হিন্দি ফিল্মজগতে কেরিয়ার শুরু করেন পরিচালক রাজকুমার হিরানির সঙ্গে। বলিপাড়ার কৌতুকাভিনেতাদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে তাঁর নাম। বর্তমানে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেন তিনি। সেই বোমান ইরানিকেই রোজগারের জন্য ছোটবেলায় হোটেল থেকে শুরু করে দোকানেও কাজ করতে হয়েছে।
১৯৫৯ সালের ২ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম বোমানের। বোমানের জন্মের ছ’মাস পর মারা যান তাঁর বাবা। মা এবং তিন দিদির সঙ্গে থাকতেন বোমান। শৈশব থেকেই আর্থিক অভাবের মুখ দেখেছেন তিনি।
বোমানের বাবার নোনতা খাবার বিক্রির একটি দোকান ছিল। সেই দোকান থেকেই সংসার চলত পাঁচ জনের। ছোটবেলায় ডিসলেক্সিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন বোমান। বোমানের মা চাইতেন যে তাঁর পুত্র উচ্চশিক্ষিত হোক।
মুম্বইয়ের স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ‘ওয়েটার’ হওয়ার জন্য দু’বছরের প্রশিক্ষণ নেন বোমান। স্কুলে পড়াকালীন অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল বোমানের। বহু নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। কিন্তু রোজগারের জন্য চাকরির সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
মু্ম্বইয়ের একটি বিলাসবহুল হোটেলে খাবার পরিবেশনের কাজে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন বোমান। কিন্তু হোটেলের তরফে তাঁকে হোটেলের ঘরে পরিষেবা প্রদানের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল। সেই কাজই নিখুঁত ভাবে করতে শুরু করেছিলেন বোমান।
বোমানের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে হোটেলের মূল রেস্তরাঁর খাবার পরিবেশনকারীর পদে যুক্ত করা হয়। হোটেলে কাজ করার পাশাপাশি ছবি তোলার কাজও করতেন বোমান।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, মুম্বইয়ের কোনও স্কুলে ক্রিকেট বা ফুটবল ম্যাচ হলে সেখানকার ছবি তুলতে যেতেন বোমান। ২০ থেকে ৩০ টাকার বিনিময়ে সে সব ছবি বিক্রি করতেন তিনি। বোমানের মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় দোকানেও বসতেন অভিনেতা। কানাঘুষো শোনা যায়, সেখানে নাকি চা-ও বিক্রি করতেন তিনি।।
আলোকচিত্রশিল্পী হিসাবে কেরিয়ার তৈরি করতে চেয়েছিলেন বোমান। সেই সময়ে ইন্ডিয়ান বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসপি আদাজানিয়ার সঙ্গে আলাপ হয় বোমানের।
মুম্বইয়ে বক্সিং সংক্রান্ত একটি প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা ছিল। আসপার কাছে সেই অনুষ্ঠানে ছবি তুলতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বোমান।
বোমানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আসপা। পরে আসপার অফিসেই কাজ করতে শুরু করেন বোমান। রাজ্য জুড়ে বক্সিংয়ের যে সব প্রতিযোগিতা হত, বোমান সেখানে গিয়ে ছবি তুলতেন। শেষ পর্যন্ত ইন্ডিয়ান বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান আলোকচিত্রশিল্পী পদে নিযুক্ত হন তিনি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বোমান জানিয়েছিলেন অভিনয়জগতে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল এক বন্ধুর কারণে। বোমানের বন্ধু জানতেন যে তাঁর আগ্রহ রয়েছে অভিনয়ের প্রতি। তাই বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের জন্য বোমানকে অডিশন দিতে যাওয়ার কথা বলেন তাঁর বন্ধু।
বন্ধুর কথামতো বিজ্ঞাপনের জন্য অডিশন দেন বোমান। অডিশনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সহজেই উতরে যান তিনি। একের পর এক ১৮০টি বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেন বোমান। বিজ্ঞাপনীজগতে খুব কম সময়ের মধ্যে নিজের পরিচিতি তৈরি করে ফেলেন তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, বিজ্ঞাপনের পর একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান বোমান। সেই ছবির একটি অংশে বোমানের অভিনয় দেখে পছন্দ হয় বলিপাড়ার ছবিনির্মাতা বিধুবিনোদ চোপড়ার।
দু’লক্ষ টাকা পারিশ্রমিকের পরিবর্তে বিধু তাঁর ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দেন বোমানকে। বড় পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়েও প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না তিনি। পরে যখন ছবির পরিচালক রাজকুমার হিরানির সঙ্গে কথা হয় তখন ভরসা পান বোমান।
২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় বোমানকে। এটিই তাঁর কেরিয়ারের প্রথম হিট ছবি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রথমে অমরীশ পুরীকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ছবিনির্মাতারা। অমরীশ সেই প্রস্তাব খারিজ করলে বোমানকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
‘ডরনা মনা হ্যায়’, ‘লক্ষ্য’, ‘ম্যায় হুঁ না’, ‘বীর জ়ারা’, ‘লগে রহো মুন্নাভাই’, ‘খোসলা কা ঘোসলা’, ‘ডন’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘হাউসফুল’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে বোমানকে।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বোমান বলেছিলেন, ‘‘আমি কাজের জন্য দরজায় দরজায় ঘুরেছি। বহু প্রত্যাখ্যানও পেয়েছি। ৪৭ বছর পর্যন্ত আমার নিজের নামে কোনও বাড়ি ছিল না।’’
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বোমান সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘এমনও হয়েছে যে আমি রাতে ঘুমোনোর জন্য শুয়েছি। ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখি খোলা আকাশ। কত বার যে বাড়ির ছাদ সারাই করেছি তার ধারণা নেই।’’
বোমানকে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় ‘ডানকি’ ছবিতে। শাহরুখ খান, তাপসী পান্নু, ভিকি কৌশলের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করেছেন বোমান।
সকল ছবি সংগৃহীত।