নতুন সাজে ‘অওধ ১৫৯০’। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার বিরিয়ানির স্বাদ কেমন, তা অনেকেই জানেন। কিন্তু লখনউ ঘরানার অওধি বিরিয়ানি কেমন খেতে, তা কলকাতার মানুষকে সে অর্থে প্রথম চেনাল ‘অওধ ১৫৯০’। লখনউয়ের নবাবি খানা তো ‘নেহাত’ পেট ভরানোর খাবার নয়। সে হল আবেগ। বিরিয়ানির সঙ্গে সুদূর লখনউ থেকে সেই নবাবি আমেজ শহরে এনে দিয়েছিল ‘অওধ ১৫৯০’। বিরিয়ানি, কবাব তো বটেই, অন্দরসজ্জা দেখলে মনে হত, যেন এক টুকরো লখনউ উঠে এসেছে কলকাতায়। দেওয়াল জুড়ে কাঠের জাফরির কাজ। আলো-আঁধারির খেলা আর আবহে ঠুংরি, খেয়াল।
বিরিয়ানি খাওয়াতে খাওয়াতে প্রায় এক যুগ কেটে গিয়েছে। কলকাতায় অওধি রেস্তরাঁর দশটি নতুন শাখাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। তবে, প্রথম যে শাখাটি দিয়ে বিরিয়ানি জগতে পথ চলা শুরু করেছিল এই রেস্তরাঁটি, সেখানে কিছু বদল এসেছে। লখনউ ঘরানার সঙ্গে হাল ফ্যাশনের সেরামিকের অদ্ভুত মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন কর্ণধারদ্বয় শিলাদিত্য এবং দেবাদিত্য চৌধুরীরা। আলো-আঁধারির খেলাও এখন আর নেই। বদলে অওধি বিরিয়ানিপ্রেমী মানুষের কথা ভেবে আরও খোলামেলা হয়েছে রেস্তরাঁটি। শিলাদিত্য জানান, “রাস্তার দিকটা এত দিন কাঠ দিয়ে ঘেরা ছিল। এখন আমরা তা কাচে বদলে দিয়েছি। ফলে ভিতরটা আরও খোলামেলা লাগছে।”
রেস্তরাঁর টেবিলে এক সময়ে সাজানো থাকত ব্রোঞ্জে়র বাসনপত্র। এখন সেই জায়গা দখল করেছে বোনচায়নার প্লেট। তবে লখনউয়ের ঐতিহ্য তাঁরা অক্ষত রেখেছেন। শিলাদিত্যের কথায়, “প্লেট কাচের হতে পারে। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন, প্লেটের গায়ে লখনউয়ের বিখ্যাত রুমি দরওয়াজার আদলে নকশা করা আছে।” মেহগনি কাঠের অন্দরসজ্জা ছেড়ে নতুন ‘অওধ ১৫৯০’ রেস্তরাঁ মন দিয়েছে সাদা দেওয়াল এবং উজ্জ্বল আলোর দিকে।
বদল এসেছে আবহেও। লখনউয়ের বিরিয়ানি খেতে খেতে এক সময়ে কানে আসত বেগম আখতার, বড়ে গুলাম আলির কণ্ঠস্বর। এখন সেই মঞ্চে প্রবেশ করেছেন জগজিৎ সিংহ। রেস্তরার আরও এক কর্ণধার দেবাদিত্য চৌধুরী বলেন, “একঘেয়েমি কাটাতে নতুন এই সংযোজন। আমাদের রেস্তরাঁর নতুন একটি ‘থিম সং’ও হয়েছে। ঠুংরি, গজ়লের মাঝে রাঘব চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে সেই গানও শোনা যাচ্ছে।”
‘অওধ ১৫৯০’ রেস্তরাঁটিকে নতুন করে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে দেশপ্রিয় পার্কের শাখা থেকে। ধীরে ধীরে কলকাতার সবক’টি শাখাতেই নতুন অন্দরসজ্জার কাজ শুরু হবে। তবে বিরিয়ানি প্রেমীদের রেস্তরাঁয় আসতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে বিষয়ে কর্ণধারদ্বয়ের কড়া নজর থাকবে।