কোনও সুন্দরীকে ‘টোপ’ হিসাবে ব্যবহার করে সেনার কাছ থেকে তথ্য বার করা! শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী ‘শত্রু’ দেশের সেনার কাছ থেকে তথ্য আদায়ের জন্য এই ফাঁদ পাতার ‘রেওয়াজ’ রয়েছে। কোনও রাজনীতিক, নেতা, মন্ত্রীর ক্ষেত্রেও সুন্দরী মহিলাকে ‘টোপ’ হিসাবে ব্যবহার করার ঘটনা নেহাত কম নেই। এ বার পাকিস্তানের এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক দাবি করলেন, সে দেশের বেশ কয়েক জন অভিনেত্রীকে তথ্য হাতানোর জন্য টোপ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই দাবির পরেই শুরু বিতর্ক। জবাব দিয়েছেন ওই অভিনেত্রীরাও।
পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক মেজর আদিল রাজা ওই দাবি করেছেন। নিজে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান রাজা। তাঁর চ্যানেলের তিন লক্ষ সাবস্ক্রাইবার রয়েছেন। সেই চ্যানেলেই রাজা দাবি করেন, পাকিস্তানের কয়েক জন অভিনেত্রীকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করেছে সেনাবাহিনী।
রাজা দাবি করেন, ওই কাজ হয়েছে প্রাক্তন সেনা প্রধান কামর জাভেদ বাজওয়ার আমলে। তিনিই অভিনেত্রীদের ‘টোপ’ হিসাবে ব্যবহার করেছেন। সঙ্গে ছিলেন পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের প্রাক্তন প্রধান ফৈজ হামিদ। মূলত রাজনীতিকদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ের জন্যই অভিনেত্রীদের ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রাজার।
নিজের চ্যানেল ‘সোলজার স্পিকস’-এ ওই অভিযোগ করে পাক অভিনেত্রী সজল আলির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন রাজা। আলির পাশাপাশি আরও কয়েক জন অভিনেত্রীর দিকেও তাঁর ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, সরাসরি কারও নাম করেননি রাজা। নামের আদ্যক্ষর ব্যবহার করেছেন। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সজল।
রাজার ভিডিয়ো নিমেষে ভাইরাল হয়। কারও বুঝতে বাকি থাকে না, কোন অভিনেত্রীদের কথা বলতে চেয়েছেন তিনি। অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক মেজর আদিল রাজা এমএইচ, এমকে, কেকে, এসএ বলেছেন। সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনুমান, তিনি আসলে মেহয়িশ হায়াত, মাহিরা খান, কুবরা খান, সজল আলির কথা বলতে চেয়েছেন।
আলির ভিডিয়ো নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক। তার মধ্যেই ইঙ্গিতপূর্ণ টুইট করেছেন সজল। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘এটা খুবই দুঃখের যে, আমাদের দেশ নৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কুৎসা চলছে। চরিত্রহনন করা হচ্ছে। যা মানবতার সবচেয়ে খারাপ দিক।’’ যদিও সজল সরাসরি কিছু বলেননি।
চুপ থাকেননি কুবরা খানও। জবাব দিয়েছেন দীর্ঘ পোস্টে। তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রথমে চুপ করেছিলাম, কারণ ওটা একটা ভুয়ো ভিডিয়ো। কিন্তু যথেষ্ট হয়েছে। আমার দিকে কেউ আঙুল তুলবেন, আর আমি চুপ করে বসে থাকব! আদিল রাজা, কোনও অভিযোগ করার আগে প্রথমে প্রমাণ দিন।’’
এখানেই থামেননি কুবরা। আরও কড়া গলায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। তিনি লিখেছেন, ‘‘যে দাবি করেছেন উনি, তা প্রমাণের জন্য তিন দিন সময় দিলাম। না পারলে নিজের দাবি ফিরিয়ে জনসমক্ষে ক্ষমা চান। নয়তো আমি মানহানির মামলা করব।’’ তিনি এ-ও লিখেছেন, ‘‘সত্যির সঙ্গে রয়েছি। কারও বাবাকে ভয় পাই না।’’
মেহয়িশ হায়াতও রেওয়াৎ করেননি রাজাকে। পুরো অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে লম্বা পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘‘সস্তার খ্যাতি পাওয়ার জন্য কেউ মানবিকতা থেকে দূরে সরে অনেক নীচে নেমে যান। আশা করি, নিজের দু’মিনিটের খ্যাতি উপভোগ করছেন।’’
এখানেই থামেননি মেহয়িশ। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি অভিনেত্রী মানেই আমার নামে কাদা ছেটানো যায় না। এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়ানোর জন্য আপনাকে ধিক্কার। আরও বড় ধিক্কার, সেই সব মানুষকে, যাঁরা এ সব বাজে কথায় বিশ্বাস করেন।’’
এ নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি মাহিরা খান। শাহরুখ খানের বিপরীতে ‘রইস’ ছবিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। বারে বারে বিতর্কে জড়িয়েছেন মাহিরা। রণবীর কপূরের সঙ্গে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। যদিও এ বার আর তিনি মুখ খোলেননি।
সজল আলি সম্প্রতি শিরোনামে এসেছিলেন শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ানের ছবি পোস্ট করে। আরিয়ানের ওই ছবির সঙ্গে প্রেক্ষাপটে শোনা যাচ্ছিল শাহরুখের ‘হাওয়ায়েঁ’ গানটি। একটি লাল হৃদয়ের ইমোজি দিয়েছিলেন সজল। তা থেকে স্পষ্ট হয়েছিল আরিয়ানের প্রতি তাঁর ভাল লাগা।
২০২০ সালে বিয়ে হয়েছে সজলের। দীর্ঘ দিনের প্রেমিক আহাদ রাজা মিরের সঙ্গে। ভারতীয় সিনেমা ‘মম’-এ অভিনয় করেছিলেন সজল। শ্রীদেবীর বিপরীতে।
এর আগে পাকিস্তান গুপ্তচর বাহিনী আইএসআই সুন্দরী মহিলাদের ‘টোপ’ হিসাবে ব্যবহার করে ভারতীয় সেনার কাছ থেকে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করেছে বার বার। ২০১৯ সালে রাজ্যসভায় এই অভিযোগ করেছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী শ্রীপদ নায়েক। তদন্তে ভারতীয় সেনাবাহিনী দেখেছিল, সমাজমাধ্যমে ১৫০টি ভুয়ো প্রোফাইল ব্যবহার করে পাকি সেনা ভারতীয় জওয়ানদের থেকে তথ্য হাতানোর চেষ্টা করছে।