Global Warming

বডি ওয়াশে ক্ষতিকারক রাসায়নিক, গান স্ট্রিমিংয়ে মারণ গ্যাস, জেনে নিন বাঁচবেন কী করে?

নিজেদের প্রতিদিনের অভ্যাসে কয়েকটা বদল আনলেই বিশ্ব উষ্ণায়নে আমাদের অবদান কিছুটা কমাতে পারি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৩:৫০
বডি ওয়াশের বদলে বার সাবান ব্যবহার করুন, বলছেন বিজ্ঞানীরা।

বডি ওয়াশের বদলে বার সাবান ব্যবহার করুন, বলছেন বিজ্ঞানীরা।

রোজই একটু একটু বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। কিন্তু তার পিছনে কি শুধুই বড় শিল্প বা দেশের নীতিগত কারণ দায়ী? আমরা প্রত্যেকেই এর জন্য অল্পবিস্তর দায়ী। আমরা নিজেদের প্রতিদিনের অভ্যাসে কয়েকটা বদল আনলেই বিশ্ব উষ্ণায়নে আমাদের অবদান কিছুটা কমাতে পারি। কমিয়ে ফেলতে পারি আমাদের ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’। রইল তেমনই কয়েকটা পথ।

১। স্ট্রিমিং নয়, ডাউনলোড করুন: আপনি কি জানেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আধ ঘণ্টা সিনেমা দেখলে, যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি হয়, তা ১.৬ কিলোগ্রাম কার্বন ডাইঅক্সাইডের সম পরিমাণ? পরিসংখ্যান বলছে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে শুধুমাত্র ‘মিউজিক স্ট্রিমিং’-এর ফলেই বছরে ২০ থেকে ৩৫ কোটি কিলোগ্রাম গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি হয়। এর সঙ্গে আছে সিনেমা বা অন্য ভিডিয়ো স্ট্রিমিং। সব মিলিয়ে স্ট্রিমিং আমাদের পরিবেশের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে। বদলে যদি আপনি ডাউনলোড করে সিনেমা দেখেন বা গান শোনেন, তা হলে তা অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। কারণ তাতে সার্ভারে একবার মাত্র চাপ পড়ে। গ্রিনহাউস গ্যাসের উৎপাদন কমে।
২। বডি ওয়াশ নয়, সাবান: জানেন কি ৩০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে আপনি ০.৩৫ গ্রাম বার সাবান ব্যবহার করেন? সেখানে একই সময় লিকুইড সোপ দিয়ে হাত ধুতে খরচ হয় ২.৩ গ্রাম সাবান। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে জল খরচ হয় প্রায় ৬ গুণ বেশি। তা ছাড়া লিকুইড সোপ তৈরি করতে যে রাসায়নিকের ব্যবহার হয়, তার ফল পরিবেশের উপরও মারাত্মক। বার সাবানের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি কার্বন ফুটপ্রিন্ট বডি ওয়াশ বা লিকুইড সাবানের।
৩। ধরা জলে স্নান: দিনে বেশ কয়েক বার স্নান করেন? শাওয়ার চালিয়ে স্নান করলে প্রতি মিনিটে ৯ লিটারের কাছাকাছি জল খরচ হয়। স্নানের সময় কিছুটা কমালে আপনি জল বাঁচাতে পারেন। তা ছাড়া বালতিতে জল ধরে স্নান করলে, জলের খরচ কমবে। আপনারই ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে।
