২০০০ সালে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন অমিতাভ বচ্চনের পুত্র অভিষেক বচ্চন। তার কেরিয়ারের প্রথম ছবি ‘রিফিউজি’। সে ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। তবে ‘রিফিউজি’ নয়, অভিষেকের প্রথম ছবি হওয়ার কথা ছিল অন্য।
বলিপাড়ার এক খ্যাতনামী পরিচালক অভিষেককে তাঁর কেরিয়ারের প্রথম ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন বচ্চন-পুত্র।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিষেক জানান, একটি হিট ছবির প্রস্তাব খারিজ করেছিলেন তিনি। পরে আমির খান সেই ছবিতে অভিনয় করেন। কেরিয়ারের ঝুলি থেকে হিট ছবি ফস্কে যাওয়ার নেপথ্যকারণ হিসাবেও বলিউডের সেই পরিচালকের কথা উল্লেখ করেন অমিতাভ-পুত্র।
২০০৬ সালে রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘রং দে বসন্তি’। মুক্তির পর এই ছবিটি বক্স অফিসে বিপুল ব্যবসা করে। ‘রং দে বসন্তি’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন আমির খান, আর মাধবন, সোহা আলি খান, শরমন জোশী, অতুল কুলকার্নি, সিদ্ধার্থ, ওয়াহিদা রহমান।
অভিষেক জানান, ‘রং দে বসন্তি’ ছবিতে যে চরিত্রে আমিরকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল সেই চরিত্রে অভিনয়ের কথা ছিল তাঁর। কিন্তু রাকেশের কারণে ওই ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অভিনেতা।
রাকেশ ভাল ভাবে চিত্রনাট্যের খসড়া পাঠ করতে পারেন না বলে জানান অভিষেক। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বে সকলের চেয়ে খারাপ পাঠ করেন রাকেশ। ওঁর সঙ্গে কাজ করলে নিজেদেরই চিত্রনাট্য পড়ে নেওয়া উচিত। কখনওই ওঁকে খসড়া পাঠ করতে বলা উচিত না।’’
অভিষেক জানান, কেরিয়ারের প্রথম ছবিতে রাকেশের সঙ্গে কাজ করার কথা ছিল তাঁর। ‘সমঝওতা এক্সপ্রেস’ নামে একটি ছবির চিত্রনাট্য নির্মাণ করেছিলেন রাকেশ। সেই ছবির মাধ্যমেই বলিপা়ড়ায় পা রাখার কথা ছিল অভিষেকের।
অভিষেক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘‘সমঝওতা এক্সপ্রেস’-এর চিত্রনাট্য নিয়ে বাবার (অমিতাভ বচ্চন) কাছে যান রাকেশ। ছবির প্রযোজনা প্রসঙ্গে আলোচনাও করেন দু’জনে। কিন্তু রাকেশের সঙ্গে ওই ছবিতে কাজই করা হল না।’’
রাকেশ যখন ‘রং দে বসন্তি’ ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে খসড়া পাঠের জন্য অভিষেকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, সে মুহূর্তের কথা সাক্ষাৎকারে ভাগ করে নেন অভিনেতা। অভিষেক বলেন, ‘‘খসড়া পাঠের সময় রাকেশ যে কী বলছিলেন আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এক সময়কাল থেকে অন্য একটি সময়কালে পৌঁছে যাচ্ছিলেন তিনি। শেষে আমি বললাম যে, আমি কিছু বুঝতে পারিনি। আমি অভিনয় করতে পারব না এই ছবিতে।’’
২০০৯ সালে রাকেশের পরিচালনায় ‘দিল্লি ৬’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন অভিষেক। ছবিটি তেমন ব্যবসা করতে না পারলেও মুক্তির কয়েক বছর পর দর্শকের কাছে বহুল প্রশংসা কুড়োয়।
‘দিল্লি ৬’ ছবি প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘‘রাকেশ যখন আমার সঙ্গে ‘দিল্লি ৬’ ছবি নিয়ে কথা বলতে এসেছিলেন, তখন আমি আর কিছু শুনিনি। ওঁকে খসড়া পাঠ করতেও বলিনি। প্রথমেই বলে দিয়েছিলাম আমি এই ছবিতে অভিনয় করব।’’
রাকেশ তাঁর আত্মজীবনী ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার ইন দ্য মিরর’-এ লিখে জানিয়েছিলেন যে, অভিষেক অভিনয় করতে চাননি বলে ‘সমঝওতা এক্সপ্রেস’ ছবির খসড়া পুড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
রাকেশ লিখেছিলেন, ‘‘‘সমঝওতা এক্সপ্রেস’ ছবির শুটিং শুরু হওয়ার আগে অভিষেকের মা (জয়া বচ্চন) আমাকে জানান যে ‘রিফিউজি’ ছবিতেই অভিষেক প্রথম অভিনয় করবেন। তা শোনার পর আমি ছাদে গিয়ে ‘সমঝওতা এক্সপ্রেস’ সংক্রান্ত যাবতীয় নথি, ছবির চিত্রনাট্য, পোশাকের নমুনা-সহ সবকিছুই পুড়িয়ে ফেলেছিলাম।’’
রাকেশের মন্তব্য, ‘‘অমিতাভ বচ্চনের পুত্রের প্রথম ছবি। কেরিয়ারের প্রথম ছবিতে ও কী ধরনের চরিত্রে অভিনয় করছে তা প্রভাব ফেলে। দর্শকের গ্রহণ করার ক্ষমতার উপরেও তা নির্ভর করে।’’
‘সমঝওতা এক্সপ্রেস’ ছবিতে এক জঙ্গির চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল অভিষেকের। রাকেশের মতে প্রথম ছবিতে এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা অভিষেকের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হত না। রাকেশ লিখেছিলেন, ‘‘অভিষেকের মতো বিরাট তারকারা কী ধরনের চরিত্রের মাধ্যমে হিন্দি অভিনয়জগতে পা রাখতে পারেন, সেটাই ভাবি আমি।’’