কোন রোগে এমন হয়? ছবি: ফ্রিপিক।
কোনও দুর্ঘটনায় হঠাৎ মাথায় আঘাত লাগলে স্মৃতি লোপ পেতে পারে। মস্তিষ্কের স্নায়ুজনিত সমস্যা থেকেও এমনটা হয় অনেক সময়ে। সিনেমার পর্দা থেকে বাস্তব জীবন— এমন ঘটনা তো প্রায়ই দেখা যায়। তবে সামান্য মাথা যন্ত্রণা আর ঝাপসা দৃষ্টি থেকে স্মৃতি লোপ পেতে পারে, এমনটা হয়তো কেউ কল্পনাও করতে পারেন না। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন বছর ৬০-এর এক বৃদ্ধা। ঘটনা ২০১৮ সালের।
আমেরিকার লুইজ়িয়ানার বাসিন্দা কিম ডেনিকোলা। স্বামী, সন্তান, নাতি-নাতনি নিয়ে তাঁর সংসার। প্রত্যেক দিনের মতোই ঘটনার দিন স্থানীয় গির্জায় গিয়েছিলেন কিম। সেখানেই বাইবেল পড়ার সময়ে হঠাৎ করে তীব্র মাথার যন্ত্রণা শুরু হয় তাঁর। বই পড়তেও সমস্যা হয় তাঁর। তড়িঘড়ি তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালের ‘এমার্জেন্সি’ বিভাগে ভর্তিও করা হয়। সেখানেই কিছু ক্ষণের জন্য অচৈতন্য হয়ে পড়েন তিনি। যখন জ্ঞান ফেরে তখন ফেলে আসা জীবনের প্রায় ৩০ বছরের স্মৃতি কিমের মস্তিষ্ক থেকে সম্পূর্ণ ফিকে হয়ে যায়। কিম যে দুই সন্তানের মা, সে কথাও মনে করতে পারেন না তিনি। কিম বলেন, “৬০ বছরের জীবন থেকে ফেলে আসা ৩০ বছরের স্মৃতি যে এই ভাবে মুছে যেতে পারে, তা আমি কল্পনাও করতে পারি না। জ্ঞান ফেরার পর, আমার প্রথম মনে পড়ে আমি স্কুল থেকে বেরিয়ে আমার গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলাম।”
হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকারা কিমের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, বর্তমানে কোন সাল তা তিনি মনে করতে পারছেন কি না। কিমের মনে হয়েছে, বর্তমানে তিনি ১৯৮০ সালে রয়েছেন। কিমের সমস্ত লক্ষণ পর্যালোচনা করে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তিনি ‘অ্যামনেশিয়া’ নামক জটিল একটি মস্তিষ্কের স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত। যা ‘ট্রান্সিয়েন্ট গ্লোবাল অ্যামনেশিয়া’ নামেও পরিচিত। ডিমেনশিয়া বা পার্কিনসন্স-এর মতোই এই রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। কাছের মানুষদের চিনতে পারেন না রোগীরা। এমনকি, কিছু ক্ষণ আগে কী খেয়েছেন, তা-ও মনে করতে পারেন না। অ্যামনেশিয়ার ক্ষেত্রে, ফেলে আসা জীবনের নির্দিষ্ট কয়েকটা বছর স্মৃতি থেকে মুছে গেলে তা ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তবে কিম এই বয়সে এসেও তাঁর পরিবারের সহায়তায় নতুন করে বাঁচার রসদ খুঁজছেন। তিনি বলেন, “ফেলে আসা ৩০ বছরের স্মৃতি মুছে যাওয়ার যন্ত্রণা রয়েছে। তবে স্বামী, সন্তান, নাতি-নাতনিদের নিয়ে নতুন নতুন স্মৃতি তৈরি করার আনন্দও রয়েছে।”