দুবাই। বিশ্বের নামীদামি হোটেল, রেস্তরাঁ, শপিংমল, ঝাঁ চকচকে রাস্তা— কী নেই আরব সাগরের তীরে থাকা এই শহরে। এটিই আরবের সব থেকে বড় এবং জনবহুল শহর। বিত্তশালীদের শহরও বটে। দুবাইয়েই রয়েছে বিশ্বের উচ্চতম ইমারত বুর্জ খলিফা (৮২৮ মিটার)।
দুবাইকে কোটিপতিদের সব থেকে পছন্দের জায়গা বলে মনে করা হয়। তবে খুব শীঘ্রই ‘বিত্তশালীদের শহর’ তকমা হারাতে চলেছে এই শহর। কারণ মাথা তুলছে ‘রাস আল খাইমা’।
‘রাস আল খাইমা’ সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সপ্তম এবং সব থেকে ছোট আমিরশাহি।
মনে করা হচ্ছে ‘রাস আল খাইমা’ই হতে চলেছে আরবের শেখ এবং বিত্তশালীদের পরবর্তী ‘ভূস্বর্গ’। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা শুরু হয়েছে।
পারস্য উপসাগরের পশ্চিম প্রান্তে থাকা রাস আল খাইমায় ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ইমারত তৈরি হয়ে গিয়েছে। আমেরিকার লাস ভেগাসের একটি সংস্থা ৩৯০ কোটি ডলার দিয়ে একটি বিশাল প্রকল্প চালু করেছে এই আমিরশাহিতে।
রাস আল খাইমা এক সময় বিশাল বিশাল পাহাড় এবং সেরামিক সংস্থার জন্য বিখ্যাত ছিল। এখন তা ধীরে ধীরে উচ্চ বিত্তশালীদের আশ্রয়স্থল এবং আমোদকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে বহু হোটেল, রেস্তরাঁ এবং রিসর্ট।
দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাস আল খাইমার যাত্রাপথ ৪৫ মিনিটের। মনোরম পরিবেশের জন্য অনেক দিন ধরেই পর্যটকদের আকর্ষণের জায়গা এটি।
রাস আল খাইমা কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই বিদেশি সংস্থাগুলিকে বিলাসবহুল হোটেল, শিল্প এবং অ্যাডভেঞ্চার পর্যটনের মতো ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
পর্যটন বিশেষজ্ঞদের দাবি, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিনিয়োগের পরিবর্তে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রকল্পের কারণেও অনেক বিত্তশালী রাস আল খাইমাতে বিনিয়োগ করতে পারে। যার ফলে এই শহরটি খুব শীঘ্রই আরবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হবে। যা পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে টেক্কা দিতে পারে দুবাইকেও।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিজিটাল এবং ভার্চুয়াল সম্পদ সংস্থাগুলির জন্যও একটি নতুন এলাকা তৈরি করছে রাস আল খাইমা। বহু আন্তর্জাতিক সংস্থাও ইতিমধ্যেই রাস আল খাইমাতে ব্যবসা শুরুর জন্য নথিভুক্তিকরণ শুরু করেছে।
রাস আল খাইমায় নাকি একটি বিলাসবহুল ভ্রমণতরী সংস্থা বানানোর পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। টেনিস তারকা রাফায়েল নাদাল এবং ফর্মুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়ন ফার্নান্দো আলোনসোর মতো তারকাদের যাতে এই ভ্রমণতরী সংস্থার ক্লায়েন্ট বানানো যায়, তা নিয়েও নাকি পরিকল্পনা চলছে।
আয়তনে বাকি আমিরশাহিগুলির তুলনায় ছোট হওয়ার কারণে অতীতে অনেক বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে রাস আল খাইমা কর্তৃপক্ষকে। বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের ঘোষণা করে তা বাতিলও করে দেওয়া হয়েছিল।
২০১৩ সালে, রাস আল খাইমাতে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগে ফুটবল থিমযুক্ত বিলাসবহুল রিসর্ট তৈরির কথা ঘোষণা করেছিল স্পেনের ফুটবল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি।
তবে দুবাইয়ের মতো শহরের তুলনায় রাস আল খাইমায় অনেক খালি জমি পড়ে থাকায়, এই আমিরশাহিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা শুরু করেছেন কর্তৃপক্ষ।
অনেক আগে থেকেই আরবে আগত পর্যটকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র ছিল রাস আল খাইমা। বর্তমানে প্রশাসন আরও দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, পর্যটকদের উন্নতমানের জীবনযাত্রা এবং পরিষেবা দেওয়া হলে সেখানে ব্যবসার পসার আরও বাড়বে।
পাশাপাশি পশ্চিমি দেশের বিত্তশালীদের নজর কাড়তেও এই শহর নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।
মনে করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যেই রাস আল খাইমাতে বার্ষিক পর্যটকদের ভিড় বর্তমানের তুলনায় চার গুণ বাড়বে। বাড়বে জনসংখ্যাও।
রাস আল খাইমার শাসক হলেন শেখ সৌদ বিন সাকর আল কাসিমি। আপাতত আমিরশাহিকে অর্থনৈতিক ভাবে আরও চাঙ্গা করার দায়িত্ব তিনি কন্যা আমনে আল কাসিমের উপর দিয়েছেন। আমনের হাত ধরেই দ্রুত বদলে যাচ্ছে রাস আল খাইমা।
ছবি: সংগৃহীত।