক জন পরীক্ষার্থী বছরে সর্বোচ্চ ৭৫০ নম্বর পেতে পারেন।
প্রতীকী ছবি।
প্রতি বছর ৭ থেকে ৮ জুন এই প্রবেশিকা পরীক্ষা হত। তবে কয়েকটি প্রদেশে আবার এক দিন অতিরিক্ত রাখা হয়, যে দিন পরীক্ষা দেওয়া যেতে পারে। যদিও অতিমারির সময় প্রবেশিকার দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
প্রতীকী ছবি।
এ হেন ‘কড়া’ পরীক্ষায় কেন বছরের বছর ধরে নিজের ভাগ্যপরীক্ষায় বসেন লিয়াং? বিত্তশালী হওয়ায় তাঁর তো অর্থের অভাব নেই!
ছবি: সংগৃহীত।
অর্থের প্রাচুর্য সত্ত্বেও লিয়াংয়ের মনে খেদ রয়ে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। তার জন্য সেই ১৬ বছর বয়স থেকে গাওকাওয়ে বসছেন। প্রথম বার ১৯৮৩ সালে এই পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার পর থেকে বার বার পরীক্ষাকেন্দ্রের গিয়ে কড়া প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন।
ছবি: সংগৃহীত।
১৯৯২ সালে নিজের চেষ্টায় ইতি টানতে বাধ্য হয়েছিলেন লিয়াং। সে বার চিন সরকার নিয়ম করেছিল, ২৫ বছরের কমবয়সি এবং অবিবাহিতরাই এই পরীক্ষায় বসতে পারবেন।
ছবি: সংগৃহীত।
তবে ২০০১ সালে আবার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় লিয়াংয়ের। ওই বছর পরীক্ষার বসার যোগ্যতা নিয়ে বয়সের বাধা তুলে দেয় চিন। বিবাহিতেরাও পরীক্ষায় বসার সুযোগ পান। ফলে লিয়াং আবার আগের মতো প্রবেশিকার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেন।
ছবি: সংগৃহীত।
লিয়াংয়ের শিকে ছেঁড়ার প্রচেষ্টা ঘিরে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে কম ঠাট্টাতামাশা হয়নি। তবে নিজের জেদে অটল লিয়াং।
প্রতীকী ছবি।
এ পরীক্ষায় কেন বার বার বসেন তিনি? সংবাদ সংস্থা এএফপির এ প্রশ্নের উত্তরে লিয়াং বলেন, ‘‘কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারিনি। এটা ভাবলেই অস্বস্তি হয়। আমি সত্যিই কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই। সমাজে পরিচিতি পেতে চাই বিদ্বজ্জন হিসাবে।’’
ছবি: সংগৃহীত।
অনেকে আবার লিয়াংয়ের এই অধ্যবসায়ের নেপথ্যে শিরোনাম কাড়ার প্রচেষ্টা রয়েছে বলে দাবি করেছেন। তবে লিয়াং বলেন, ‘‘সেই প্রচেষ্টা থাকলে কোনও সুস্থ মানুষ কি দশকের পর দশক ধরে গাওকাও দিয়ে যেতে পারেন?’’
ছবি: সংগৃহীত।
চলতি মাসেও গাওকাওয়ের প্রস্তুতির জন্য দিনে ১২ ঘণ্টা ধরে পড়াশোনা করেছেন লিয়াং। এ বার তাঁর চেষ্টার ফল পাবেন কি?
ছবি: সংগৃহীত।