ভারতে গরিব নাগরিকের সংখ্যা কমে গিয়েছে, পরিসংখ্যান প্রকাশ করে সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছে নীতি আয়োগ। তাদের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গত ১৭ বছরে দেশে দারিদ্র কমেছে অনেকটাই।
দারিদ্র কতটা কমেছে, তা-ও জানিয়েছে নীতি আয়োগের রিপোর্ট। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৫-০৬ সালে দেশে বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচক ছিল ২৯.১৭ শতাংশ।
ওই সূচক অনেক কমেছে বর্তমানে। ২০২২-’২৩ সালে ভারতের বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচক পৌঁছেছে ১১.২৮ শতাংশে। যা ২০০৬ সালের চেয়ে ১৮ শতাংশ কম। নীতি আয়োগের দাবি, গত ১৭ বছরে দেশে দারিদ্র কমেছে ১৮ শতাংশ।
নীতি আয়োগের রিপোর্ট বলছে, গত ১৭ বছরে দেশের ২৪ কোটি ৮২ লক্ষ মানুষ দারিদ্রসীমা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। দারিদ্র হ্রাসের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং মধ্যপ্রদেশ।
নীতি আয়োগের এই রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। কারও দাবি, এই পরিসংখ্যান অসত্য। কেউ কেউ আবার বলছেন, এতে তথ্য গোপন করা হয়েছে।
বিরোধীদের অনেকেরই বক্তব্য, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে দারিদ্রের পরিমাণ কমে যাওয়ার এই রিপোর্ট দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ভোটব্যাঙ্ককে প্রভাবিত করতে চাইছে।
বস্তুত, নীতি আয়োগের পরিসংখ্যান তৈরি হয়েছে বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচককে কেন্দ্র করে। এই সূচক আদৌ দারিদ্র সূচকের সমার্থক নয়। উভয় ক্ষেত্রে আলাদা বিষয় বিবেচিত হয়।
মানুষের ক্রয়ক্ষমতা পরিমাপ করে তৈরি হয় দারিদ্রের সূচক। অর্থাৎ, বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম যেটুকু খরচ করা প্রয়োজন, সেই সামর্থ্য কত জনের নেই, তার ভিত্তিতে তৈরি হয় দারিদ্র সূচক।
কিন্তু বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচকে ক্রয়ক্ষমতা দেখা হয় না। জনসংখ্যার কত শতংশের কাছে সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন পরিষেবা (শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি) পৌঁছচ্ছে না, তা বিচার্য হয় এ ক্ষেত্রে।
নীতি আয়োগ যে বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচক তৈরি করেছে, তাতে মূল তিনটি মাত্রা বিবেচনা করা হয়েছে। সেগুলি হল— স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার মান। এই তিন মাত্রার অধীনে রয়েছে ১২টি উপ-মাত্রা।
নীতি আয়োগের দারিদ্র পরিমাপের উপ-মাত্রাগুলি হল, পুষ্টি, শিশু-কিশোরের মৃত্যুহার প্রসূতির স্বাস্থ্য (স্বাস্থ্য), স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি, স্কুলে পড়ার সময়কাল (শিক্ষা)।
জীবনযাত্রার মান বিচার করা হয় সাতটি উপ-মাত্রা দিয়ে। সেগুলি হল— রান্নার গ্যাস পরিষেবা, পরিচ্ছন্নতা, পানীয় জল, বিদ্যুৎ, আবাসন, সম্পদ এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট।
ভারতে দারিদ্রের পরিমাপ কী, সাম্প্রতিক কালে সে বিষয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ভারতে করোনা অতিমারির পর দারিদ্র বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের (সুতীর্থ সিংহরায় ও রয় ভ্যান ডার উইড) ‘ওয়ার্কিং পেপার’ বলছে, গত এক দশকে ভারতে দারিদ্র কিছুটা কমেছে। তবে যতটা ভাবা হয়েছিল, ততটা হ্রাস পায়নি গরিব নাগরিকের সংখ্যা।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই মুহূর্তে গ্রামীণ ভারতে দারিদ্রের পরিমাণ ১১.৯ শতাংশ। নগরে রয়েছে ৬.৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। কোনও পরিসংখ্যানই নীতি আয়োগের সঙ্গে মিলছে না।
সব ছবি: আনস্প্ল্যাশ।