মাথার উপর ছাদ ছিল না। জীবনের ১১টা বছর পরিবার-সহ রাস্তাতেই কাটিয়েছেন। ভিক্ষা করতে হয়েছে স্টেশনেও। আজ সেই ডেভিড অ্যামব্রোজই অ্যামাজনের অন্যতম শীর্ষকর্তা।
সংস্থার বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভাগের প্রধান হলেন ৪২ বছর বয়সি ডেভিড। শুধু অ্যামাজনেই নয়, কাজের সূত্রে হোয়াইট হাউস এবং ওয়াল্ট ডিজনির সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
তবে, তাঁর এই যাত্রা খুব একটা সহজ ছিল না। ডেভিডের মা মানসিক রোগে ভুগছিলেন। দুই ভাইবোনের দায়িত্বও ছিল তাঁর উপর। পরিবার-সহ নিউ ইয়র্ক শহরের রাস্তায় দিন কাটাতেন তিনি।
রাস্তার ধারের ফাস্ট-ফুড রেস্তরাঁর শৌচালয়ই ব্যবহার করতেন ডেভিড। কখনও ঘুমাতেন মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে, কখনও আশ্রয় জুটত গির্জায়।
গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ভিক্ষাও করেছেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে ডেভিড জানিয়েছেন, সারা দিনে তিনি কী খাবেন তা নির্ভর করত স্টেশনের যাত্রীদের দাক্ষিণ্যের উপর।
চার বছর বয়স থেকে তিনি এ ভাবেই দিন কাটিয়েছেন। এক ডলার (ভারতীয় মুদ্রা অনুযায়ী প্রায় ৮০ টাকা) পেলেই সারা দিন আর চিন্তা করতে হত না তাঁকে, জানিয়েছেন ডেভিড।
১২ বছর বয়সে ডেভিডকে অনাথ আশ্রমে নিয়ে যাওয়া হয়। এক সম্ভ্রান্ত পরিবার ডেভিডকে দত্তকও নেন। ডেভিড মনে করেন, তাঁর সাফল্যের পিছনে (পালিকা মা) হোলির ভূমিকা অনবদ্য।
অর্থাভাবের কারণে স্কুলে ভর্তি হননি তিনি। গ্রন্থাগারে পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করতেন তিনি। হোলিই তাঁকে স্কুলে ভর্তি করান।
উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালীন তিনি স্পেনে যান। স্পেনের এই শিক্ষামূলক ভ্রমণের সুবাদেই তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য নিউ ইয়র্কের ভাসার কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।
কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সামান্য রোজগারের জন্য বহু জায়গায় চাকরিও করেছেন। সেই সময় হোয়াইট হাউসে ইন্টার্নশিপও করেন ডেভিড।
পরবর্তী কালে, ইউসিএলএ স্কুল অব ল থেকে ডিগ্রি লাভ করে এক নামকরা সংস্থার আইন ও বাণিজ্য বিভাগের দফতরে চাকরির সুযোগ পান।
ওয়াল্ট ডিজনি টেলিভিশন সংস্থার শীর্ষপদেও যুক্ত ছিলেন ডেভিড। দীর্ঘ আট বছর ধরে ওয়াল্ট ডিজনির সংস্থায় বিভিন্ন মানবহিতৈষী কাজও করেছিলেন তিনি।
২০২১ সালে তিনি অ্যামাজন সংস্থার বৈদেশিক বিষয়গুলি পর্যালোচনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
সাক্ষাৎকারে ডেভিড জানিয়েছেন, তিনি এখন বড় সংস্থার একজন শীর্ষকর্তা। কিন্তু কয়েক বছর আগেও তাঁর খাবার জুটত না।
‘ফস্টারমোর’ নামের এক সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি। এর মাধ্যমে যে কেউ পালক পিতা-মাতা হতে পারবেন। দত্তক নেওয়ার সুবিধাও পাওয়া যাবে ‘ফস্টারমোর’-এর মাধ্যমে।
এমনকি, ডেভিড নিজেও এক জন পালক পিতা। তিনি অবশ্য মনে করেন, অনাথ শিশুদের দত্তক নেওয়া ছাড়াও তাদের পাশে দাঁড়ানো যায়।
আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁর লেখা ‘অ্যা প্লেস কলড হোম’ নামের এক স্মৃতিকথা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছেন ডেভিড অ্যামব্রোজ।