আকাশপথে উড়ে এল গোটা হাসপাতাল। তার পর প্যারাসুটে বেঁধে নামিয়েও দেওয়া হল। সেই অত্যাধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাও চলল! শুনতে অবাক লাগলেও সম্প্রতি এমনই বেনজির ঘটনার সাক্ষী থাকল ভারত।
ভারতীয় বায়ুসেনার সহায়তায় স্থানান্তরযোগ্য হাসপাতালের ভাবনাকে বাস্তবায়িত করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। গত ১৪ মে আগরায় ঘটেছে এই অভাবনীয় ঘটনাটি। বায়ুসেনার এএন-৩২ বিমানে করে উড়িয়ে আনা হয় স্থানান্তরযোগ্য হাসপাতালটিকে। এটাই বিশ্বের প্রথম ‘এয়ারলিফ্ট’ হাসপাতাল।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ওই হাসপাতালের ওজন প্রায় ৭৫০ কেজি। সেই ওজনের হাসপাতালটি উড়িয়ে এনে ১৫০০ ফুট উপর থেকে প্যারাসুটে চাপিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয় আগরার মালপুরা এলাকায়।
ভারতে এমন অনেক দুর্গম এলাকা রয়েছে, যেখানে বসবাসের জন্য ন্যূনতম পরিষেবাটুকু নেই। অসুখ করলে মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছতে হয়। যাত্রাপথে অনেক সময় মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটে। সেই সমস্যার সমাধান করবে এই ‘পোর্টেবল’ হাসপাতাল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও এই হাসপাতালের সুবিধা মিলবে।
‘পোর্টেবল’ হাসপাতালটি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ভীষ্ম’ প্রকল্পের অন্তর্গত। ‘ভীষ্ম’ অর্থাৎ ‘ভারত হেল্থ ইনিশিয়েটিভ ফর সহযোগ, হিত অ্যান্ড মৈত্রী’ প্রকল্প নিয়ে আশাবাদী কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
১৪ মে আগরায় যে প্যারাসুটে চাপিয়ে ‘পোর্টেবল’ হাসপাতালটিকে স্থাপন করা হয়েছিল, তার নকশা করেছিল ‘এয়ার ডেলিভারি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্ট্যাবলিশমেন্ট’ (এআরডিআই)। হাসপাতালটি ঘনকাকার। জরুরি পরিস্থিতিতে উন্নত মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্য এমন নকশা বানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন এআরডিআই কর্তৃপক্ষ।
বায়ুসেনার তরফে বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দুর্গম এলাকায় এই ‘পোর্টেবল’ হাসপাতাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে।
‘পোর্টেবল’ হাসপাতালের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আরোগ্য মৈত্রী এড কিউব’। এতে তাঁবু এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত ৭২টি ছোট ছোট ‘কিউব’ বা খাঁচা রয়েছে। এই হাসপাতালে ২০০ জন রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব।
প্রতিটি খাঁচার ওজন ১৫ কেজির নীচে। এই খাঁচার প্রত্যেক দিকের দৈর্ঘ্য ৩৮ সেন্টিমিটার। খাঁচাগুলিকে একত্র করে গোটা হাসপাতালের রূপ দিতে কমপক্ষে পাঁচ জন প্রশিক্ষিত লোকের প্রয়োজন।
কী থাকবে এই ‘আরোগ্য মৈত্রী এইড কিউবে’? সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এতে থাকবে ভেন্টিলেটর, সোলার প্যানেল-ভিত্তিক জেনারেটর, আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন, হাই-মাউন্টেড ওটি লাইট, অত্যাধুনিক অস্ত্রোপচারের যন্ত্র, স্টেচার, পোর্টেবল ল্যাবরেটরি-সহ একাধিক সরঞ্জাম।
জানা যাচ্ছে, ৭২টি খাঁচার মধ্যে ৬০টিতে চিকিৎসা সরঞ্জাম সজ্জিত থাকবে। বাকিগুলোতে থাকবে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর মতো পণ্য।
‘ভীষ্ম’ প্রকল্পের প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল তন্ময় রায়ের মতে, ‘‘খাঁচাগুলিতে কী কী থাকবে তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত এলাকায় চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তা না-ও লাগতে পারে। তাই পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুযায়ী চিকিৎসার সরঞ্জাম থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবর্তিত হবে।’’
‘ভীষ্ম’ প্রকল্পের অধীনে এই হাসপাতাল দেখে অভিভূত মাইক্রোসফ্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি।
শুধু তা-ই নয়, ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করার ইচ্ছাপ্রকাশও করেছেন বিল। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, এই উদ্যোগে তাঁর ফাউন্ডেশন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে মিলে কাজ করতে চায়।
কেন্দ্রের এই উদ্যোগ এখনও পরীক্ষামূলক অবস্থায় রয়েছে। তবে খুব শীঘ্রই এই ‘পোর্টেবল’ হাসপাতাল দেশের সর্বত্র চালু হয়ে যাবে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।