দক্ষিণী অভিনেতা সিদ্ধার্থ সূর্যনারায়ণের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন বলিউড অভিনেত্রী এবং হায়দরাবাদের রাজপরিবারের কন্যা অদিতি রাও হায়দরি। সোমবারই সেই ছবি তিনি দিয়েছেন তাঁর সমাজমাধ্যমের পাতায়।
হায়দরাবাদ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে ওয়ানাপার্থি শহরের একটি ৪০০ বছরের পুরনো মন্দিরে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন অদিতি এবং সিদ্ধার্থ। এই মন্দিরের সঙ্গে যোগ রয়েছে পারিবারিক সম্পর্ক এবং বিশ্বাস।
অদিতির প্রপিতামহ জে রামেশ্বর রাও ছিলেন ওয়ানাপার্থির রাজপরিবারের সন্তান। সেই যোগসূত্রের বিচারে এই মন্দিরটি অদিতির পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
অদিতি এবং সিদ্ধার্থের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিবারের সদস্য এবং নিকট বন্ধুবান্ধব। বলিপাড়া সূত্রে খবর, ইন্ডাস্ট্রির সতীর্থদের জন্য একটি বিশেষ পার্টির আয়োজন করবেন নবদম্পতি।
অদিতির চেয়ে সিদ্ধার্থ আট বছরের বড়। কাজের সূত্রে আলাপ হয় দু’জনের। প্রায় তিন বছর সম্পর্কে থাকার পর গাঁটছড়া বাঁধেন দুই তারকা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তেলুগু ছবি ‘মহা সমুদ্রম’-এর শুটিংয়ের সময় প্রথম আলাপ হয় অদিতি এবং সিদ্ধার্থের। পেশাগত সম্পর্ক থেকে বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বই গড়িয়ে যায় প্রেমের সম্পর্কে।
সম্পর্ক নিয়ে বরাবরই মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন অদিতি এবং সিদ্ধার্থ। তবে নানা ধরনের অনুষ্ঠানে একসঙ্গে দেখা যেত দুই তারকাকে। সমাজমাধ্যমেও একে অপরের পোস্টে অধিকাংশ সময়ে মন্তব্য করতেন তাঁরা।
সঙ্গীতনির্মাতা এআর রহমানের কন্যার বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অদিতি এবং সিদ্ধার্থ। তা ছাড়া দক্ষিণী অভিনেতা স্বরানন্দের বাগ্দান পর্বেও দুই তারকাকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। ২০২২ সালে ‘পন্নিয়িন সেলভন’ ছবির গানের অ্যালবাম মুক্তির অনুষ্ঠানে ছিলেন দু’জনে।
২০২৩ সালের গোড়ার দিকে ‘টাম টাম’ নামের দক্ষিণের জনপ্রিয় গানের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে নাচ করে সমাজমাধ্যমে রিল পোস্ট করেন অদিতি এবং সিদ্ধার্থ। অভিনেত্রীর ৩৭তম জন্মদিনে সমাজমাধ্যমে অদিতির ছবি পোস্ট করে শুভেচ্ছাও জানান সিদ্ধার্থ।
বলিপাড়া সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গোড়ায় নববর্ষ উদ্যাপন করতে বাইরে ঘুরতে যান অদিতি এবং সিদ্ধার্থ। দু’জনের ছবি পোস্ট করে নিজেদের অনুগামীদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান তারকাদ্বয়।
বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, কেরিয়ারে প্রতিষ্ঠিত হবেন বলে নিজের প্রথম বিয়ের কথা গোপন করেছিলেন অদিতি। ২০১৩ সালে অভিনেত্রী জানান যে, তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। ভক্তেরা জানতেনই না, অদিতি আদৌ বিবাহিত।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে অদিতি নিজেই জানিয়েছিলেন, ১৭ বছর বয়স থেকে ডেট করার পর সরকারি কর্মী-আইনজীবী-অভিনেতা সত্যদীপ মিশ্রকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। মাত্র ২১ বছর বয়সে বিয়ে করার পর সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি তাঁর।
‘মার্ডার থ্রি’ ছবিতে রণদীপ হুডার সঙ্গে বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন অদিতি। তার পর থেকেই অদিতি এবং রণদীপের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা যেতে থাকে। অদিতির কারণেই নাকি পুরনো বান্ধবী নীতু চন্দ্রার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় রণদীপের।
সত্যদীপের সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণ জানা না গেলেও কানাঘুষো শোনা যায়, সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে অদিতির ঘনিষ্ঠতা মেনে নিতে পারেননি তাঁর স্বামী। সেই কারণেই বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন দু’জনে।
২০০৩ সালে ছোটবেলার বান্ধবী মেঘনাকে বিয়ে করেছিলেন সিদ্ধার্থ। দীর্ঘস্থায়ী হয়নি তাঁদের সম্পর্ক। তিন বছরের মধ্যেই ভেঙে যায় সিদ্ধার্থের সংসার। ২০০৭ সালে আইনত বিবাহবিচ্ছেদ হয় অভিনেতার।
২৭ মার্চ আংটিবদল করেন অদিতি এবং সিদ্ধার্থ। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানেই ছিল গোপনীয়তার মোড়ক। শুধু পরিবার এবং আত্মীয়-পরিজনের উপস্থিতিতে জাঁকজমকহীন ভাবেই অনুষ্ঠান সারেন তাঁরা।
অদিতি এবং সিদ্ধার্থের বাগ্দানের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় তেলঙ্গানার শ্রীরঙ্গপুরমে রঙ্গনায়কস্বামী মন্দিরে। তখনই জানা গিয়েছিল, বিয়ের অনুষ্ঠানেও গোপনীয়তা বজায় রাখবেন তাঁরা।
বিয়ের অনুষ্ঠানেও অদিতি এবং সিদ্ধার্থের পরনে সাদামাঠা পোশাক। অদিতি পরেন হালকা রঙের শাড়ি এবং সাদা নকশাহীন সিল্কের ধুতি-পাঞ্জাবি পরতে দেখা যায় সিদ্ধার্থকে। বিয়ের ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে অদিতি লিখেছেন, ‘‘ইউ আর মাই সান, মাই মুন অ্যান্ড অল মাই স্টারস!’’ আমেরিকান কবি এডওয়ার্ড এস্টিন কামিংসের একটি কবিতার শেষ পঙ্ক্তি। তবে সামান্য ভাষান্তর করে নিলে বলিউডের আরাধানা ছবির পুরনো একটি গানের লাইনও হয়ে যায়— ‘‘চন্দা হ্যায় তু, মেরা সুরজ হ্যায় তু, ও মেরি আখোঁ কা তারা হ্যায় তু...।’’
শুধু কবিতার পঙ্ক্তিতেই থামেননি অদিতি। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমাদের চিরকালীন সঙ্গী হওয়া, কোনও দিন বড় না হওয়া, হাসি, আলো, জাদু আর চিরন্তন প্রেমকে নিবেদন।’’ শেষে নিজেদের ডাকনামও লিখেছেন অদিতি— ‘‘মিসেস এবং মিস্টার আদু-সিধু।’’
সব ছবি: সংগৃহীত।