
দু’বছরের সম্পর্ক। চলতি বছরে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল দুই তারকার। এমনকি বিয়ের পর কোথায় থাকবেন তা-ও প্রায় ঠিক করে ফেলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, বলিউডের ‘পাওয়ার কাপল’-এর তকমা পাওয়া তারকা-জুটি তমন্না ভাটিয়া এবং বিজয় বর্মা তাঁদের সম্পর্কে ইতি টেনে ফেলেছেন।

বলিউডের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে যে, তমন্নার এবং বিজয়ের সম্পর্ক নাকি কয়েক সপ্তাহ আগেই ভেঙে গিয়েছে। তবে প্রেমের সম্পর্কে দাঁড়ি পড়লেও মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যাবে না তাঁদের। প্রেম কেন ভাঙল তা জানা না গেলেও তাঁরা বিচ্ছেদের পর একে অপরের বন্ধু হয়ে থাকবেন এমনটাই শোনা যাচ্ছে।

তারকাজুটির ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানিয়েছিলেন, চলতি বছরেই চারহাত এক হওয়ার কথা ছিল তমন্না এবং বিজয়ের। তার প্রস্তুতিও শুরু করে ফেলেছিলেন দু’জনে। মুম্বই শহরে নাকি নতুন ঠিকানার খোঁজ করছিলেন তমন্না-বিজয়। মুম্বইয়ে বিলাসবহুল আবাসন কেনার পরিকল্পনাও ছিল তাঁদের। শোনা যাচ্ছিল, বিয়ের পর সেই আবাসনেই একসঙ্গে থাকবেন তাঁরা। কিন্তু বিয়ের আগেই সম্পর্কে ছেদ পড়ল তাঁদের।

বিচ্ছেদ নিয়ে তমন্না এবং বিজয় এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে কিছু জানাননি। তবে বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, সমাজমাধ্যমের পাতা থেকে দু’জনেই তাঁদের একসঙ্গে থাকা বেশ কয়েকটি ছবি মুছে দিয়েছেন। শুধুমাত্র যে ছবি এবং বিজ্ঞাপনের প্রচারমূলক অনুষ্ঠানে তাঁরা একসঙ্গে রয়েছেন, সেই পোস্টগুলিই রয়েছে।

এক জন দক্ষিণীজগতের প্রথম সারির অভিনেত্রী। পাশাপাশি বলিপাড়ায়ও নাম করে ফেলেছেন। অন্য জন বলিউডের দক্ষ অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম। গোড়ার দিকে সম্পর্ক গোপনে রাখার চেষ্টা করলেও পরে তমন্না এবং বিজয় তা নিয়ে রাখঢাক করতেন না। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁদের একসঙ্গে দেখা যেত। একে অপরের হাতে হাত রেখে ছবিশিকারিদের ক্যামেরায় ধরা দিতেন তাঁরা।

২০২২ সাল থেকে তমন্না এবং বিজয়ের সম্পর্কের খবর প্রকাশ্যে এসেছিল। বলিপাড়া সূত্রে খবর, তমন্নার জন্মদিন উপলক্ষে নায়িকার বাড়িতে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তমন্নার পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব। অতিথিদের তালিকায় ছিলেন বিজয়ও।

বলিপাড়ার একাংশের দাবি, ২০২৩ সালে নতুন বছর উদ্যাপন করতে গোয়ায় গিয়েছিলেন তমন্না এবং বিজয়। আকাশে যখন রংবেরঙের আতশবাজি খেলা দেখাচ্ছিল তখন নাকি তারকারা একে অপরের গালে চুমু এঁকে দিয়েছিলেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে বলিপাড়ার অন্দরমহলে।

শুরুর দিকে নিজেদের ভাল বন্ধু বলেই পরিচয় দিতেন তমন্না এবং বিজয়। সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আনতে চাননি তাঁরা। ২০২৩-এ জুন মাসে তমন্না প্রথম জানিয়েছিলেন, বিজয়ের সঙ্গে তিনি সুখে রয়েছেন। কাজের ক্ষেত্রেও তাঁরা পরস্পরের পাশে থাকেন বলে জানিয়েছিলেন।

২০২৩ সালের জুন মাসে ওটিটির পর্দায় মুক্তি পায় ‘লাস্ট স্টোরিজ় ২’। সেই ছবিতে তমন্না ও বিজয়ের উষ্ণ রসায়ন পর্দায় ধরা পড়েছিল। পরে অবশ্য বিজয় এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, ‘লাস্ট স্টোরিজ় ২’ ছবির শুটিংয়ের পর থেকেই নাকি তাঁদের সম্পর্ক আরও গাঢ় হতে শুরু করেছিল।

বিজয় জানিয়েছিলেন যে, ‘লাস্ট স্টোরিজ় ২’ ছবির শুটিং শেষ হওয়ার পর একটি পার্টি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই পার্টিতে শুটিং ক্রুয়ের সব সদস্য যেতে পারেননি। শেষে দেখা গিয়েছিল, মাত্র চার জন সেই পার্টিতে হাজির হয়েছেন। বিজয় বলেছিলেন, ‘‘সে দিন-ই আমি বুঝেছিলাম যে, তমন্নার সঙ্গে আরও সময় কাটাতে চাই আমি এবং সেই কথা ওকেও জানানো প্রয়োজন।’’

