অপরাধবোধ না রেখে সন্তান মানুষ করুন। ছবি: সংগৃহীত।
সদ্য মা হয়েছেন। বড়রা ইতিমধ্যে সাবধান করতে শুরু করেছেন। এটা করা যাবে না, সেটা করা যাবে না। মেয়েবেলার দীর্ঘ অভ্যাস চট করে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। মা হওয়ার পর অনেকেই সাধের চাকরি ছেড়ে দেন। বাচ্চার নাওয়া-খাওয়া নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, নিজের দিকে তাকানোর সময় পান না। মা হওয়ার পর জীবনে হঠাৎ করে অনেকগুলি নতুন কাজ এসে পড়ে, এ কথাও ভুল নয়। তাই বলে নিজেকে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার প্রয়োজন নেই। নিজের শখ-শৌখিনতা বজায় রেখেও সন্তানকে বড় করা যায়। হাতের কাজ সামাল দেওয়ার জন্য বাচ্চার হাতে ফোন ধরিয়ে দেন অনেক মা-ই। অনেক সময়ে পাশের বাড়িতে খেলতেও পাঠিয়ে দেন। সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে না পারার জন্য পরে হয়তো তা নিয়ে অপরাধবোধ তৈরি হয়। মনোবিদেরা বলছেন, তিনটি বিষয় নিয়ে মায়েদের মনে সঙ্কোচ রাখার কোনও প্রয়োজন নেই।
১) পেশাকে গুরুত্ব দেওয়া:
সন্তান মানুষ করতে গিয়ে অনেক মা নিজের পেশার কথা ভাবতে পারেন না। কারও মেয়ে, কারও স্ত্রী এবং কারও মা— এই পরিচয় ছাড়াও যে তাঁর নিজের পরিচয় রয়েছে, তা ভুলতে বসেন অনেকে। মাতৃত্বের সঙ্গে পেশার কোনও বিরোধ নেই। পেশা এবং ব্যক্তিগত জীবন সামলে চলা আসলে শিল্প। তা রপ্ত করতে হবে। চাকরি করতে করতে কাজ করা যেতেই পারে। তা নিয়ে মনে কোনও অপরাধবোধ রাখা ঠিক নয়।
২) নিজের জন্য সময় বার করা:
মায়ের দায়িত্ব পালন করেও নিজের শখ-শৌখিনতা বজায় রাখা যায়। শিশুর খাওয়া, ঘোরা, শোয়া, অন্যান্য পরিচর্যা করানোর পরেও দিনের মধ্যে সামান্য সময় যদি নিজের জন্য মায়েরা ব্যয় করেন, তাতেও অপরাধবোধে ভোগার কোনও কারণ নেই। শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে নিশ্চিন্তে মায়েরা বই পড়তে পারেন, সিনেমা দেখতে পারেন, বন্ধুদের সঙ্গে সময়ও কাটাতে পারেন। তবে একসঙ্গে সব কিছু বজায় রাখতে গেলে কিন্তু সময় সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
৩) সমাজমাধ্যমে বেশি সময় কাটানো:
ঘরে-বাইরে নানা প্রকার কাজ। কিন্তু কোলের শিশুটি যদি তার মাকে কাছছাড়া করতে না চায়, তা হলে কী করবেন? একনাগাড়ে কেঁদে চললেও তো কোনও কাজে মন বসে না। সে সব সামাল দেওয়ার জন্য মায়েরা বাচ্চাদের হাতে ফোন দিয়ে বসিয়ে রাখেন। সন্তানের ফোন দেখার অভ্যাসের জন্য পরবর্তী কালে মায়েরা নিজেদেরই দোষারোপ করতে থাকেন। তবে মনোবিদেরা বলছেন, এই ডিজিটাল যুগে বাচ্চাদের ফোন থেকে দূরে রাখার কোনও মানে হয় না। এ নিয়ে অপরাধবোধে ভোগারও কোনও কারণ নেই। বরং ফোনের উপর নিয়ন্ত্রণ রেখে প্রযুক্তির সঙ্গে সন্তানের পরিচয় করিয়ে দেওয়া ভাল।