উত্তরাখণ্ডের গঢ়ওয়াল হিমালয়ের ‘দ্রৌপদী কা ডান্ডা-২’ শিখরের অদূরে মঙ্গলবার তুষারধসে মৃত চার জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে বুধবার দুপুর পর্যন্ত। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন উত্তরাখণ্ডের এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী সবিতা কাঁসওয়াল।
২৬ বছরের সবিতা উত্তরকাশীর পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণকেন্দ্র ‘নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং’ (নিম)-এর প্রশিক্ষক ছিলেন। তাঁর সঙ্গেই তুষারধসে প্রাণ হারিয়েছেন আরও এক মহিলা প্রশিক্ষক নাউমি।
চলতি বছরের মে মাসে মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে দুই আট হাজারি পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছিলেন সবিতা। ১২ মে বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ, ৮,৮৪৮ মিটার উঁচু এভারেস্টের পর ২৮ মে ৮,৪৬৩ মিটারের মাকালু।
এভারেস্ট এবং মাকালু শৃঙ্গ জয়ের পর ‘নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং’ (নিম)-এ স্থায়ী ভাবে প্রশিক্ষকের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের লোনথ্রু গ্রামের বাসিন্দা সবিতা।
পরে ‘নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং’ থেকেই ২০১৩ সালে পর্বতারোহণের ‘বেসিক’ এবং ‘অ্যাডভান্স’ কোর্স করেছিলেন সবিতা। ২০১৮ সাল থেকেই তিনি ওই সংস্থায় প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
গঢ়ওয়াল হিমালয়ের ‘দ্রৌপদী কা ডান্ডা-২’ শৃঙ্গের উচ্চতা ৫,৬৭০ মিটার। ওই অঞ্চল দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসাবেও পরিচিত হয়। পর্বতারোহণ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পাহাড়ের ঢালে জমা তুষারে স্তূপ হঠাৎ ধসে গিয়েই প্রাণ কেড়েছে সবিতাদের।
সবিতা ভারতের দ্বিতীয় এভারেস্ট জয়ী মহিলা পর্বতারোহী যাঁর মৃত্যু হল হিমালয়ে দুর্ঘটনায়। তাঁর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে কাঞ্চনজঙ্ঘা জয়ের পরে ইয়াংলুং কাং শৃঙ্গে আরোহণ করতে গিয়ে মৃত্যু হয় বাংলার ছন্দা গায়েনের।
সবিতার মতোই এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছিলেন মহিলা পর্বতারোহী ছন্দা। ২০১৩ সালে এভারেস্ট জয়ের পরে একই অভিযানে লোৎসে শৃঙ্গ আরোহণ করেছিলেন তিনি।
২০১৪ সালের মে মাসে ইয়াংলুং কাং অভিযানে গিয়ে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে চিরতরে হারিয়ে গিয়েছিলেন এভারেস্টজয়ী ছন্দা। তাঁর দেহ আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি।
এ বার ‘দ্রৌপদী কা ডান্ডা-২’ অভিযানের পর ‘নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং’-এর মোট ৪১ জনের দল গিয়েছিল। তাতে ছিলেন সবিতা ও নাউমি-সহ মোট ন’জন প্রশিক্ষক।
ওই দলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন বাংলার তিন জন। তাঁরা-সহ মোট ২৫ জন শিক্ষার্থী এখনও নিখোঁজ বলে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে সবিতা-সহ চার জনের দেহ।
‘নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং’ সূত্রের খবর, ডোকরানি বামক হিমবাহের কাছে শিবির তৈরি করেছিল ৪১ জনের ওই অভিযাত্রী দল। পাহাড় থেকে ধসে পড়া বিপুল তুষারের স্তূপে চাপা পড়ে যায় সেই শিবির।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সেনা, ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল (এনডিআরএফ)-এর উদ্ধারকারী বাহিনী মোট ১২ জনকে উদ্ধার করে। বায়ুসেনার কপ্টারে তাঁদের দেহরাদূন আনা হয়।
বুধবার উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা আরও অন্তত ছ’টি দেহের সন্ধান পেয়েছেন বলে উত্তরাখণ্ড সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে। কিন্তু দুর্গমতা এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে দেহগুলি এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।