কয়লা পাচার মামলায় রাজ্যের পূর্ত ও আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের কলকাতা এবং আসানসোলের বাড়িতে হানা দিয়েছে সিবিআই। আগেই সংশ্লিষ্ট মামলায় মলয়কে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কিন্তু তিনি সেই তলব এড়িয়েছেন। এ বার বিভিন্ন তথ্য জানতে মন্ত্রীর একাধিক বাড়িতে হানা দিল সিবিআই। সূত্রের খবর, বুধবার মলয়ের পাঁচটি বাড়িতে গিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল। পাশাপাশি, মন্ত্রীর ডালহৌসির সরকারি আবাসনেও যান ১০-১২ জন সিবিআই গোয়েন্দা। সব মিলিয়ে ছ’জায়গায় যান কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা। তবে মন্ত্রীর যে এতগুলো বাড়ি, সে খবর স্থানীয়দের কাছে ছিল না বলে জানা গিয়েছে।
নিজস্ব চিত্র।
কাজের সূত্রে বেশির ভাগ সময়েই কলকাতায় থাকেন মলয়। তবে সপ্তাহান্তে ছুটির দিন বাড়ি গেলে ওঠেন আপকার গার্ডেনের বাড়িটিতে। হালকা হলুদ রঙের এই বাড়িটি মলয় কেনেন ১৯৯৬ সালে। সস্ত্রীক এখানেই থাকেন তিনি। দোতলা বাড়ির সামনে রয়েছে একটি অফিস ঘর। আসানসোলে থাকলে দলের নেতাকর্মী কিংবা সাধারণ মানুষের সঙ্গে এখানেই দেখাসাক্ষাৎ করেন মন্ত্রী। বাহারি বারান্দা নিয়ে বেশ ছিমছাম বাড়ির আশপাশে গাছগাছালিও প্রচুর রয়েছে। পাশের বাগান মিলিয়ে প্রায় চার কাঠা জমি নিয়ে রয়েছে এই বাড়িটি।
বুধবার মলয়ের আসানসোলের তিনটি বাড়িতে যখন সিবিআই হানা দিচ্ছে, ঘটনাচক্রে তখনই বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে আসানসোলের আদালতে হাজির করানো হয়। মলয়ের বাড়িতে তল্লাশি চলছে কয়লা-কাণ্ডে। অনুব্রত গ্রেফতার হন গরু পাচার মামলায়। সোমবার সকালে আসানসোলে মলয়ের আপকার গার্ডেনের বাড়িতে যায় সিবিআই। পাশপাশি দু’টি বাড়িতে হানার পর চেলিডাঙায় তাঁর পৈতৃক বাড়িতেও যায় সিবিআই।
ফাইল চিত্র।
বুধবার সিবিআই যখন এই বাড়িতে ঢোকে, তখন সেখানে ছিলেন মন্ত্রীর স্ত্রী সুদেষ্ণা ঘটক। তাঁর দাবি, সিবিআই আধিকারিকদের তিনি তদন্তে সহযোগিতা করেছেন। তাঁরা আলমারির চাবি চেয়েছিলেন। তিনি খুঁজে পাননি। পরে নিজেই লোক আনিয়ে তা খোলার ব্যবস্থা করে দেন। তবে আলমারি থেকে তাদের ঈপ্সিত কিছুই সিবিআই পায়নি বলে দাবি করেন তিনি।
ফাইল চিত্র।
তদন্তকাকীরা ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সুদেষ্ণা জানান, তদন্তকারীরা তাঁর সঙ্গে ভীষণ ভাল ব্যবহার করেছেন। বলেন, ‘‘ওঁরা (সিবিআই আধিকারিকরা) বলেন, আপনার ব্যবহার ভীষণ ভাল।’’ তাঁর সংযুক্তি, ‘‘সব দেখে গোয়েন্দারা বলেন, ‘আমরা যা ভেবেছিলাম, এখানে এসে সব উল্টো দেখলাম। অন্যান্য জায়গায় যা দেখেছি তাতে ভাবতে পারিনি যে, এটা একটা মন্ত্রীর বাড়ি হতে পারে।’’
