সম্প্রতি বলিউডের জনপ্রিয় প্রযোজক ও পরিচালক একতা কপূর ও তাঁর মা শোভা কপূরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করল বিহারের বেগুসরাইয়ের আদালত। এই মামলায় অবিলম্বে তাঁকে হাজিরার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক।
একতা কপূরের প্রযোজনায় ‘ট্রিপল এক্স’ নামে একটি ওয়েব সিরিজের দ্বিতীয় সিজ়ন মুক্তি পায়। এই সিরিজ়ের চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে একটি অন্তরঙ্গ দৃশ্যে দেখানো হয়। অভিযোগ, এক সেনার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য ব্যক্তির বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে একাধিক ‘আপত্তিকর’ দৃশ্য দেখানো হয়েছে। শম্ভু কুমার নামে এক প্রাক্তন সেনাকর্মীর অভিযোগ, এই দৃশ্যে সেনাকর্মীদের অপমান এবং তাঁদের পরিবারের অনুভূতিকে আঘাত করা হয়েছে।
অভিযোগ ওঠায় ওই সিরিজ় থেকে দৃশ্যটি ছেঁটে ফেলে ভিডিয়ো বার্তায় ক্ষমা চেয়েছিলেন একতা। কিন্তু বিতর্কিত দৃশ্য বাদ দিলেও তিনি এই মামলায় আদালতে হাজিরা দেননি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
তবে, এই প্রথম বার একতাকে নিয়ে বিতর্ক হয়নি। এর আগেও বহু বার তিনি বিতর্কের মাধ্যমে লাইমলাইটে এসেছেন। কখনও টেলিভিশন ধারাবাহিকের অভিনেত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যে, কখনও আবার সমালোচনার শিকার হয়েছেন পোশাকের কারণে। বিতর্ক যেন তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী।
দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে ১৩০টিরও বেশি ধারাবাহিক প্রযোজনা করেছেন একতা। হাতখরচ মেটাতে ১৫ বছর থেকেই উপার্জন করা শুরু করেন একতা। প্রথমে একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হলেও ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হম পাঁচ’ টেলি সিরিয়াল থেকে তিনি প্রযোজনার রাস্তায় হাঁটা শুরু করেন। তার পর আর একতাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কেরিয়ারের সাফল্যের সিঁড়িতে দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়েছেন তিনি।
‘কিঁউকি সাস ভি কভি বহু থি’, ‘কহানি ঘর ঘর কি’, ‘কুমকুম ভাগ্য’, ‘বড়ে অচ্ছে লগতে হ্যায়’-এর মতো বহু জনপ্রিয় হিন্দি ধারাবাহিক প্রযোজনা করেছেন তিনি। দর্শকমহলকে ছোট পর্দায় বিভিন্ন ধারাবাহিক উপহার দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু প্রযোজক নিজেই বচসায় জড়িয়েছিলেন তাঁর ধারাবাহিকের এক অন্যতম অভিনেত্রীর সঙ্গে।
‘কিঁউকি সাস ভি কভি বহু থি’ ছোট পর্দায় মুক্তি পাওয়ার পর বিপুল সাড়া ফেলেছিল। এই ধারাবাহিকের অভিনেত্রী স্মৃতি ইরানিও তখন জনপ্রিয়তার শিখরে। শুরুর দিকে অভিনেত্রীর সঙ্গে প্রযোজকের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও পরে তা তিক্ততায় পরিণত হয়।
এমনকি, এই তিক্ততার ফলে ইউনিট ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয় স্মৃতিকে। তাঁর বদলে গৌতমী কপূরকে সিরিয়ালে নেওয়া হলেও ধারাবাহিকের টিআরপি নীচের দিকে নামতে শুরু করে।
ছোট পর্দায় সফল হওয়ার পর ২০০১ সালে বড় পর্দাতেও প্রযোজনার কাজ শুরু করেন তিনি। ‘কৃষ্ণা কটেজ’, ‘রাগিনী এমএমএস’, ‘শ্যুটআউট অ্যাট লোখণ্ডওয়ালা’, ‘দ্য ডার্টি পিকচার’, ‘এক ভিলেন’, ‘লুটেরা’র মতো বহু ছবির প্রযোজনার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন একতা।
একতার হাত ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচয় পেয়েছেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত, প্রাচী দেশাই, রাম কপূর, বিদ্যা বালনের মতো বলিউডের বহু নামকরা তারকা।
তবে, তাঁর সঙ্গে কাজ করতে কয়েক জন অভিনেতা আপত্তিও জানান। তাঁদের মতে, একতার প্রযোজনা সংস্থার শর্ত অনুযায়ী পর্দায় অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করতে এবং বিশেষ ধরনের সংলাপ বলতে বাধ্য হতে হয় তারকাদের।
শুধু কর্মজীবনেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও বিতর্কের শিকার হয়েছেন তিনি। কোনও অনুষ্ঠান অথবা সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় একতাকে এমন ধরনের পোশাক পরে দেখা গিয়েছে, যা নিয়ে পাপারাৎজি থেকে সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা কুমন্তব্যের ঝড় তুলেছেন।
একাংশের দাবি, তিনি যে ধরনের পাশ্চাত্য পোশাক পরেন, সেগুলিতে তাঁকে একদম মানায় না। তাঁর সাজগোজও অদ্ভুত ধরনের।
কিন্তু, সফলতার শিখরে থাকা প্রযোজক তাঁর জীবনে এত জাঁকজমক চাননি। ২২ বছর বয়সেই বিয়ে করে এক মধ্যবিত্ত জীবনের স্বপ্ন দেখেছিলেন একতা। ৪৭ বছরে পা দিয়েও এখনও বিয়ে করেননি তিনি।
২০১৯ সালে সারোগেসির মাধ্যমে জন্ম নেওয়া এক সন্তানের মা তিনি। মধ্যবিত্ত জীবনের স্বপ্ন দেখা একতা এখন একাধারে বলিউড ইন্ডাস্ট্রির নামী প্রযোজক এবং ‘সিঙ্গল মাদার’ (একা মা)।