ছবি : সংগৃহীত।
মরসুম বদলের সময় যখন ঘরে ঘরে জ্বর-জ্বালা, হাঁচি-কাশির বহর বাড়ছে, তখন খাস কলকাতা শহরে পাওয়া গেল করোনাভাইরাসের একটি অচেনা রূপ! যার নাম বিটাকরোনাভাইরাস হংকোনেন্স।
গত বৃহস্পতিবার ওই ভাইরাসে আক্রান্ত এক মহিলাকে দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মহিলা গড়িয়ার বাসিন্দা। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে টানা ১৫ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। জ্বরের ওষুধ খেয়েও কোনও কাজ হয়নি তাঁর। জ্বর কমার বদলে বেড়ে যায়। তার পরেই তাঁকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। সেখানেই ভাইরাসের পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওই মহিলা বিটাকরোনাভাইরাস হংকোনেন্সে আক্রান্ত। যা হিউম্যান করোনাভাইরাস বা এইচকেইউ১ নামেও পরিচিত।
স্বাভাবিক ভাবেই এই খবরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই ভাইরাসও কি কোভিডের মত মারাত্মক আকার নিতে পারে? আক্রান্ত হলে কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে? কতটা সাবধান হওয়া জরুরি? আনন্দবাজার ডট কম সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দ্বারস্থ হয়েছিল চিকিৎসকদের। তাঁরা বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু না হলেও সতর্ক অবশ্যই হওয়া উচিত। কেন সতর্ক হওয়া উচিত, তার কারণও ব্যখ্যা দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
কোভিডের মতো?
করোনা ভাইরাসের এই রূপ অর্থাৎ এইচকেইউ১-এর সঙ্গে কোভিডের কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। পূর্ব বর্ধমানের উপ মুখ্য জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবর্ণ বলছেন, ‘‘করোনা ভাইরাস বহু দিন ধরেই রয়েছে পৃথিবীতে এবং ভারতেও। ওই ভাইরাসে কোভিডের আগেও আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। যে ভাইরাসটি ধরা পড়েছে, তার সঙ্গে করোনা ভাইরাসের ‘কোভিড ১৯’ রূপের কোনও সম্পর্ক নেই। হিউম্যান করোনাভাইরাস একটি নন কোভিড করোনাভাইরাস।’’ এইচকেইউ১-এর সঙ্গে কোভিডের কোনও মিল যে নেই, তা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুদারও বলছেন। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা ভাইরাসের নানা রূপ মাঝে মধ্যেই রোগীর শরীরে পাওয়া যায়। কিন্তু সেই সব রূপই আতঙ্কিত হওয়ার মতো নয়। দেখতে হবে, কোন ভাইরাস কতটা ছড়াতে পারে। কোভিড যেমন অত্যন্ত সংক্রামক ছিল, হিউম্যান করোনাভাইরাস তা নয়।’’
সতর্ক কেন হওয়া উচিত?
হিউম্যান করোনাভাইরাস যদি কোভিডের মতো সংক্রামক না হয়ে থাকে, তবে সতর্ক হতে হবে কেন?
১। চিকিৎসক সুবর্ণ বলছেন, ‘‘সাধারণত হিউম্যান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার পড়ে না। তবে কারও যদি কোমর্বিডিটি থাকে, তা হলে হাসপাতালে যাওয়ার দরকার হতে পারে। কারণ, তাঁদের ক্ষেত্রে ভাইরাস ফুসফুসে সংক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।’’
২। সেটা যেমন একটা কারণ, তার পাশাপাশি আরও একটি বিষয়ের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সুবর্ণ। তিনি বলেছেন, হিউম্যান করোনাভাইরাসেরও নানা রূপ আছে। সব রূপ সমান নয়। বিটাকরোনাভাইরাস হংকোনেন্স যেমন ২০-২২ বছর আগে হংকংয়ে প্রথম দেখা গিয়েছিল। ভারতে এই ভাইরাস সচরাচর দেখা যায় না। আর সে কারণেই আগাম সতর্ক হওয়া ভাল।’’
৩। চিকিৎসক অরুণাংশুও বলছেন, ‘‘হিউম্যান করোনাভাইরাসটির এই রূপটি এর আগে এখানে আসেনি। তাই ওই ভাইরাসের উপরে নজর রাখতে হবে। ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরে কী কী সমস্যা হচ্ছে? তা কত দ্রুত ছড়াচ্ছে? কতটা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন মানুষ? এই সব কিছু দেখলে তবে বোঝা যাবে, ভাইরাসটি কতখানি ক্ষতিকর।’’