নিজস্ব চিত্র
আপকার রোডের এই বাড়ির ঢিলছোড়া দূরত্বে সবুজ রঙের একটি দোতলা বাড়ি। স্থানীয়দের বেশির ভাগই জানতেন না যে, এই বাড়িটিও মন্ত্রীর। প্রায় তিন কাঠা জমির উপর তৈরি এই বাড়িটি সম্ভবত ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’। তবে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, বিধানসভা ভোটের সময় সায়নী ঘোষ (যুব তৃণমূলের তৃণমূলের সভানেত্রী) এসে এই বাড়িতেই থাকতেন। কলকাতা থেকে এসে সারা দিন প্রচারের পর এখানেই বিশ্রাম করতেন আসানসোল দক্ষিণের প্রার্থী সায়নী। এই দু’টি বাড়িতেই একাধিক পরিচারক রয়েছেন। রয়েছেন দারোয়ানও।
নিজস্ব চিত্র।
মলয়ের পৈতৃক বাড়ি আসানসোলের চেলিডাঙায়। বর্ধিষ্ণু পরিবার। পরিবারের প্রায় সবাই যুক্ত আইনের পেশার সঙ্গে। মলয়ের বাবা-দাদু সবাই ছিলেন আইনজীবী। নিজেও দীর্ঘ দিন আসানসোল আদালতে প্র্যাকটিস করেছেন। এই বাড়িতে এখন থাকেন মন্ত্রীর ভাই অভিজিৎ ঘটক ও তাঁর পরিবার। অভিজিৎও আইনের পেশার সঙ্গে যুক্ত। পাশাপাশি তিনি আসানসোল পুরসভার ঘোষিত ডেপুটি মেয়র। মলয়ের ভ্রার্তৃবধূ মহুয়া ঘটকও আইনজীবী। অভিজিৎ, মহুয়া এবং তাঁদের এক সন্তান এই বাড়িটিতে থাকেন। কালেভদ্রে এখানে আসেন মন্ত্রী। প্রায় পাঁচ-ছ’কাঠা জায়গা নিয়ে তৈরি বাড়িটির আশপাশে বড় বাগান রয়েছে।
নিজস্ব চিত্র।
আসানসোলের পাশাপাশি কলকাতায় মলয়ের একাধিক বাড়িতে অভিযান চালায় সিবিআই। ৫৮/১৮ প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের বাড়ির খানিকটা অংশ নতুন করে তৈরি হচ্ছে। সাদা রঙের ছিমছাম তিন তলা বাড়িটিও মন্ত্রীর বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। লেক কালীবাড়ির কাছে প্রায় পৌনে দু’কাঠা জায়গার উপর তৈরি এই বাড়ি। তবে বেশ কিছু দিন এই বাড়িতে কারও যাতায়াত নেই বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। বুধবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা যাওয়ার পর কাজের লোক এসে চাবি দেন তাঁদের। তিনি জানান, মাঝেসাঝে এখানে আসেন মন্ত্রী।
নিজস্ব চিত্র।
৩৮৭, লেক গার্ডেন্সের বাড়ির সামনে ইংরেজিতে লেখা ‘ঘটকস্’। পাশেই লেখা রয়েছে ‘অভীক ঘটক, আইনজীবী’। মন্ত্রীর ছেলের নাম অভীক। এই বাড়িতেও প্রায়শই যাতায়াত রয়েছে মলয়ের।
নিজস্ব চিত্র।
তবে মন্ত্রী মলয়ের এতগুলো বাড়ির ঠিকানা খুব পরিচিত ছাড়া কেউই জানতেন না। মলয়ের বাড়ি বলতে আসানসোলের আপকার গার্ডেনের ওই বাড়িটিই চিনতেন সবাই। তা ছাড়া পৈতৃক বাড়ির খবরও ছিল। তবে বাকি ঠিকানাগুলি অজানা ছিল।
নিজস্ব চিত্র।