চোখে চোখ রেখেই মানুষের পাশে থাকতে চান দীপ্সিতা। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ। (মূল ছবি ফেসবুক)
মফস্সলে বেড়ে ওঠা। ট্রেনে রোজ সহস্র মানুষের ভিড় ঠেলতে ঠেলতে কলকাতা হয়ে রাজধানী দিল্লি পৌঁছনো। কাঁধের ঝোলা ব্যাগে ভূগোল বই আর রক্তে রাজনীতি। দলের সাধারণ সমথর্ক, কর্মী থেকে ‘এসএফআই’-এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক দীপ্সিতা ধর। এ বার শামিল দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে। শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী তিনি।
পরীক্ষার দিন আসন্ন। সামনেই দীপ্সিতার কেন্দ্র শ্রীরামপুরে নির্বাচন। রোদ-ঝড়-জল মাথায় করেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তে ভোটের প্রচার। তারই মাঝে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল দীপ্সিতার সঙ্গে। প্রচার শেষে বাড়ি ফিরে, মধ্যরাতে নিজের ভাল লাগা, ভালবাসা, বিয়ে, ‘লিভ-ইন’ আর গায়ের রং নিয়ে নিজের মনের কথা সাবলীল ভাবে বললেন সিপিএম-এর ‘ইয়ুথ আইকন’ দীপ্সিতা।
প্রশ্ন: এখন দিন শুরু হয় কী ভাবে? চোখ খুলে প্রথমে কী করেন?
দীপ্সিতা: মা-বাবার ডাকে ঘুম ভাঙে। তার পর চোখ খুলেই প্রথম কাজ হল ফোনটা চার্জে দেওয়া।
প্রশ্ন: কী ধরনের খাবার খেতে ভাল লাগে?
দীপ্সিতা: সকালে বেরোনোর আগে খুব বেশি সময় থাকে না। তবে আমি ভেতো বাঙালি। ভাত খেতে ভীষণ ভালবাসি। সঙ্গে মাখন, আলু-ডিম সেদ্ধ এবং কাঁচা লঙ্কা। আর ছুটির দিনে ভাতের সঙ্গে খাসির মাংস চাই-ই চাই।
প্রশ্ন: রান্না করতে পারেন?
দীপ্সিতা: আমি রান্নাবান্না বিশেষ পারি না। হোস্টেলে থাকার কারণে রান্না করার অভ্যাস তৈরি হয়নি। তবে ভাত আর অমলেট বানাতে পারি।
প্রশ্ন: প্রচারের আগে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে কোন তিনটি জিনিস নিতে ভোলেন না?
দীপ্সিতা: দলের উত্তরীয়, গামছা এবং এক সেট জামা। খুব ঘাম হয়, এখন তো বৃষ্টিও হচ্ছে। তাই সব সময়ে একটা পোশাক সঙ্গে রাখতে হয়।
প্রশ্ন: রোদ থেকে বাঁচতে রোদচশমা পরেন না। বৃষ্টিতে ছাতা নিতেও দেখা যায় না কেন?
দীপ্সিতা: ছাতা হারিয়ে ফেলতে পারি। তাই ভয় লাগে। আর রোদচশমা পরে ভোট চাইতে যেতে আমার আপত্তি আছে। আমার চোখ দুটোই যদি মানুষ দেখতে না পান, তা হলে আর কী দেখে আমাকে বিশ্বাস করবেন?
প্রশ্ন: নিজের জীবনে এমন কাউকে পেয়েছেন, যাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে নির্দ্বিধায় গোটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়?
দীপ্সিতা: (খুব হেসে) হ্যাঁ, নিশ্চয়। পেয়েছি। তবে এখনই তাঁর পরিচয় সামনে আনার সময় আসেনি।
প্রশ্ন: কোনও সংস্কারে বিশ্বাস করেন?
দীপ্সিতা: সংস্কার কি না জানি না, তবে যেখানেই যাই না কেন, ডান হাতে ঘড়ি আর বাঁ হাতের অনামিকায় স্টিলের আংটি থাকে। সংস্কার ঠিক নয়, অভ্যাস বলতে পারেন।
প্রশ্ন: সোনা, রুপো ছেড়ে হঠাৎ স্টিলের আংটি কেন? আংটিবদলের স্মৃতিচিহ্ন?
দীপ্সিতা: আমি খুব জিনিস হারাই। ছাতা, বোতল, রুমাল সবই হারিয়ে ফেলি। গায়ে কোনও গয়না রাখতে পারি না। কিন্তু সামান্য ওই আংটিটা আমার কাছে খুব ‘স্পেশাল’। ওটা সামলে রাখাটাই আমার কাছে অনেক বড় দায়িত্ব।
প্রশ্ন: কোন দু’টি জিনিস আপনি অপছন্দ করেন?
