Cyanide Murder in Kerala

ছয় খুন, তালিকায় স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়িও! সম্পত্তি হাতাতে গৃহবধূ ব্যবহার করেছিলেন সায়ানাইড

১২ বছরে মোট ছ’টি খুন। প্রথম খুনের ছ’বছর পর দ্বিতীয় খুন। তার পর তৃতীয় খুন তার তিন বছর পর। সেই খুনের তিন বছর পর আরও একটি খুন। তার পর সেই খুনের দু’বছর পর আবারও একটি খুন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:৩৬
০১ ১৩
৬-৩-৩-২। না, এটা কোনও খেলার স্কোরবোর্ড নয়। এটি ‘সিরিয়াল’ খুনের বছরের অন্তর। ১২ বছরে মোট ছ’টি খুন। প্রথম খুনের ছ’বছর পর দ্বিতীয় খুন। তার পর তৃতীয় খুন তার তিন বছর পর। সেই খুনের তিন বছর পর আরও একটি খুন। তার পর সেই খুনের দু’বছর পর আবারও একটি খুন। ঘটনাচক্রে, এই ১২ বছরে যে ছ’জন খুন হয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই একই পরিবারের।

৬-৩-৩-২। না, এটা কোনও খেলার স্কোরবোর্ড নয়। এটি ‘সিরিয়াল’ খুনের বছরের অন্তর। ১২ বছরে মোট ছ’টি খুন। প্রথম খুনের ছ’বছর পর দ্বিতীয় খুন। তার পর তৃতীয় খুন তার তিন বছর পর। সেই খুনের তিন বছর পর আরও একটি খুন। তার পর সেই খুনের দু’বছর পর আবারও একটি খুন। ঘটনাচক্রে, এই ১২ বছরে যে ছ’জন খুন হয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই একই পরিবারের।

০২ ১৩
কেরলের কোঝিকোড়ের এই খুনের ঘটনা গোটা দেশে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। কোঝিকোড়ের কুড়াথাইয়ে শ্বশুর, শাশুড়ি এবং স্বামীকে নিয়ে থাকতেন জলি জোসেফ। অভিযোগ, সায়ানাইড দিয়ে নিজের পরিবারের ছয় সদস্যকে খুন করেন জলি। সেই খুনের তালিকায় ছিল দু’বছরের এক শিশুকন্যাও।

কেরলের কোঝিকোড়ের এই খুনের ঘটনা গোটা দেশে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। কোঝিকোড়ের কুড়াথাইয়ে শ্বশুর, শাশুড়ি এবং স্বামীকে নিয়ে থাকতেন জলি জোসেফ। অভিযোগ, সায়ানাইড দিয়ে নিজের পরিবারের ছয় সদস্যকে খুন করেন জলি। সেই খুনের তালিকায় ছিল দু’বছরের এক শিশুকন্যাও।

০৩ ১৩
পুলিশ সূত্রে খবর, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও, ‘রহস্যজনক ভাবে’ এনআইটি কোঝিকোড়ে অধ্যাপনার সুযোগ পান জলি। সেখানে দীর্ঘ দিন অধ্যাপনা করেছেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও, ‘রহস্যজনক ভাবে’ এনআইটি কোঝিকোড়ে অধ্যাপনার সুযোগ পান জলি। সেখানে দীর্ঘ দিন অধ্যাপনা করেছেন।

Advertisement
০৪ ১৩
২০০২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সুপরিকল্পিত ভাবে ঠান্ডা মাথায় একে একে পরিবারের ছয় সদস্যকে খুনের অভিযোগ রয়েছে জলির বিরুদ্ধে। স্বামী, শ্বশুরের বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হতেই নাকি তাঁর এই পরিকল্পনা। সম্পত্তি হাতানোর সেই পরিকল্পনা যাঁরা জানতে পেরেছিলেন, সেই সব ‘পথের কাঁটা’ এক এক করে সরিয়ে দেন। তার জন্য সময় নিয়েছিলেন ১২ বছর।

২০০২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সুপরিকল্পিত ভাবে ঠান্ডা মাথায় একে একে পরিবারের ছয় সদস্যকে খুনের অভিযোগ রয়েছে জলির বিরুদ্ধে। স্বামী, শ্বশুরের বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হতেই নাকি তাঁর এই পরিকল্পনা। সম্পত্তি হাতানোর সেই পরিকল্পনা যাঁরা জানতে পেরেছিলেন, সেই সব ‘পথের কাঁটা’ এক এক করে সরিয়ে দেন। তার জন্য সময় নিয়েছিলেন ১২ বছর।

