আমেরিকার ভোল বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়েছেন সে দেশের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানিয়েছেন, আমেরিকা আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনটি পাবে। আর তার তোড়জোড় ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
আমেরিকাকে নতুন রূপ দিতে নতুন একটি মন্ত্রক খুলে ফেলেছেন ট্রাম্প। নাম দিয়েছেন ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’। সংক্ষেপে ‘ডজ’। সরকারের খরচ কমিয়ে ওয়াশিংটনের কাজকর্মে গতি আনাই হবে এই মন্ত্রকের কাজ।
যদিও এটা স্পষ্ট নয় যে, এই মন্ত্রক ফেডারেল সরকারের মধ্যে থেকে কাজ করবে না কি বাইরে থাকবে। কারণ, আইন ছাড়া কোনও সরকারি মন্ত্রক এ ভাবে তৈরি করা যায় না। ট্রাম্পও ইঙ্গিত দিয়েছেন, সরকারের বাইরে থেকে একটি উপদেষ্টা কমিশন হিসাবে কাজ করবে ডজ।
ট্রাম্প এ-ও ঘোষণা করেছেন, ডজের মাথায় তিনি বসাচ্ছেন ধনকুবের বন্ধু ইলন মাস্ক এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত উদ্যোগপতি বিবেক রামস্বামীকে। সেই বিবেক, যিনি প্রাথমিক পর্যায়ে রিপাবলিকান পার্টির অন্যতম প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন।
অন্য দিকে, ট্রাম্প সরকারে ইলনের প্রবেশ এক রকম পাকা হয়েই ছিল। ভোটের আগে ট্রাম্পের সমর্থনে গলা ফাটিয়ে ইলন জানিয়ে দিয়েছিলেন, হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন হলে তিনি প্রশাসনিক দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।
ইলনকে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্বে যুক্ত করা হবে সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ট্রাম্পও। সেই ইঙ্গিতেই এ বার সিলমোহর দিলেন আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ইলনের মালিকানাধীন সংস্থা ‘এক্স’-এর হ্যান্ডল থেকে পোস্ট করে তিনি এই ঘোষণা করেন।
ডজকে নতুন যুগের ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট’ বলেও অভিহিত করেছেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পরমাণু বোমা তৈরির জন্য আমেরিকার গোপন প্রকল্পের নাম ছিল ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট’।
এই মন্ত্রক নিয়ে আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন ট্রাম্প, ইলন এবং বিবেকের অনুগামীরা। কিন্তু একই সঙ্গে প্রমাদও গুনতে শুরু করেছেন অনেক আমেরিকাবাসী। তৈরি হয়েছে একসঙ্গে অনেক চাকরি ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে ইলন এবং রামস্বামীকে আমেরিকার ‘জোড়া আতঙ্ক’ বলেও মনে করছেন অনেকে।
ইলন এবং রামস্বামীকে নিয়োগের পর ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সরকারের বাড়তি খরচ কমাতে, সরকারি আমলাতন্ত্রকে ভাঙতে, অতিরিক্ত নিয়ম কমাতে এবং ফেডারেল সংস্থাগুলি পুনর্গঠন করতেই ডজ তৈরি করা হচ্ছে।
আর তাতেই টনক নড়়েছে অনেকের। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে ইলন এবং বিবেক দু’জনেই বাইডেন সরকারে অতিরিক্ত খরচের বহর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
দু’জনেই দাবি করেছিলেন, আমেরিকার ফেডেরাল বাজেটে এমন বিভিন্ন বিষয়ে অর্থ বরাদ্দ করা হয়, যাতে আমেরিকার কোনও লাভ হয় না।
এমনকি যে সব মন্ত্রক কাজের নামে ‘অষ্টরম্ভা’, তেমন অনেকগুলি বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শও তাঁরা দিয়েছিলেন।
ইলনের থেকেও এককাঠি উপরে গিয়ে বিবেক শিক্ষা মন্ত্রক এবং এফবিআই বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি তাঁদের মত ছিল, কাজ না করলে সরকারি পদ ধরে রাখার অধিকার কারও নেই।
সেই দু’জনকেই বসানো হয়েছে ডজের মাথায়, যে ডজ তৈরিই করা হয়েছে ওয়াশিংটনের খরচ কমানোর জন্য। একই সঙ্গে জল্পনা তৈরি হয়েছে, ইলন এবং রামস্বামীর পরামর্শে বহু সরকারি মন্ত্রক থেকে কর্মী ছাঁটাই করা হতে পারে। সরিয়ে দেওয়া হতে পারে এক লক্ষের বেশি কর্মীকে।
মনে করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের ৪ জুলাই, অর্থাৎ আমেরিকার স্বাধীনতার ২৫০ বছর পূর্তির আগেই সরকারের বাড়তি খরচ কমানো এবং সরকারি আমলাতন্ত্রকে ভেঙে দেওয়ার কাজ শেষ করে দিতে পারে ডজ। কিছু ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ সরকারি কর্মীকেও সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।
অন্য দিকে, ইলনকে এ ভাবে ডজের মাথায় বসানো নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৮ সাল থেকে থেকে শুরু করে বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দু’হাজার কোটি ডলার নিয়েছে ইলনের সংস্থা স্পেসএক্স।
এ ছাড়াও ইলনের বহু সংস্থা আমেরিকার সরকারি তদন্তকারী সংস্থাগুলির নজরদারির আওতায় রয়েছে বহু দিন ধরে। অনেক অভিযোগও উঠেছে।
এখন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মাস্ক নিজে এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ায় তাঁর মালিকানাধীন বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষ করে স্পেসএক্সের মতো সংস্থার উপর সরকারের নিয়ন্ত্রক চাপ এবং নজরদারি কমতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।
পাশাপাশি জল্পনা উঠেছে ডজ যদি আমেরিকার সরকারি আমলাতন্ত্র ভেঙে দিতে সক্ষম হয়, তা হলে তদন্তকারী সংস্থাগুলির নজরের আওতার বাইরেও বেরিয়ে যেতে পারে মাস্কের সংস্থাগুলি।
আবার কয়েকটি মহলের দাবি, আমেরিকার প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার যে সুযোগ ইলন পেয়েছেন, তার অপব্যবহারও করতে পারেন তিনি। যার ফলে ইলন অন্য ব্যবসায়িক সংস্থার থেকে নিজের সংস্থাগুলিকে বেশি সুবিধা পাইয়ে দিতে পারেন বলেও জল্পনা উঠেছে।
সব ছবি: সংগৃহীত।