যে দিকে চোখ যায়, শুধুই ধ্বংসের ছবি। ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়েছে বহু ঘরবাড়ি। বহু মানুষ ঘরছাড়়া। চারদিকে কান্না, আর্তনাদ। বিধ্বংসী হারিকেন হেলেনের হানায় এমনই অবস্থা ফ্লরিডার উপসাগরীয় উপকূলের ছোট্ট শহর স্টেইনহ্যাচির।
গত বৃহস্পতিবার প্রায় ২২৫ কিমি বেগে স্টেইনহ্যাচির উপর আছড়ে পড়ে হেলেন। ১০ ফুটের ঘূর্ণি তছনছ করে দেয় সারা শহর।
তবে হারিকেনের আগাম সতর্কতায় শহরের ৫০০ জন বাসিন্দাকে আগেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিরাপদ স্থানে। হেলেনের রুদ্ররূপ তাঁদের সহ্য করতে হয়নি। তবে তাঁরা অভিঘাত টের পেয়েছেন ফিরে এসে।
দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পর স্টেইনহ্যাচিতে ফিরে এসে স্থানীয় বাসিন্দারা দেখেন, ঝড়ের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে প্রিয় শহর। যেন মানচিত্র থেকে তাঁদের শহরকে মুছে ফেলা হয়েছে।
হেলেনের দাপটে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে স্টেইনহ্যাচির বাসিন্দা ডোনা ল্যান্ডনের বাড়ি। সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্টকে তিনি বলেন, “এটা হৃদয়বিদারক। আমরা মানচিত্র থেকে মুছে গিয়েছি। কিছু বাকি নেই। আমার বিমা আছে। সেই টাকাতেই আবার নতুন করে সব শুরু করতে হবে।”
হেলেনের প্রভাবে স্টেইনহ্যাচির আশপাশের এলাকাগুলিরও ক্ষতি হয়েছে। তবে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লরিডার রাজধানী টালাহাসি থেকে প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এই শহরই।
স্টেইনহ্যাচি শহরে এখনও কিছু ভবন অবশিষ্ট রয়েছে। তবে সেগুলিরও অবস্থা করুণ। ইতিমধ্যেই সেই বাড়িগুলি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সারিয়ে তুলতে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয়েরা।
এই প্রসঙ্গে ল্যান্ডন জানিয়েছেন, “আমি মনে করি না শহরে এমন কেউ আছেন যিনি হারিকেনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হননি। আমরা সবাই পাশাপাশি থাকি। সবাই সবাইকে চিনি। তাই সকলেই সকলের সাহায্যে হাত বাড়িয়েছি।’’
শহরের প্রিয় জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম স্টেইনহ্যাচি নদীর ধারে অবস্থিত রয়েজ় রেস্তরাঁ। হারিকেনের দাপটে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে সেটি। হারিকেন ইডালিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর ন’মাস আগেই রেস্তরাঁটি আবার চালু করা হয়েছিল। তবে হেলেনের হানায় আবার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সেটি।
অপ্রতিরোধ্য ক্ষতি সত্ত্বেও রেস্তোরাঁর মালিক লিন্ডা উইকার রেস্তরাঁটি পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমকে লিন্ডা বলেছেন, ‘‘আমি মনে করি আমাদের এটা ঠিক করতেই হবে। বিমার মাধ্যমে কিছু ক্ষতিপূরণ পেলেও তা যথেষ্ট নয়। তবে ৩০ জন কর্মী আমার রেস্তরাঁর উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করেন। তাঁদের তো দেখতে হবে।’’
হেলেনের তাণ্ডবে স্টেইনহ্যাচির প্রায় কোনও বৈদ্যুতিক খুঁটিই আস্ত নেই। শুক্রবার থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা মেরামতের হাতে কাজ লাগিয়েছেন। শহরের পাওয়ার গ্রিড মেরামত করার কাজ চলছে। তবে বিদ্যুৎ পুনঃস্থাপনে যথেষ্ট সময় লাগবে বলে মনে করছে স্থানীয় প্রশাসন।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী রাস রোডস এ প্রসঙ্গে বলেন, “সব কিছু ঠিক করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে। আমাদের শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।”
উল্লেখ্য, স্টেইনহ্যাচি ছাড়াও ফ্লরিডার অনেকগুলি উপকূলীয় শহরে হারিকেন হেলেনের বিধ্বংসী রূপের মুখে পড়েছে। এটি একটি ক্যাটাগরি-৪ ঝড়। হেলেনের কারণে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হেলেনের প্রভাব উপকূলীয় শহর পেরিরও প্রায় সাত হাজার বাসিন্দার জীবনে পড়েছে। সেই শহরে গাছ উপড়ে অনেকগুলি রাস্তা অবরুদ্ধ, অনেক বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গিয়েছে এবং অনেকগুলি বা়ড়ির ছাদ ভেঙে পড়েছে। সেই শহরেও বর্তমানে বিদ্যুৎ এবং জল সরবরাহ বন্ধ। তবে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে।
সারা জীবন ফ্লরিডায় কাটিয়ে জীবনের শেষ কয়েকটা বছর পেরিতে এসে বাস করছেন ন্যান্সি বেলেভিলে। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “আমি সারা জীবন ফ্লরিডায় কাটিয়েছি। আমার সারা জীবনে এত খারাপ কিছু দেখিনি। তবে আমি এখনও বেঁচে আছি এবং আমার প্রিয়জনেরাও বেঁচে আছে। আমাদের রক্ষা করার জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ।”
সব ছবি: রয়টার্স।