৪। কলে বাসন মাজবেন না: বাসন না মেজে, সম্ভব হলে ডিশ ওয়াশার মেশিন ব্যবহার করুন। কল চালিয়ে বাসন ধুতে প্রতি মিনিটে ৭ লিটারের কাছাকাছি জল খরচ হয়। সেখানে একবারে ডিশ ওয়াশার মেশিন যাবতীয় বাসন ধুয়ে ফলতে পারে ১৫ থেকে ১৮ লিটার জলে। অর্থাৎ ২ মিনিট কলের তলায় বাসন ধুতে যতটুকু জল লাগে, তা-ই যথেষ্ট। দাম নিয়ে আপত্তি না থাকলে এই যন্ত্র কিনে পরিবেশের উপকার করতে পারেন।
৫। বরফ জমাবেন না: দরকারের সময় ফ্রিজে বরফ জমিয়ে নিন। অন্য সময় বরফ জমানোর অংশটা বন্ধ রাখুন। তাতে ২০ শতাংশের কাছাকাছি বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে। কম উত্তাপ তৈরি হবে। খাবার গরম থাকা অবস্থায় ফ্রিজে রাখবেনও না। ঠান্ডা করে নিয়ে তবেই ফ্রিজে রাখুন। তাতেও পরিবেশের উপকার হবে।
৬। টায়ারে হাওয়া ভর্তি রাখুন: গাড়ির টায়ারে হাওয়া কম মানেই বেশি জ্বালানির ব্যবহার। গ্যাস বা তেলের খরচ অনেকটাই কমিয়ে ফেলতে পারেন টায়ারে হাওয়া ঠিকঠাক রেখে। অহেতুক গতি বাড়ানো বা ব্রেক কষবেন না। তাতেও জ্বালানির খরচ বাড়ে।
৭। স্থানীয় মধু কিনুন: জানেন কি একটা মৌমাছি সারা জীবনে এক চা-চামচের কম পরিমাণ মধু সংগ্রহ করতে পারে। ফলে বড় ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম উপায়ে মৌমাছির প্রজনন করান এবং মধু সংগ্রহ করেন। কৃত্রিম প্রজননের ফলে জন্ম নেওয়া মৌমাছিদের উপর চাপ দেওয়া হয় বেশি মধু সংগ্রহের জন্য। তারা দ্রুত মারাও যায়। পরিবেশের ক্ষতি হয় এই কৃত্রিম প্রজননের ফলে। বরং স্থানীয় জঙ্গল বা গ্রাম লাগোয়া ছোট মধু উৎপাদনকারীদের থেকে মধু কিনুন। তা অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব।
৮। ক্যাকটাস গাছ লাগান: বাড়িতে গাছ লাগাতে ভালবাসেন? কিন্তু জানেন কি টবে জল দিলে, তার অনেকটাই শুকিয়ে বাতাসে মিশে যায়? বরং এমন গাছ লাগান, যাতে কম জল দিতে হবে। ক্যাকটাস বা সাকুলেন্ট জাতীয় গাছ এ জন্য আদর্শ। জল খরচ কমবে। পরিবেশে কম চাপ পড়বে।
৯। কেচে দড়িতে শুকোতে দিন: ওয়াশিং মেশিনে কাচলেন। কিন্তু তারপর জামাকাপড় শুকিয়ে নিন দড়িতে। কারণ ওয়াশিং মেশিনে শুকোতে গেলে বিপুল বিদ্যুৎ খরচ হয়। বাতাসে শুকিয়ে নিলে সেই খরচ কমে। আপনার কার্বন ফুটপ্রিন্টও কমে।
১০। ছোট ছোট বদল: এ সবের পরেও আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে পারেন, যা শক্তির সাশ্রয় করবে। যেখানে সম্ভব, সেখানে গাড়ির বদলে সাইকেল নিয়ে যান। বাড়িতে পুরনো বাল্বের বদলে এলইডি বাল্ব ব্যবহার করুন। এয়ার কন্ডিশনারে তাপমাত্রা একটু বাড়িয়ে রাখুন। এবং অবশ্যই যে ইলেকট্রনিক যন্ত্র কিনছেন, তা কত স্টার-মার্কা, সেটা দেখে কিনুন। যত বেশি স্টার, শক্তির অপচয় তত কম।
আমাদের প্রত্যেকের এমন কয়েকটা পদক্ষেপই হয়ে উঠতে পারে পরিবেশের জন্য বিরাট ব্যাপার। শুধু নিজে নয়, পরের প্রজন্মের ভবিষ্যতের জন্যও পৃথিবীকে হয়তো কিছুটা নিরাপদ করে যেতে পারবেন তা হলেই।

Advertisement
আরও পড়ুন
Advertisement