স্বামী একাধারে জনপ্রিয় ইউটিউবার, তেমনই জনপ্রিয় বডিবিল্ডার, আবার এক জন বিমানচালকও। স্ত্রীও সমান জনপ্রিয়। তিনিও বিমানচালক, তিনিও নেটপ্রভাবী। সেই জনপ্রিয় যুগল গৌরব তনেজা এবং ঋতু রাঠিকে কেন্দ্র করে এ বার তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
গৌরব এবং ঋতুর দাম্পত্য জীবনে নাকি ঝড় উঠেছে। দূরত্ব তৈরি হয়েছে তাঁদের মধ্যে। এ-ও জল্পনা যে, অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে গৌরব নাকি স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করছেন।
যুগলের বিচ্ছেদের জল্পনার আগুন জ্বলে ওঠার পর, তাতে ঘি ঢেলেছিলেন গৌরবই। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘‘পুরুষদের খুব দ্রুত খলনায়ক হিসাবে প্রতিপন্ন করা যায়।’’
আবার একটি ভিডিয়োয় আধ্যাত্মিক গুরু প্রেমানন্দ গোবিন্দ শরণের কাছে বসে মাস্ক পরা এক মহিলাকে সংসার নিয়ে পরামর্শ নিতে দেখা গিয়েছে। জল্পনা ওঠে ওই মহিলা আর কেউ নন, ঋতু। পরে ঋতু নিজেই জানান যে, ভিডিয়োতে যাঁকে দেখা গিয়েছে, সে মহিলা তিনিই।
এর পর সমাজমাধ্যমে সরব হন গৌরব। ইউটিউবার এবং এয়ারএশিয়ার প্রাক্তন বিমানচালক অনুরাগীদের কাছে তাঁর বিবাহিত জীবন নিয়ে কোনও রকম অনুমান না করার আর্জি জানান।
ইনস্টাগ্রামে তিনি লেখেন, “আমি আমার সন্তান এবং তাদের মায়ের জন্য চুপচাপ থাকব। সারা জীবনের জন্য ঘৃণা নিয়ে বাঁচতে প্রস্তুত আমি।’’ জোর দিয়ে আরও বলেন, ‘‘সমাজমাধ্যম পারিবারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জায়গা নয়।’’
গৌরব লেখেন, “পুরুষদের খুব দ্রুত খলনায়ক হিসাবে প্রতিপন্ন করা যায়। আমরা কাঁদি না, আমরা কম কথা বলি এবং কম আবেগ প্রকাশ করি।’’ পাশাপাশি গৌরব জানান, তিনি আশাবাদী যে সব কিছু খুব শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে।
গৌরবের এই বার্তার পর বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে মুখ খোলেন ঋতুও। সোমবার ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে ঋতু জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীকে খারাপ ভাবা যেন বন্ধ হয়।
জল্পনাকারীদের আক্রমণ করে ঋতু বলেন, “স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে একটি ছোট ঘটনা ঘটেছে। স্বামী ভেবেছিলেন তিনি ঠিক, আমি ভেবেছিলাম আমি ঠিক। তিনি একগুঁয়ে। আমিও তাই।’’
পাশাপাশি ঋতু বলেন, ‘‘আমার স্বামী কেমন মানুষ তা কি অন্যেরা আমার থেকে বেশি ভাল জানে? আমি সেই মানুষটার ভিতর এবং বাইরে চিনি। তিনি সঠিক কি না, তিনি অনুগত কি না তা আমার আপনাদের কাছ থেকে শোনার দরকার নেই। আমি আমার স্বামীকে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে দেখেছি। সমাজমাধ্যম থেকে আমার কোনও সমর্থনের প্রয়োজন নেই।
গৌরব এবং ঋতু— উভয়েই জল্পনার আগুনে জল ঢালার চেষ্টা করলেও সেই আগুন পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি। সমাজমাধ্যমে দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে একাধিক দাবি উঠে আসছে। উল্লেখ্য, যাঁকে নিয়ে এত হইচই, যাঁর এত অনুরাগী, এত অনুগামী, আদতে সেই গৌরব কে? কেনই বা এত জনপ্রিয় তিনি?