০৫ ১৩
জোসেফ পরিবারে প্রথম খুনটি হয়েছিল ২০০২ সালে। জলির শাশুড়ি আনাম্মা টমাস। তিনি ছিলেন এক জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। কিন্তু এমন ভাবে খুন করা হয়েছিল যে, মৃত্যুটি স্বাভাবিক হিসাবেই মান্যতা দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তরফে।

জোসেফ পরিবারে প্রথম খুনটি হয়েছিল ২০০২ সালে। জলির শাশুড়ি আনাম্মা টমাস। তিনি ছিলেন এক জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। কিন্তু এমন ভাবে খুন করা হয়েছিল যে, মৃত্যুটি স্বাভাবিক হিসাবেই মান্যতা দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তরফে।

Advertisement
০৬ ১৩
আনাম্মা টমাসের মৃত্যুর ছ’বছরের মধ্যেই ২০০৮ সালে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন জলির শ্বশুর। হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর। এ ক্ষেত্রেও কিন্তু স্বাভাবিক মৃত্যু হিসাবে মান্যতা দেওয়া হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

আনাম্মা টমাসের মৃত্যুর ছ’বছরের মধ্যেই ২০০৮ সালে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন জলির শ্বশুর। হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর। এ ক্ষেত্রেও কিন্তু স্বাভাবিক মৃত্যু হিসাবে মান্যতা দেওয়া হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

০৭ ১৩
জলির শাশুড়ি এবং শ্বশুরের মৃত্যুর তিন বছর পর ২০১১ সালে মৃত্যু হয় জলির স্বামী রয় টমাসের। তার ঠিক আবার তিন বছরের মধ্যেই ২০১৪ সালে ম্যাথু এম নামে জলির এক আত্মীয় আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু নিয়েও কিন্তু সন্দেহ প্রকাশ করেননি জোসেফ পরিবারের বাকি সদস্যরা।

জলির শাশুড়ি এবং শ্বশুরের মৃত্যুর তিন বছর পর ২০১১ সালে মৃত্যু হয় জলির স্বামী রয় টমাসের। তার ঠিক আবার তিন বছরের মধ্যেই ২০১৪ সালে ম্যাথু এম নামে জলির এক আত্মীয় আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু নিয়েও কিন্তু সন্দেহ প্রকাশ করেননি জোসেফ পরিবারের বাকি সদস্যরা।

Advertisement
০৮ ১৩
সাল ২০১৬। আবারও মৃত্যু। এ বার জোসেফ পরিবারের আরও এক সদস্য সিলি এবং তাঁর দু’বছরের কন্যাসন্তানের মৃত্যু হয়। পরিবারের একের পর এক সদস্যের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে প্রথম দিকে কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেননি। জলিকেও কারও সন্দেহ হয়নি। কিন্তু সিলি এবং তাঁর কন্যার মৃত্যু তিন বছর পর জলির দেওর রোজো টমাসের কিন্তু প্রথম সন্দেহ হয়। তিনি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হতেই চমকে দেওয়া তথ্য উঠে আসে।

সাল ২০১৬। আবারও মৃত্যু। এ বার জোসেফ পরিবারের আরও এক সদস্য সিলি এবং তাঁর দু’বছরের কন্যাসন্তানের মৃত্যু হয়। পরিবারের একের পর এক সদস্যের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে প্রথম দিকে কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেননি। জলিকেও কারও সন্দেহ হয়নি। কিন্তু সিলি এবং তাঁর কন্যার মৃত্যু তিন বছর পর জলির দেওর রোজো টমাসের কিন্তু প্রথম সন্দেহ হয়। তিনি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হতেই চমকে দেওয়া তথ্য উঠে আসে।

০৯ ১৩
রোজো টমাসের অভিযোগের ভিত্তিতে জোসেফ পরিবারের এক সদস্যের দেহ তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়। আর সেই বিষ হল সায়ানাইড।

রোজো টমাসের অভিযোগের ভিত্তিতে জোসেফ পরিবারের এক সদস্যের দেহ তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়। আর সেই বিষ হল সায়ানাইড।

১০ ১৩
কিন্তু মৃতের শরীরে সায়ানাইড কোথা থেকে এল? এই প্রশ্ন বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল তদন্তকারীদের। জোসেফ পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়। সেই সময় তদন্তকারীদের সন্দেহের তির ছিল জলির দিকে। তাঁকে নজরে রাখা শুরু করে পুলিশ। তাঁর গতিবিধি সন্দেহজনক ঠেকায়, জলিকে আলাদা করে জেরা করতে শুরু করে পুলিশ। সেই জেরার মুখে আসল সত্য বেরিয়ে আসে।