বিজয় জানিয়েছিলেন, তমন্নাকে মনের কথা জানানোর সাহস সঞ্চয় করতেই নাকি বহু দিন সময় লেগেছিল তাঁর। পার্টি হওয়ার ২০-২৫ দিন পর তমন্নার সঙ্গে প্রথম ডেটে গিয়েছিলেন অভিনেতা। কয়েক মাস পর তাঁদের সম্পর্ক সকলের প্রকাশ্যে আসে।

বলিপাড়া সূত্রে খবর, বিজয়ের সঙ্গে সম্পর্কে আসার আগে তমন্নার নাম জড়িয়েছে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে। সেই তালিকায় রয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলিও।

২০১২ সালে একটি বিজ্ঞাপনে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন বিরাট এবং তমন্না। তার পর থেকেই তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। শোনা যায়, সেই সম্পর্ক বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। গুঞ্জন ছড়ানোর সময় দুই তারকা মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেও এই প্রসঙ্গ নিয়ে বহু বছর পর মুখ খুলেছিলেন নায়িকা।

তমন্না এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘লোকজনের সত্যিই কোনও ধারণা নেই। যা খুশি তাই বলে। আমরা একসঙ্গে একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছিলাম। সেই সময় হয়তো চার-পাঁচটা কথা বলেছি দু’জনে। তার পর আমাদের মধ্যে কোনও কথাই হয়নি।’’

এক পাকিস্তানি ক্রিকেটারের সঙ্গেও নাম জড়িয়ে পড়েছিল তমন্নার। ২০১৭ সালে দুবাইয়ের এক গয়নার দোকানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তমন্না। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আবদুল রাজ্জাক। সেই দোকানে দাঁড়িয়ে দু’জন ছবি তুলেছিলেন। কিন্তু পরে ছবিটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়ে যায়।

দুবাইয়ে আবদুলের সঙ্গে বাগ্দান পর্ব সেরে ফেলেছেন তমন্না, এমন গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য সত্য ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় সেই রটনা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।

কয়েক বছর আগে রটনা ছড়িয়েছিল যে, আমেরিকার এক চিকিৎসকের সঙ্গে নাকি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তমন্না। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে অভিনেত্রী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘কখনও অভিনেতা, কখনও ক্রিকেটার, কখনও চিকিৎসক। এ সব শুনলে মনে হয় আমি হাতে থলে নিয়ে বাজারে বেরিয়েছি বর খুঁজব বলে। আমি ভালবাসায় বিশ্বাস করি। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এই ধরনের আজেবাজে কথা ছড়িয়ে পড়লে তা মেনে নিতে পারব না।’’

২০১০ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘পাইয়া’ নামের একটি তামিল ছবি। এই ছবিতে তামিল অভিনেতা কার্তির সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় তমন্নাকে। বড় পর্দায় দুই তারকার সম্পর্কের রসায়ন মনে ধরেছিল দর্শকের। তার পর থেকেই কার্তি এবং তমন্নার সম্পর্ক রয়েছে বলে গুঞ্জন শোনা যেতে থাকে।

কার্তির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে কি না সে প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তমন্না বলেছিলেন, ‘‘অভিনেত্রী হিসাবে আমার দায়িত্ব যে আমার প্রসঙ্গে যা কিছু রটছে সেই ধোঁয়াশা স্পষ্ট করে দেওয়া। কার্তির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। ও আমার ভাল বন্ধুও নয়। কার্তি আমার সহকর্মী মাত্র।’’

এক পডকাস্টে তমন্না জানিয়েছিলেন যে, প্রেমে দু’বার আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। তবে সম্পর্ক ভেঙে গেলেও কোনও প্রাক্তন প্রেমিককেই তিনি ঘৃণা করেন না। বরং সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন।

সম্পর্ক নিয়ে তমন্না বলেছিলেন, ‘‘জীবনে মানুষের আসা-যাওয়া চলতে থাকে। তাঁরা কোনও না কোনও কারণে আমাদের জীবনে আসেন। তাঁদের এই আসা-যাওয়াই আমাদের কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা নিজেদের আরও ভাল করে চিনতে পারি। বিচ্ছেদ হলে যন্ত্রণা হবে। সেই যন্ত্রণা মেনে নিয়ে পরে সেখান থেকে সরেও আসতে হবে। কয়েক বছর পর সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়লে নিজেরাই হাসব। তবে আমাদের জীবনে এমন এক জন সত্যিই আসে যে আমাদের নিজেদের মতো গ্রহণ করে নেয়। আমরা যেমন ঠিক তেমন ভাবেই আমাদের ভালবাসে। সেই মানুষটার জন্যই অপেক্ষা করতে হয়।’’

তমন্না সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমার প্রথম সম্পর্ক যখন ভেঙেছিল তখন আমার বয়স কম। সম্পর্ক ভাঙার পর মনে হয়েছিল আমার অনেক কিছু জানার রয়েছে, পাওয়ার রয়েছে। দ্বিতীয় সম্পর্ক পরিণত বয়সে এসে ভাঙে। সেই মানুষটা আমার জন্য সঠিক ছিল না। দীর্ঘকাল তাঁর সঙ্গে কাটানো যেত না। সম্পর্কের প্রথম দু’-এক সপ্তাহে যে সমস্যাগুলো দেখা দেয়, পরে সেই সমস্যাই বড় আকার ধারণ করে। তাই কখনও সেগুলো এড়িয়ে যেতে নেই। সম্পর্কের ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনও ব্যক্তির উপদেশ কখনও নেওয়া উচিত নয়।’’
সব ছবি: সংগৃহীত।