প্রতীকী ছবি।
একদিন দল বেঁধে অনেকে মিলে? তার পরে?
তার আর পর নেই। আছে শুধু করোনা। এমনই মনের হাল অধিকাংশের। ভ্রমণপ্রমী বাঙালির মাসের পর মাস ধরে বসে দমবন্ধ হাল। কোনও পাহাড়ে যাওয়া নেই। সমুদ্রে স্নান নেই। কথায় কথায় রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়াও নেই। এমন করে আর কত দিন? একঘেয়েমি কাটানোর উপায় তো চাই!
পথ বার করে ফেলেছেন এ শহরের একদল ভ্রমণপ্রেমী। কী করছেন তাঁরা? ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়াই স্বাদবদলের ব্যবস্থা হচ্ছে। শহরের বাইরে কোথাও যাচ্ছেন না। তাতে ট্রেন-বিমানে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। নিজের গাড়ি হোক কিংবা ভাড়ার, তার ভরসায় ছুটি কাটাচ্ছেন এ শহরেরই কোনও সুন্দর হোটেলে। কেউ কেউ তো আবার সঙ্গে কাজ নিয়েই চলে যাচ্ছেন।
কিন্তু যাচ্ছেন কোথায়? দূরে কোথাও নয়। শহরের মধ্যে হোটেল কিংবা রিসর্টে গিয়েই তাঁরা কাটাচ্ছেন দু’টো দিন। মনের মতো একটা ঘর নিচ্ছেন। সঙ্গী হচ্ছেন পরিবার বা বন্ধুরা। আড্ডা দিচ্ছেন মন ভরে। তাতেই রোজের জীবনের একঘেয়েমি কাটছে। বিশেষ ঘোরাফেরার বিষয় নয় এটি। শুধু বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে অন্য একটি ঠিকানায় দু’দিন কাটিয়ে আসা। তাই একে ‘ভেকেশন’ বলতে চান না কেউ। এমন ভ্রমণ পরিচিত ‘স্টেকেশন’ নামেই। একই শহরে থেকও রোজের জীবনের একঘেয়ে ছন্দে কিছুটা বদল। গৃহবধূ মিলি পাল কিছু দিন আগেই সপরিবার কাটিয়ে এসেছেন আলিপুর অঞ্চলের এক বিলাসবহুল হোটেলে। রাজকীয় ঘর এবং আপ্যায়ন উপভোগ করেছেন দু’দিন ধরে। ফিরে এসে বলছেন, ‘‘মুম্বইয়ের এক বন্ধু এমন একটি সপ্তাহান্ত কাটিয়েছিল সেখানকার হোটেলে। তা দেখেই ভাবলাম আমরাও যাই। দু’টো দিন অন্তত রান্নাবান্নার কথা তো ভাবতে হল না। আর আমার ছেলেও খুশি। বাবা-মায়ের সঙ্গে একটু আনন্দ করতে পারলেন।’’
বিলাসবহুল হোটেলে কি সকলে থাকতে পারেন? তা পারেন না। তবে যাঁরা বেড়াতে গিয়ে বিলাসবহুল হোটেলে থাকার কথা ভাবেন না, এমন অনেকেই এখন ভাবছেন। কারণ এ ক্ষেত্রে দূরে কোথাও যাতায়াতের খরচ নেই। ট্রেন বা বিমানের টিকিটের খরচ নেই। ফলে সবটাই দিচ্ছেন হোটেল ভাড়ায়। যেমন মিলিরা বেহালা থেকে আলিপুর গিয়েছেন নিজেদের গাড়ি করে। আবার আর একদল বন্ধু বারাসত থেকে চলে এসেছিলেন নিউ টাউনের এক হোটেলে। এক বন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে সেখানেই সপ্তাহান্ত কাটিয়েছেন তাঁরা। কেক কেটে, সুইমিং পুলের ধারে বসে মাঝরাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে মন এখন ফুরফুরে। সেই দলের একজন পেশায় ইঞ্জিনিয়র সুজয় ভট্টাচার্য আবার বলছেন, ‘‘এর পরে মা-বাবাকেও নিয়ে যাব ভেবেছি। ওদেরও মন ভাল হবে। রোজ কি আর বাড়ি বসে টিভিতে ধারাবাহিক দেখতে ভাল লাগে!’’
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী রিয়া দত্ত আবার একাই থাকেন এ শহরে। পরিবার বলতে তেমন কেউ নেই। এ সময়ে বন্ধুরা বিশেষ দেখা করতে পারছেন না। তাই মন ভাল থাকে না রিয়ার। গত বছর টানা একা ঘরবন্দি হয়ে অফিসের কাজের চাপ সামলাতে গিয়ে অবসাদে ভোগেন। শেষে ঠিক করেন ঘুরে দাঁড়াতে গেলে নিজের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। এ শহরের প্রায় সব নামী হোটেলে এক-দু’দিন করে থাকা হয়ে গিয়েছে তাঁর। না, এত ছুটি নেই রিয়ার। কাজ করেন মাঝেমধ্যে হোটেলে বসে। বলেন, ‘‘মাঝেমাঝে ল্যাপটপ নিয়ে হোটেলের লবিতে চলে যাই। দু’-চার জন মানুষের মুখ তো দেখা যায় দূর থেকে। সেটাও এখন বড় পাওয়া।’’ শহর ছাড়িয়ে ল্যাপটপ-সহ রিয়া মাঝেমধ্যে চলে যাচ্ছেন একটু দূরেও। ডায়মন্ড হার্বার, রায়চক, সুন্দরবন থেকেও কয়েক দিন করে কাজ করেছেন রিয়া।
একঘেয়ে এই অতিমারির সময়ে এ ভাবেই নিজেদের মন ভাল রাখার ঠিকানা খুঁজছেন একদল বাঙালি। নেটমাধ্যমে সে সব ছবি দেখে নতুন ধরনের ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা করছেন আরও কয়েক জন।