Independence day Special

স্বাধীনতা কাকে বলে? রাত দখলের পরের দিবসে সুরক্ষার দাবিই আবার তুললেন নারীরা

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে গর্জন ছড়িয়েছে কলকাতা ছাড়িয়ে বসিরহাট-বোলপুরের মতো বাংলার নানা কোণে। মু্ম্বই-দিল্লি-গুয়াহাটির মতো বাংলার বাইরের বহু শহরে। জমায়েত হয়েছে দেশের বাইরেও। স্বাধীনতার নতুন দিবস এ বছর তাই আলাদা।

Advertisement
সুচন্দ্রা ঘটক
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৪ ১০:১৬
Women want protection and security on Independence Day after R G Kar Medical College incident

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

স্বাধীনতা দিবস বছর বছর আসে। এ বছরটা তবু আলাদা। স্বাধীনতার দাবিতে পথে নেমেছিলেন নারীরা। গোটা বাংলার অসংখ্য নারী। সূর্য ওঠার আগে পর্যন্ত চলেছে আন্দোলন, রাত দখলের লড়াই। রাতের কলকাতা তার সাক্ষী থেকেছে। যাদবপুর থেকে নাগেরবাজার, অ্যাকাডেমি চত্বর থেকে শ্যামবাজার মোড়— নানা প্রান্তে মধ্যরাত পর্যন্ত ছিল প্রতিবাদের জোয়ার। গর্জন ছড়িয়েছে কলকাতা ছাড়িয়ে বসিরহাট-বোলপুরের মতো বাংলার নানা কোণে। মু্ম্বই-দিল্লি-গুয়াহাটির মতো বাংলার বাইরের বহু শহরে। জমায়েত হয়েছে দেশের বাইরেও। স্বাধীনতার নতুন দিবস এ বছর তাই আলাদা।

Advertisement

সম্প্রতি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পরে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিকেরা। প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই পথে নেমেছেন চিকিৎসক থেকে সাধারণ, নানা জনে। সারা রাত নানা স্লোগানে ভেসেছে বিভিন্ন প্রান্ত। দাবি স্বাধীনতার। সুরক্ষার। সম্মানজনক যাপনের।

Women want protection and security on Independence Day after R G Kar Medical College incident

মেয়েদের সুরক্ষার দাবিতে অনেকেই নেমেছেন পথে। ছবি: এএফপি।

এ সবের মাঝেই পথে-ঘরে-দফতরে প্রশ্ন উঠেছে, মেয়েরা কী চায়? স্বাধীনতা আবার কী? কেউ বলেছেন, সোনাগাছির মেয়েরা কেন পোস্টার দিচ্ছেন? তাঁদের আবার রাতের দখল নিয়ে চিন্তা কী? কেউ বলেছেন, মেয়েরা কত রাত পর্যন্ত পার্টি করে রিল বানানোর স্বাধীনতা চায়? এ সব করে লাভ কী হবে? তার উত্তর দিতেও পিছপা নন নারীরা। নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত মেয়েরা নিজের অবস্থান থেকে সুরক্ষার স্বাধীনতা নিয়ে ওঠা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন মনে করেন, স্বাধীনতা তখনই আসবে, যখন সব স্তরের মানুষ সুরক্ষিত বোধ করবেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি কে, আমি কী করি, আমার লিঙ্গপরিচয় এবং যাবতীয় পরিচয়, যা জন্মসূত্রে বা নিজের জীবনযাপনের সূত্রে বহন করছি, সে সমস্ত নিয়ে যেন মাথা ‌উঁচু করে সুরক্ষিত থাকতে পারি। এটাই আমার কাছে স্বাধীনতা।’’

মাথা উঁচু করে নিজের কাজ সেরে নিশ্চিন্তে নিজের বাড়ি ফেরার স্বাধীনতার দাবি জানাচ্ছেন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সুলগ্না রায়। তিনি বলেন, ‘‘আমার অনেক রাত হয় কাজ শেষ করতে। সারা রাত মা জেগে থাকেন। আমাদের চারপাশটা যদি সুরক্ষিত হত, আমার মাকে সারা রাত জেগে থাকতে হত না।’’ সুলগ্নার কাছে স্বাধীনতার সংজ্ঞা সরল। তিনি বলেন, ‘‘মায়ের নিশ্চিন্ত ঘুমই আমার কাছে স্বাধীনতা। যে দিন আমি স্বাধীন হব, সে দিন আমার মা-ও রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোবে।’’

Women want protection and security on Independence Day after R G Kar Medical College incident

এমন পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছে চারদিক। ছবি: এক্স।

নারীদের রাত দখলের আন্দোলনের কথা শুনে বহু জনেই নানা কথা বলেছেন। সে সব দেখে বিরক্ত কেউ কেউ। চলচ্চিত্রকার দেবলীনার যেমন কাজ শুরুর সময়ের কথা মনে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘‘এক বার কাজের মাঝে এক জন স্পট বয় আমার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন। তার পর তাঁকে বললাম, এমা এটা করলেন! তিনি বললেন, ‘এই ক্যামেরার সামনেও যদি মাথা নোয়াতে হয়, তবে কী বলব!’ তখন কিন্তু আমার ক্যামেরা চলছে।’’ দেবলীনার মনে হয়, অধিকাংশ পেশাতেই এখনও মেয়েদের মেনে নেওয়া হয় না। শুধু শিক্ষিকা, অভিনেত্রী— এমন কিছু কিছু পেশায় কিছুটা জায়গা পান নারীরা। নিজের মতো কাজ বেছে নেওয়া ও তা করার সুযোগকে দেবলীনার স্বাধীনতা বলে মনে হয় তাই এখনও।

একটি রাতে মেয়েরা পথে নামলেন, তাই এ বারের স্বাধীনতা দিবস আলাদা হল। কিন্তু তা আলাদা তো হল শুধুই মেয়েদের কাছে, মনে করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবীবিদ্যার অধ্যাপক ঐশিকা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতা দিবস কি শুধু এ বার মেয়েদের কাছে আলাদা হল নাকি? সে তো সব সময়েই আলাদা। মেয়েদের শরীরের উপর দিয়ে সব সময়েই বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে, যত বারই পতাকা উঠুক, আমরা স্বাধীন নই। আমাদের রাতের বেলা বাইরে যেতে হবে না, আমরা ঘরের মধ্যেও স্বাধীন নই। একটি শিশু তার সবচেয়ে কাছের মানুষের লালসার থেকে স্বাধীন নয়, এক জন স্ত্রী স্বাধীন নন, মা স্বাধীন নন, প্রায় কোনও নারীই স্বাধীন নন।’’ শুধু যে রাতের অন্ধকারে বাইরে থাকার স্বাধীনতা প্রয়োজন, তা কিন্তু নয়। মেয়েদের শরীরের উপর আক্রমণ করে বার বার বোঝানো হয়েছে যে, মেয়েদের কিন্তু দিনে বা রাতে, ঘরে বা বাইরে স্বাধীনতার কোনও অধিকার নেই, মনে করান ঐশিকা। সেই অধিকারের দাবি তুলতে পারাও স্বাধীনতা বহু নারীর জন্য। সেই স্বাধীনতার প্রসঙ্গ তুলতে অনেকেই এগিয়ে এলেন।

আরও পড়ুন
Advertisement