শেয়ার বাজারে ‘ভরাডুবি’ হয়েছে ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থায়। আমেরিকার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সংস্থার রিপোর্টের জেরে কোনও ভাবেই আদানিদের রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে না। কোনও বড় সংস্থাও বর্তমানে আদানিদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে হাত মেলাতে চাইছেন না বলেই বাজারে চাউর হয়েছে। তবে আদানিদের বিপদে হাত বাড়ালো আমেরিকার বিনিয়োগ সংস্থা ‘জিকিউজি পার্টনারস্’।
বৃহস্পতিবার একটি চুক্তির মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠীর ৪টি সংস্থাতে মোট পনেরো হাজার কোটিরও বেশি টাকা বিনিয়োগ করার ঘোষণা করেছে ‘জিকিউজি পার্টনারস্’।
‘জিকিউজি পার্টনারস্’ আদানি গোষ্ঠীর ‘আদানি পোর্টস এবং সেজ’, ‘আদানি গ্রিন এনার্জি’, ‘আদানি ট্রান্সমিশন’ এবং ‘আদানি এন্টারপ্রাইজ’ সংস্থায় এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানিয়েছে।
বিনিয়োগ সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে কয়েক ধাপে আদানিদের এই চার সংস্থায় মোট ১৫ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে তারা। এই নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে প্রয়োজনীয় চুক্তি সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে।
‘জিকিউজি পার্টনারস্’-এর প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (সিআইও)-র দায়িত্বে রয়েছেন রাজীব জৈন। তিনি বলেন, “আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ করা নিয়ে আমিও খুব আশাবাদী। আদানিদের বিভিন্ন সংস্থা ভারত এবং বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক সম্পদের মালিক। আর সেই কারণেই আমি এই চুক্তি নিয়ে এত উত্তেজিত।’’
খাতায় কলমে ‘জিকিউজি পার্টনারস্’-এর সব সিদ্ধান্তের পিছনে মাথা রয়েছে রাজীবেরই। সংস্থার সিআইও হিসাবে দেশে বিদেশে বহু সংস্থায় বিনিয়োগ করেছেন তিনি।
রাজীবের জন্ম ভারতে। তবে ১৯৯০ সালে বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে স্নাতকোত্তর হতে তিনি আমেরিকার মিয়ামিতে চলে আসেন। সেখানে তিনি মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পড়াশোনা শেষ করে ১৯৯৪ সালে তিনি ‘ভন্টোবেল’ সংস্থায় যোগ দেন।
খুব শীঘ্রই সুইৎজ়ারল্যান্ডের এই সংস্থার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ‘সম্পদ’ হিসাবে প্রমাণিত হন রাজীব। ২০০২ সালে তাঁকে ওই সংস্থার সিআইও পদে নিযুক্ত করা হয়।
এর পর দীর্ঘ দিন ‘ভন্টোবেল’ সংস্থায় কাজ করে ২০১৬ সালের জুনে রাজীব ‘জিকিউজি পার্টনারস্’ শুরু করেন। তিনিই ওই সংস্থার বেশিরভাগ শেয়ারের মালিক।
‘জিকিউজি পার্টনারস্’ শুরু করার সময় নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তির সর্বস্ব সংস্থার তহবিলে বিনিয়োগ করেছিলেন রাজীব।
রাজীবের সংস্থা ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আইপিও বাজারে আনে। শুরুতেই প্রায় ৭ হাজার ৩১১ কোটি টাকার সংগ্রহ করেছিল রাজীবের সংস্থা।
রাজীব আইপিও থকে সংগৃহীত আয়ের ৯৫ শতাংশ সংস্থাতে বিনিয়োগ করার এবং সেখানে ৭ বছরের জন্য অর্থ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিনিয়োগকারী হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে যথেষ্ট নাম রয়েছে রাজীবের। এর আগেও অনেক সংস্থার পাশে দাঁড়িয়ে তাদের লাভের মুখ দেখিয়েছেন তিনি।
তবে রাজীব বর্তমানে চর্চায় আদানি গোষ্ঠীর ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আদানিদের ১৫ হাজার কোটি বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
তবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজীব নাকি একদা মন্তব্য করেছিলেন যে, আদানি গোষ্ঠীর অনেক ঋণ রয়েছে এবং সেই কারণে তিনি আদানি গোষ্ঠীতে কোনও বিনিয়োগ করবেন না।
সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গের’ রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজীব নাকি কোনও সংস্থার সব দিক খতিয়ে না দেখে এক পয়সাও বিনিয়োগ করেন না।
তবে কী এমন হল যে আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ না করার বিষয়ে মনস্থির করার পরও রাজীব নিজের ভাবনা থেকে সরে দাঁড়ালেন?
‘জিকিউজি পার্টনারস্’ ছাড়াও ‘গোল্ডম্যান স্যাক্স’ সংস্থা সম্প্রতি শেয়ার পিছু ৬৬৮.৪ টাকায় আদানি ট্রান্সমিশনের ৮২ লক্ষ শেয়ার কিনেছে। এ ছাড়া সম্প্রতি আদানি পোর্টের লক্ষ লক্ষ শেয়ারও ভাল টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
সব ছবি সংগৃহীত।