কিন্তু মৃতের শরীরে সায়ানাইড কোথা থেকে এল? এই প্রশ্ন বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল তদন্তকারীদের। জোসেফ পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়। সেই সময় তদন্তকারীদের সন্দেহের তির ছিল জলির দিকে। তাঁকে নজরে রাখা শুরু করে পুলিশ। তাঁর গতিবিধি সন্দেহজনক ঠেকায়, জলিকে আলাদা করে জেরা করতে শুরু করে পুলিশ। সেই জেরার মুখে আসল সত্য বেরিয়ে আসে।

১১ ১৩
২০১৯ সালে গ্রেফতার করা হয় জলিকে। পুলিশ জানিয়েছে, জলিকে জেরা করে জানা যায়, পরিবারের যে ক’জনের মৃত্যু হয়েছিল সেগুলি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তাঁদের খুন করা হয়েছিল। নানা রকম ভাবে প্রভাব খাটিয়ে পাঁচটি খুনের ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত আটকে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে জলির বিরুদ্ধে। শুধু রয় টমাসের ময়নাতদন্ত হয়। আর সেই ময়নাতদন্তই পরিবারের বাকি পাঁচ জন সদস্যের মৃত্যুরহস্যের উন্মোচন করেছিল।

২০১৯ সালে গ্রেফতার করা হয় জলিকে। পুলিশ জানিয়েছে, জলিকে জেরা করে জানা যায়, পরিবারের যে ক’জনের মৃত্যু হয়েছিল সেগুলি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তাঁদের খুন করা হয়েছিল। নানা রকম ভাবে প্রভাব খাটিয়ে পাঁচটি খুনের ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত আটকে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে জলির বিরুদ্ধে। শুধু রয় টমাসের ময়নাতদন্ত হয়। আর সেই ময়নাতদন্তই পরিবারের বাকি পাঁচ জন সদস্যের মৃত্যুরহস্যের উন্মোচন করেছিল।

১২ ১৩
পুলিশ জানিয়েছে, জলিকে জেরা করে জানা যায়, কী ভাবে খুনকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মনে হবে, তার জন্য বিস্তর পড়াশোনা করেছিলেন। প্রতি দিন খবরের কাগজে খুন, আত্মহত্যা-সহ নানা রকম মৃত্যুর ঘটনাগুলি পড়তেন। সেগুলি থেকে নানা রকম তথ্য সংগ্রহ করতেন। অর্থাৎ এই খুনের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে পরিকল্পনা করেছিলেন জলি। এমনটাই জানিয়েছেন তদন্তকারী এক আধিকারিক।

পুলিশ জানিয়েছে, জলিকে জেরা করে জানা যায়, কী ভাবে খুনকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মনে হবে, তার জন্য বিস্তর পড়াশোনা করেছিলেন। প্রতি দিন খবরের কাগজে খুন, আত্মহত্যা-সহ নানা রকম মৃত্যুর ঘটনাগুলি পড়তেন। সেগুলি থেকে নানা রকম তথ্য সংগ্রহ করতেন। অর্থাৎ এই খুনের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে পরিকল্পনা করেছিলেন জলি। এমনটাই জানিয়েছেন তদন্তকারী এক আধিকারিক।

১৩ ১৩
জলিকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, সায়ানাইড দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা খবরের কাগজ ঘেঁটেই করেছিলেন। তার পরই সেই পরিকল্পনার কথা তাঁর বন্ধু এম ম্যাথুকে জানিয়েছিলেন। প্রাজু কুমার নামে এক স্বর্ণকার সেই সায়ানাইড জোগাড় করে দিয়েছিলেন ম্যাথুকে। তিনি সেই বিষ সরবরাহ করেছিলেন জলিকে। জলির এই দুই সহযোগীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জলিকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, সায়ানাইড দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা খবরের কাগজ ঘেঁটেই করেছিলেন। তার পরই সেই পরিকল্পনার কথা তাঁর বন্ধু এম ম্যাথুকে জানিয়েছিলেন। প্রাজু কুমার নামে এক স্বর্ণকার সেই সায়ানাইড জোগাড় করে দিয়েছিলেন ম্যাথুকে। তিনি সেই বিষ সরবরাহ করেছিলেন জলিকে। জলির এই দুই সহযোগীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি