পৃথিবীতে যত ধরনের সুরা পাওয়া যায়, তার মধ্যে অন্যতম ওয়াইন। বলা হয়, যে ওয়াইনের বয়স যত বেশি, তার স্বাদও ততই বেশি। ওয়াইনের বোতলের দামও নির্ধারিত হয় তার বয়সের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, যে ওয়াইন যত পুরনো, সেই ওয়াইনের দাম তত বেশি।
তবে শুধু এখন নয়, বহু যুগ আগে থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ওয়াইন পান করার চল রয়েছে। কিন্তু পাঁচ হাজার বছর আগেও নাকি ওয়াইন খাওয়ার চল ছিল! অন্তত তেমনটাই দাবি ভিয়েনার এক দল গবেষকের।
ওই গবেষকদের দাবি, মিশরের অ্যাবিডোসে তাঁরা পাঁচ হাজার বছরের পুরনো ওয়াইনের বেশ কয়েকটি বয়াম খুঁজে পেয়েছেন।
ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক ক্রিশ্চিয়ানা কোহলারের নেতৃত্বে মিশরের অ্যাবিডোসে রানি মেরেট-নিথের সমাধিস্থলে গবেষণা চালাচ্ছিল একটি দল। তখনই এই বয়ামগুলি উদ্ধার হয়।
রানি মেরেট-নিথকে মিশরের ‘প্রথম মহিলা ফারাও’ বলে মনে করেন অনেকে। ইতিহাস বলছে, রানি মেরেট-নিথ ছিলেন সে যুগে মিশরের অন্যতম শক্তিশালী মহিলা।
অ্যাবিডোসের যে জায়গায় মেরেট-নিথকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল, তার আশপাশে আর কোনও সমাধিস্থল নেই। মনে করা হচ্ছে, প্রভাব-প্রতিপত্তির জন্যই মেরিট-নিথকে পৃথক সমাধিতে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।
ইতিহাসবিদদের অনুমান, প্রায় তিন হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে, রানি মেরেট-নিথকে অ্যাবিডোসে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। ইতিহাস খুঁজে বার করতে সেই সমাধিস্থলই খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চালাচ্ছিল ক্রিশ্চিয়ানার দল।
মেরেট-নিথের ওই সমাধিস্থল থেকেই পাঁচ হাজার বছরের পুরনো ওয়াইন খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বলে ক্রিশ্চিয়ানা এবং বাকি গবেষকরা জানিয়েছেন।
গবেষকরা যখন রানি মেরেট-নিথের সমাধিক্ষেত্রে অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন, তখন তাঁদেরই এক জন একটি বয়ামে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান।
এর পর ওই বয়ামের আশপাশে আরও অনেকগুলি বয়াম খুঁজে পান গবেষকরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, বয়ামগুলি আর কিছু নয়—রানি মেরেট-নিথের আমলের ওয়াইনের বয়াম।
গবেষকরা জানিয়েছেন, বয়ামগুলি খুব ভাল ভাবে সংরক্ষিত ছিল। রানি মেরেট-নিথের সমাধিস্থলে খুঁজে পাওয়া পাঁচ হাজার বছর আগের ওই ওয়াইনের গুণমান অনেক ভাল ছিল বলেও মনে করছেন গবেষকরা।
ক্রিশ্চিয়ানা জানিয়েছেন, ওয়াইনের বয়াম-সহ আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ওই সমাধি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বলেও জানিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানা।
ক্রিশ্চিয়ানার কথায়, ‘‘আমার দল যে শুধু ওয়াইনের বয়াম খুঁজে পেয়েছে তা নয়, প্রচুর জৈব অবশিষ্টাংশ, আঙুরের বীজ, স্ফটিক খুঁজে পেয়েছি। সব কিছু নিয়েই বর্তমানে বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।’’
সংবাদমাধ্যম ‘মেট্রো’কে তিনি বলেন, ‘‘ওয়াইনের বয়ামগুলি অক্ষত থাকলেও ভিতরের ওয়াইন তরল অবস্থায় ছিল না। তাই ওই বয়ামগুলিতে লাল ওয়াইন ছিল না সাদা ওয়াইন ছিল, তা আমরা হলফ করে বলতে পারি না।’’
ক্রিশ্চিয়ানা জানান, প্রাচীন কালেও ওয়াইনের প্রচলন ছিল, এই বয়ামগুলি তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ।
ক্রিশ্চিয়ানা এবং তাঁর গবেষক দলের অনুমান, রানি মেরেট-নিথের ওই সমাধিস্থল বহু বছর ধরে তৈরি করা হয়েছিল। সমাধিস্থলে অনেকগুলি ধাপ ছিল বলেও তাঁরা জানিয়েছেন।
ছবি: সংগৃহীত।