সারা বিশ্বে খাদ্য উৎপাদনের মোট এক-তৃতীয়াংশ নির্ভর করে মৌমাছিদের উপর। এমনটাই দাবি বিজ্ঞানীদের। কিন্তু কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পৃথিবীতে মৌমাছির সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। তাদের রক্ষা করতে অভিনব পন্থা গ্রহণ করেন আমেরিকার জনপ্রিয় অভিনেতা মরগ্যান ফ্রিম্যান।
১৯৩৭ সালে মিশরের মেমফিসে জন্ম মরগ্যানের। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠতম। মরগ্যানের বাবা-মা কর্মসূত্রে অধিকাংশ সময় থাকতেন আমেরিকার শিকাগোয়। মরগ্যানের শৈশব কেটেছিল মিসিসিপিতে ঠাকুরমার বাড়িতে।
শিকাগোয় কাজের সূত্রে গেলেও পরে মরগ্যানের বাবা-মা-সহ পুরো পরিবার আবার মিসিসিপিতে ফিরে যায় এবং সেখানকার গ্রিনউড এলাকায় পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করে।
মিসিসিপিতে ১২৪ একর জমির উপর খামারবাড়ি রয়েছে মরগ্যান পরিবারের। সেই খামারবাড়িকেই মৌমাছির বাড়ি তৈরি করে ফেলেন অভিনেতা।
২০১৪ সালে আমেরিকার আরকানসাস থেকে ২৬টি মৌচাক মিসিসিপির খামারবাড়িতে নিয়ে যান মরগ্যান। খামারবাড়িতে সেগুলি বসানোর ব্যবস্থাও করেন তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি পরিবেশ নিয়েও সচেতন মরগ্যান। মৌমাছির সংখ্যা কমে যাওয়ায় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, এটা বুঝতে পেরে মৌমাছি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন অভিনেতা। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন তিনি।
মরগ্যান জানান, কীটনাশকের অতিরিক্ত প্রয়োগে সারা বিশ্বে মৌমাছির সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় মৌমাছিদের কলোনির সংখ্যায় ৪৪ শতাংশ পতন দেখা দেয়। তাই নিজের খামারবাড়ির ভিতরেই মৌমাছির কলোনি তৈরি করে ফেলেন মরগ্যান।
সাক্ষাৎকারে মরগ্যান জানান, খামারবাড়ির ভিতর প্রচুর ফুলের গাছ লাগিয়েছেন তিনি। ল্যাভেন্ডারের পাশাপাশি ম্যাগনোলিয়া-সহ নানা রকমের সুগন্ধি ফুলের গাছ লাগিয়ে বাগান তৈরি করেন মরগ্যান।
সাক্ষাৎকারে মরগ্যান বলেন, ‘‘খামারবাড়ির ভিতর মৌমাছিদের জন্য আলাদা ভাবে বাগান তৈরি করেছি। বাগান পরিচর্যার জন্য মালিও রয়েছেন। বাগানের যাবতীয় কাজ সামলানোর পাশাপাশি মৌমাছিদের যত্ন নিতেও পারদর্শী তিনি।’’
মৌমাছির কলোনির মধ্যে যাওয়ার সময় কখনও আলাদা করে টুপি বা স্যুট পরেন না মরগ্যান। তাঁর মতে, মৌমাছিরা কখনও তাঁকে কামড়ায় না। তাই তাদের কামড়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য নিজেকে রক্ষার চেষ্টাও করেন না তিনি।
মরগ্যান বলেন, ‘‘আমি তো কোনও দিন মধু সংগ্রহ করতে যাইনি। সব সময় মৌমাছিদের খাবার দিতেই যাই আমি। ওরাও হয়তো বুঝে গিয়েছে যে, আমি ওদের বন্ধু।’’
পাঁচ দশক ধরে হলিউডে একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়ে গিয়েছেন মরগ্যান। তাঁর কেরিয়ারের ঝুলিতে রয়েছে ‘দ্য শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশন’, ‘স্ট্রিট স্মার্ট’, ‘ড্রাইভিং মিস ডেসি’, ‘ইনভিকশাস’, ‘গন বেবি গন’, ‘রেড’, ‘অবলিভিয়ন’, ‘নাও ইউ সি মি’ এবং ‘লুসি’র মতো একাধিক ইংরেজি ছবি।
হলিপাড়ার জনপ্রিয় ছবিনির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলানের ‘দ্য ডার্ক নাইট ট্রিলজি’ ছবিগুলিতে লুসিয়াস ফক্সের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় মরগ্যানকে।
ন’বছর বয়সে স্কুলে পড়াকালীন থিয়েটারের মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেন মরগ্যান। তিন বছর ধরে পড়াশোনার পাশাপাশি নাটকেও অভিনয় চালিয়ে যান তিনি। ১২ বছর বয়সে নাটকের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পর বিশেষ ছাত্রবৃত্তি পান মরগ্যান।
আমেরিকার সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন বলে থিয়েটারে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন মরগ্যান। ১৯৫৫ সাল থেকে চার বছর সেনাবাহিনীতে যুক্ত থাকার পর চাকরি ছেড়ে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন তিনি।
ষাটের দশকে থিয়েটার এবং ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করলেও সত্তরের দশকে ছোট পর্দায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মরগ্যান। নব্বইয়ের দশক থেকে একাধিক সফল ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি। পরিবেশ সচেতনতা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যচিত্রে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন ৮৬ বছরের অভিনেতা।
সকল ছবি সংগৃহীত।