বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (বিএমসি)। বাণিজ্য নগরী মুম্বইয়ের পুরসভা। সেই পুরসভাতেই দুর্নীতির অভিযোগ। তা-ও আবার খিচুড়ি নিয়ে! পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবার নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে পুরসভার কয়েক জন কর্মীর বিরুদ্ধে।
১ সেপ্টেম্বর বিএমসির কয়েক জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য তৈরি করা খিচুড়ি নিয়ে দুর্নীতি করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে ইকোনমিক অফেন্সেস উইং (ইওডব্লু)। মামলা দায়ের হয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থার মালিক এবং কর্মীদের বিরুদ্ধেও।
অভিযোগ, বিএমসির ওই আধিকারিকেরা পুরসভার বাইরের কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে বিএমসির তহবিল থেকে প্রায় দু’কোটি টাকার প্রতারণা করেছেন। সামগ্রিক ভাবে ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ছ’কোটি টাকার।
বিএমসির এই খিচুড়ি দুর্নীতি আসলে কী? কোভিড আবহে মুম্বইয়ে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিকদের খিচুড়ি বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএমসি। অতিমারির সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে কাজ না থাকার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
কোভিড আবহে পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবার সরবরাহের জন্য যে তহবিল তৈরি করা হয়েছিল সেখানেই কারচুপির অভিযোগ উঠেছে বিএমসির কয়েক জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে। পরিযায়ী শ্রমিকদের খিচুড়ি তৈরির বরাত দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে ডাক দিয়েছিল বিএমসি। অভিযোগ, খাবার তৈরির বরাত অবৈধ ভাবে একটি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
এফআইআরে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল বিএমসির বাইকুল্লা অফিসে একটি সভার আয়োজন করা হয়। মুম্বইয়ের পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবার সরবরাহের জন্য ‘কমিউনিটি কিচেন’ তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয় সেই সভায়।
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যে সংস্থা ৫ হাজার বা তার বেশি খাবারের প্যাকেট তৈরি করতে পারবে, তাদেরই চুক্তির ভিত্তিতে খাবার তৈরির বরাত দেওয়া হবে।
এ-ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, খিচুড়ি তৈরির বরাত কেবল একটি অসরকারি সংস্থাকেই দেওয়া হবে। যে সংস্থাকে বরাত দেওয়া হবে, তাদের কাছে স্বাস্থ্য বিভাগের শংসাপত্র থাকা আবশ্যিক বলেও বিএমসির তরফে জানানো হয়েছিল।
এর পর ‘বৈষ্ণবী কিচেন’ এবং সুনীল ওরফে বালা কদমকে পরিযায়ী শ্রমিকদের খিচুড়ি তৈরির বরাত দেয় বিএমসি।
বিএমসির তরফে ২০২০ সালের ২৮ মার্চ বান্দ্রার শাস্ত্রী নগর এবং মহারাষ্ট্র নগর বস্তিতে বসবাসকারী পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি দিন তিন হাজার খাবারের প্যাকেট সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
যে হেতু শাস্ত্রী নগর এবং মহারাষ্ট্র নগর এলাকায় সব থেকে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক থাকতেন, তাই সেখানেই দিনে দু’বার করে খাবার সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে পরে সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষোভের মুখে পড়ে বিএমসি।
অভিযোগ ওঠে, পরিযায়ী শ্রমিকদের যে খিচুড়ি দেওয়া হচ্ছিল, তার মান খারাপ। তা-ও আবার নিয়মিত দেওয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ জানান তাঁরা। এর পরই পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামে পুলিশ এবং ইওডব্লু।
তদন্তকারী আধিকারিকরা দেখেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবার তৈরির বরাত পাওয়া ওই সংস্থার কাছে পাঁচ হাজার জনের খিচুড়ি তৈরির জন্য উপযুক্ত রান্নাঘরই নেই।
পাশাপাশি, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ৩০০ গ্রাম ওজনের খাবারের দিয়ে প্যাকেট তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বিএমসির তরফে। কিন্তু যে খাবারের প্যাকেট সরবরাহ করা হচ্ছিল, সেগুলির ওজন ছিল ১০০ থেকে ২০০ গ্রামের মধ্যে।
তদন্তে উঠে আসে, বিএমসির কাছ থেকে বরাত পাওয়ার পর ওই সংস্থা আবার অন্য এক সংস্থাকে সেই খাবার তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিল।
ওই সংস্থাকে পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবার সরবরাহের জন্য প্রায় ছ’কোটি টাকা দিয়েছিল বিএমসি। কিন্তু সেই টাকার সিংহভাগই দুর্নীতিতে জড়িতদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করা হয় বলে তদন্তে উঠে আসে।
তদন্ত করার সময় ইওডব্লু-র তদন্তকারী আধিকারিকেরা দেখেন, ওই সংস্থার কাছে স্বাস্থ্য বিভাগ বা ফুড অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কোনও শংসাপত্রও নেই। বরাত পাওয়ার সময় যে শংসাপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল, তা-ও ভুয়ো ছিল।
পুরো বিষয়টিতে বিএমসির কয়েক জন আধিকারিক যুক্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ। তাঁরাই নাকি অভিযুক্ত সংস্থাকে অবৈধ ভাবে সেই বরাত পাইয়ে দিয়েছিলেন।
ছবি: সংগৃহীত।