
গুজরাতের জামনগর থেকে মার্চের ২৯ তারিখ হেঁটে যাত্রা শুরু করেছিলেন। রবিবার শেষ হল সেই ‘অনন্ত-যাত্রা’। ১৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ৬ এপ্রিল দ্বারকা পৌঁছোন দেশের অন্যতম বিত্তশালী ব্যবসায়ী মুকেশ অম্বানীর কনিষ্ঠ পুত্র অনন্ত অম্বানী। রবিবার, অর্থাৎ রামনবমীর দিন হেঁটে দ্বারকায় প্রবেশ করেন অনন্ত। শেষ করেন তাঁর আধ্যাত্মিক পদযাত্রা। ঘটনাচক্রে, হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সে দিন তাঁর জন্মদিনও ছিল। দ্বারকা পৌঁছে দ্বারকাধীশের দর্শন করেন অনন্ত। মাথা হেঁট করেন ভগবানের কাছে।

অনন্তের পৈতৃক বাড়ি এবং কর্মভূমি জামনগর থেকে ভারতের অন্যতম পবিত্র শহর দ্বারকা পর্যন্ত যাত্রাপথ প্রায় ১৪০ কিলোমিটারের। ২৯ মার্চ যাত্রা শুরু করার পর থেকে প্রতি দিন গড়ে প্রায় ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার পথ হেঁটেছিলেন ৩০ বছর বয়সি অনন্ত। প্রতি রাতে প্রায় সাত ঘণ্টা করে হেঁটেছিলেন তিনি। অনন্তের সঙ্গে ছিলেন তাঁর কয়েক জন ঘনিষ্ঠ এবং নিরাপত্তারক্ষীরা। তবে অনন্তের এই পদযাত্রায় কোনও রাজকীয়তা ছিল না, ছিল না কোনও আড়ম্বর বা জনকোলাহল। যাত্রা ছিল নীরব, নির্জন, শান্ত। যাত্রা ছিল তাঁর ‘ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হওয়া’র। ঈশ্বরের প্রতি আস্থা এবং শ্রদ্ধা থেকেই ওই যাত্রা শুরু করেছিলেন অনন্ত।

অনন্তের পদযাত্রা আচার-অনুষ্ঠানেও ভরা ছিল না। এ ছিল তাঁর শান্তির যাত্রা, ভক্তির যাত্রা, ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের যাত্রা, সর্বোপরি ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়ার যাত্রা। ভগবান কৃষ্ণের কাছে নিজের দেহ, মন এবং আত্মাকে সঁপে দিতেই দ্বারকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিলেন অনন্ত।

অনন্তের কথায়, “ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে আমি যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে হেঁটে যাব। আমার বিশ্বাস প্রকাশ করতে আমি কষ্ট সহ্য করব। আমি মাথা নত করব, কারণ আমি দুর্বল নই, কারণ আমি ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করেছি।”

নতুন প্রজন্মের জন্যও বার্তা দিয়েছেন অনন্ত। তিনি বলেন, ‘‘তোমার ভক্তি তোমাকে পথ দেখাক। তোমাকে বিনয়ী করুক। তোমাকে নতুন করে গড়ে তুলুক। যখন জীবনের বোঝা ভারী মনে হয়, তখন তোমার বিশ্বাস যেন তোমাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।’’

ছোটবেলা থেকেই কুশিং সিনড্রোমে আক্রান্ত অনন্ত। এটি একটি বিরল হরমোনজনিত ব্যাধি। স্থূলতা এবং হাঁপানি থাকা সত্ত্বেও ১৪০ কিলোমিটারের যাত্রাপথ হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অনন্ত। সাহসের উপর ভর করে এবং সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে সম্পূর্ণ করলেন সেই আধ্যাত্মিক যাত্রা। অনন্ত প্রমাণ করে দিলেন যে, বিশ্বাস চিরন্তন। মনে সাহস এবং বিশ্বাস থাকলে সমস্ত বাধাই কাটিয়ে ওঠা যায়।

তবে এই দীর্ঘ যাত্রাপথে বেশ কয়েক বার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন অনন্ত। পশুদের প্রতি তাঁর প্রেমের নিদর্শনও মেলে যাত্রায়। আধ্যাত্মিক যাত্রাপথে একাধিক বার হনুমান চালিশা, সুন্দরকাণ্ড এবং দেবীস্তোত্র জপ করতেও দেখা গিয়েছিল অনন্তকে। অনন্তের সঙ্গে তাঁর আধ্যাত্মিক যাত্রাপথে পা মেলাতে দেখা গিয়েছিল অনেক সাধারণ মানুষকেও। তাঁর সদিচ্ছার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন অনেকে। কেউ কেউ আবার তাঁর কাছে দ্বারকাধীশের ছবি নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছবি তোলার ভিড়ও লক্ষ করা গিয়েছিল যাত্রাপথের কোথাও কোথাও। কাউকেই নিরাশ করেননি তিনি।

উল্লেখ্য, এর আগেও ঈশ্বরভক্তিতে দূরদূরান্তে যেতে দেখা গিয়েছে রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান মুকেশ অম্বানীর কনিষ্ঠ পুত্রকে। ধর্মপ্রাণ হিন্দু হিসাবে বদ্রীনাথ, কেদারনাথ, কামাখ্যা, কুম্ভমেলাও ঘুরে এসেছেন তিনি। বাবার মতো অনন্ত নিজেও সফল ব্যবসায়ী। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, ব্যবসায়িক জগতে ভবিষ্যৎ তৈরি করার পাশাপাশি আধ্যাত্মিকতার পথেও রয়েছেন তিনি। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবার থেকে সাময়িক বিরতি নিয়ে বেরিয়েছিলেন আধ্যাত্মিক যাত্রাপথে।
সব ছবি: সংগৃহীত।