জীবন কখনও থেমে থাকে না, চলতেই থাকে। কিন্তু প্রাণভোমরাও যদি ‘অমর’ হয়? মৃত্যুতে যদি হঠাৎ আজীবনের জন্য দাঁড়ি পড়ে যায়। তা হলে কী হবে? কোনও রূপকথা বা কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়, বাস্তবে এই চেষ্টা চালাচ্ছে আমেরিকার এক সংস্থা।
১৯৭২ সালে আমেরিকার অ্যারিজোনা এলাকায় এই সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্রায়োনিক পদ্ধতির মাধ্যমে মানুষের মৃতদেহ, মাথার খুলি তরল নাইট্রোজেনের মধ্যে রেখে সংরক্ষণ করে আসছে এই সংস্থা।
বিভিন্ন সেমিনারের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করে সংস্থার সদস্যরা। অ্যারিজোনায় একটি পরীক্ষাগার থাকলেও তাঁদের গবেষণার সুবিধার্থে ক্যালিফোর্নিয়াতেও একটি গবেষণাগার খোলেন তাঁরা।
গোড়ার দিকে পশুপাখির উপর এই পরীক্ষা করলেও পরবর্তী কালে মৃত মানুষের উপরেও গবেষণা করতে শুরু করেন সংস্থার কর্মীরা।
কিন্তু সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় কী করে? সংস্থার তরফে জানানো হয়, মৃত্যুর পরে দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, যা তাঁদের গবেষণার জন্য একদম ফলপ্রসূ নয়।
তাই এই সমস্যার সমাধান বের করতে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, কোনও ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সংস্থার গবেষণার কাজে সাহায্য করার জন্য একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
কেউ কেউ আবার এই সংস্থার জন্য কিছু টাকাও বিনিয়োগ করে রাখেন। বহু ক্ষেত্রে এমনও ঘটনা ঘটেছে যেখানে পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েই সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন অনেকে।
পরবর্তী কালে ব্যক্তিটি মারা যাওয়ার পর পরিবারের লোকেরা সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পর আসল সত্য ধরা পড়ে।
যাঁরা এই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন, তাঁরা শেষ বয়সে চিকিৎসাজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় নির্দেশ দিয়ে থাকেন। চিকিৎসকরা যে মুহূর্তে বুঝতে পারবেন যে, আর বাঁচার কোনও আশা নেই, তখন যেন সংস্থাকে খবর পাঠানো হয়।
খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংস্থার কর্মীরা মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছে যান নির্দিষ্ট হাসপাতালে। মৃত্যুর ঠিক পরেই তাঁরা ক্ষণিকের জন্য কৃত্রিম ভাবে হৃৎপিণ্ড সচল রাখার ব্যবস্থা করেন।
তার পর মৃতদেহটিকে কনকনে ঠান্ডা বরফজলে পরিষ্কার করা হয়। সেই অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব, মৃতদেহকে গবেষণাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। শরীর থেকে সমস্ত রক্ত বের করে একটি মিশ্রণ ঢেলে দেওয়া হয়, যা অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে সংরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
তার পর কম তাপমাত্রাযুক্ত একটি সেলে দেহটি ঢুকিয়ে রাখা হয়। তবে, তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণের দিকে খেয়াল না রাখলে দেহের কোষগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
-১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মৃতদেহটি রাখা হয় বছরের পর বছর। মাঝেমধ্যে তরল নাইট্রোজেনও প্রয়োগ করা হয়। এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, গবেষক এবং কর্মীদের ধারণা, চিকিৎসাবিদ্যা কয়েক বছরের মধ্যে এত উন্নত হবে যে তাঁরা এই মৃতদেহগুলির মধ্যে প্রাণসঞ্চার করতে সফল হবেন।
২০২১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত এই সংস্থার সঙ্গে মোট ১,৮৩২ কর্মী যুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে ১৮২ জন কর্মীর মৃতদেহ তাঁরা সংস্থার উদ্দেশে দান করেছেন।
১১৬ জন মৃত কর্মীর শুধু মাত্র মাথার অংশটুকুই সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তবে কর্মীদের ধারণা, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় এই পরিবেশে ভ্রূণ জমিয়ে রাখলে তা পরীক্ষার জন্য বেশি কার্যকরী।