দীপ্সিতা: লাল টিপ এবং রাজনীতি— একটা সময়ে এই দুটোই আমার অপছন্দের ছিল। কারণ, ছোট থেকেই আমি একটু ‘টম বয়’ গোছের ছিলাম তো। তাই বোধ হয় টিপ আমার ভাল লাগত না। আর বাড়ির লোকজনকে দেখে আমার ধারণা হয়েছিল রাজনীতি করলে পরিবারকে সময় দেওয়া যায় না। ঘুরতে যাওয়া যায় না। তাই রাজনীতি খুব ‘খারাপ’ জিনিস। তবে, এখন সে ধারণা পাল্টে গিয়েছে।
প্রশ্ন: হঠাৎ রাজনীতিতে আসার যোগসূত্র কী?
দীপ্সিতা: রাজনীতি আমার রক্তে ছিলই। আমার ঠাকুরদা পদ্মনিধি ধর বাম নেতা ছিলেন। কিন্তু আমার মতো যাঁরা শুধুমাত্র দলের সমর্থক ছিলেন, তাঁদের প্রত্যক্ষ ভাবে রাজনীতির ময়দানে আসার কারণ বোধ হয় ২০১১ সালের রাজনৈতিক পালাবদল।
প্রশ্ন: প্রিয় অভিনেতা কে?
দীপ্সিতা: মেয়েদের মধ্যে আমার সায়নী এবং পার্নো, দু’জনের অভিনয় খুব ভাল লাগত। সোহিনীদিও (সরকার) ভীষণ ‘বোল্ড’। আমার মা-ও সোহিনীদিকে খুব পছন্দ করেন। আসলে যাঁরা সেই অর্থে ধবধবে ফর্সা নন, তাঁদের আমার খুব ভাল লাগে। আর ছেলেদের মধ্যে আবীর, পরমব্রত এবং রাহুলদার (অরুণোদয়) অভিনয় ভাল লাগে।
প্রশ্ন: ছোটবেলার কোনও ক্ষত এখনও কষ্ট দেয়?
দীপ্সিতা: আমার ছোটবেলাটা ভীষণ ‘ট্রমা’-র মধ্যে কেটেছে। আসলে আমার মা-বাবা দু’জনেই আমার চেয়ে ফর্সা। ওঁদের সঙ্গে পাড়ায়, দোকানে, বাজারে গেলেই কেউ না কেউ জিজ্ঞেস করতেন, ‘এ মা! মেয়েটা এত কালো হল কী করে?’
প্রশ্ন: কোনও কিছুতে ভয় পান?
দীপ্সিতা: ভয় কি না জানি না। তবে গায়ের রং নিয়ে এখনও মনের গভীরে কোথাও যেন একটা ক্ষত রয়ে গিয়েছে। আত্মবিশ্বাসের অভাব বোধ করি।
প্রশ্ন: কাজেও এর প্রভাব পড়ে?
দীপ্সিতা: পড়বেই তো। প্রচারে বেরিয়ে হঠাৎ যদি দেখি আমাকে দেখে কেউ মুখ ঘুরিয়ে নিলেন, তখন মাথার মধ্যে ওই কথাটা (গায়ের রং) ঘুরতে থাকে।
প্রশ্ন: আচ্ছা সায়নী, পার্নোদের অভিনয় ভাল লাগত বলছেন কেন? রাজনৈতিক মতাদর্শ আলাদা হয়ে গেল বলে?
দীপ্সিতা: আসলে আমি রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে পেশাকে আলাদা করে দেখতে পারি না। আমার চিন্তা-ভাবনা, আমার রুচি-পছন্দ, আদর্শের ছাপ তো আমার কাজে পড়বেই।
প্রশ্ন: সমাজমাধ্যমে কাউকে ফলো করেন?
দীপ্সিতা: ‘বং গাই’ মানে কিরণ আর শমীক অধিকারীকে আমার খুব ভাল লাগে।
প্রশ্ন: অবসর কাটে কী ভাবে?
দীপ্সিতা: সিনেমা দেখি, সিরিজ় দেখি। কোনও সিরিজ় দেখতে শুরু করলে এক বারে সব ক’টা এপিসোড দেখে ফেলি। গান শুনতেও ভালবাসি।
প্রশ্ন: কী ধরনের গান শোনেন?
দীপ্সিতা: বাংলা ব্যান্ডের গান শুনি। কাজ থেকে ফেরার সময়ে আমার গাড়িতে হিন্দি গানও চলে। তবে পঞ্জাবি গানের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। হয়তো বহু বছর দিল্লিতে থাকার প্রভাব।
প্রশ্ন: পাহাড় না সমুদ্র?
দীপ্সিতা: আমি সমুদ্র ভালবাসি। দীর্ঘ দিন দিল্লিতে থেকেছি। সেখান থেকে পাহাড়ে যাওয়া সহজ ছিল। তাই হিমাচল আমার খুব পছন্দের। কেরলও ভাল লাগে।
প্রশ্ন: ‘সোলো ট্রিপ’ করেন?
দীপ্সিতা: হ্যাঁ, আমি বিদেশে একাই গিয়েছি। কোনও না কোনও কনফারেন্সে তো যেতেই হয়। সেখানে পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না।
প্রশ্ন: প্রেম, বিয়ে না কি লিভ-ইন?
দীপ্সিতা: লিভ-ইন বা বিয়ে নিয়ে আলাদা করে আমার কোনও ছুতমার্গ নেই। তবে, ভিন্ধর্মের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘বিয়ে’ নামক আইনি সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমার মনে হয়।