অনুরাগীদের কাছে ‘ফ্লাইং বিস্ট’ নামে জনপ্রিয় গৌরব। ১৯৮৬ সালে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে জন্ম গৌরবের। বাবা ব্যাঙ্ককর্মী, মা স্কুলের শিক্ষিকা। তাঁর স্কুলজীবন কানপুরেই কেটেছে। তার পরই দুবাইয়ে যান উচ্চশিক্ষার জন্য। সেখানে বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স (বিটস, পিলানি)-এ ভর্তি হন।
কিন্তু গৌরব আরও বড় কিছু করতে চেয়েছিলেন। দুবাই থেকে ফিরে তিনি আইআইটি পরীক্ষায় বসেন ২০০৪ সালে। সারা ভারতে তাঁর র্যাঙ্ক ছিল ১৮৪। তার পর খড়্গপুর আইআইটি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন। শুধু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েই থেমে থাকতে চাননি গৌরব। বিমানচালক হওয়ার প্রশিক্ষণ নেন। এর পর ২০১১ সালে তিনি ইন্ডিগো সংস্থায় পাইলট হিসাবে কাজ শুরু করেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গৌরবের কেরিয়ারও বদলাতে শুরু করে। বিটস থেকে আইআইটি। সেখান থেকে বিমানচালকের চাকরি। তবে চাকরি করলেও মনেপ্রাণে বডিবিল্ডিংয়ের প্রতিই তাঁর আকর্ষণ ছিল।
এর পর বডি বিল্ডিংয়ের দিকে পুরোপুরি ঝুঁকে পড়েন গৌরব। ২০১৩ সালে বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় জেতেন তিনি। তার পর থেকেই বডিবিল্ডিং এবং শরীরচর্চার ছোট ছোট ভিডিয়ো ইউটিউবে শেয়ার করতে শুরু করেন। বিপুল ভিউ এবং অনুরাগীর সংখ্যা দেখে তিনি ফেসবুকেও সেই সব ভিডিয়ো শেয়ার করতে শুরু করেন।
এখান থেকেই তাঁর জীবন সম্পূর্ণ অন্য দিকে মোড় নেয়। তিনি ভ্লগ করা শুরু করেন। ভারতীয়দের মধ্যে যাঁরা ভ্লগিং করে বিপুল জনপ্রিয় হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে গৌরব অন্যতম। ভ্লগিং করে টাকা উপার্জন করতে শুরু করেন।
২০১৬ সালে গৌরব ইউটিউবে নিজের একটি চ্যানেল খোলেন। কী ভাবে শরীর সুস্থ রাখতে হয়, কী কী প্রোটিন খেতে হবে ইত্যাদি, শরীরচর্চা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এই চ্যানেলের মাধ্যমে শেয়ার করা শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তাঁর এই চ্যানেল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
২০১৭ সালে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছন গৌরব। তিনি এই সময় নিজের একটি ভ্লগিং চ্যানেল শুরু করেন। নাম দেন ‘ফ্লাইং বিস্ট’। এই চ্যানেলের মাধ্যমে পাইলট হিসাবে তাঁর জীবন এবং তাঁর ভ্রমণ সংক্রান্ত নানা কাহিনি তুলে ধরেন।
গৌরবের ‘ফ্লাইং বিস্ট’ চ্যানেলটি গ্রাহক প্রায় ৮০ লক্ষ। ২০১৬ সালে গৌরব বিয়ে করেন ঋতুকে। তিনিও একজন বিমানচালক এবং ভ্লগার। তাঁদের দুই সন্তান— কিয়ারা এবং পিহু।
গৌরব নিজেকে সার্টিফায়েড নিউট্রিশনিস্ট হিসাবে দাবি করেন। গৌরবের তিনটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। বলিউডের সঙ্গেও যোগ রয়েছে গৌরবের। অজয় দেবগন, টাইগার শ্রফ, মাধবনের মতো তারকাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে তাঁর।
গৌরবের মতো তাঁর স্ত্রী ঋতুও ইনস্টাগ্রামে জনপ্রিয়। গৌরবের ইনস্টাগ্রাম অনুগামী রয়েছে প্রায় ৩৫ লক্ষ। ঋতুর প্রায় ২০ লক্ষ অনুগামী।
হরিয়ানার বাসিন্দা ঋতু। বিমানচালক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছিল বলে দাবি তাঁর। কিন্তু সেই বাধা সরিয়ে আমেরিকায় পাড়ি দেন বিমান চালনার প্রশিক্ষণের জন্য। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইন্ডিগো সংস্থায় পাইলট হিসাবে যোগ দেন। ইন্ডিগোতে পাইলট হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন গৌরবও। এখান থেকেই তাঁদের প্রেম, বিয়ে। সেই দাম্পত্য জীবনেই এ বার চিড় ধরেছে বলে জল্পনা।
উল্লেখ্য, এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন গৌরব। ২০২২ সালে নয়ডার সেক্টর ৫১ মেট্রো স্টেশনের কাছে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন তিনি। অনুরাগীদের জন্য ভাড়া করেছিলেন মেট্রোর একটি কামরাও। কিন্তু সেই জন্মদিন পালন করতে গিয়েই গ্রেফতার হন গৌরব। যদিও পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা নিয়ে সারা দেশে বেশ চর্চা চলে।
মেট্রো স্টেশনের কাছে ওই পার্টিতে হাজির হয়েছিলেন কয়েকশো অনুগামী। যার জেরে যানজটের সৃষ্টি হয়। শুধু তাই-ই নয়, পুলিশের দাবি, এত লোক একসঙ্গে এক জায়গায় জড়ো হওয়ায় পদপিষ্টের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। পুলিশের দাবি, এই অনুষ্ঠানের জন্য তাদের কাছ থেকে কোনও অনুমতি নেননি গৌরব এবং ঋতু।
ছবি: সংগৃহীত।