Anuttama Bandyopadhyay

সংখ্যালঘু হয়ে খ্রিস্ট উৎসব পালন করলে লোকে কী বলবে? বলছেন মনোবিদ

আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলের আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে বিশেষ পর্বের তিন অতিথি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৪৩
Image of Anuttama Banerjee

ছবি: সংগৃহীত।

বড়দিনে স্কুলের ছুটি পড়লে মা-বাবার হাত ধরে পার্ক স্ট্রিট, নিউ মার্কেট, বো-বারাকের স্মৃতি এখনও টাটকা। পুরনো অ্যাংলো পাড়া দিয়ে স্কুল যাওয়ার সময়ে ভুরভুর করা কেকের, কুকির গন্ধে মাতাল হত মন। যিশু ‘ঠাকুর’ পুজো না করলেও তার বড়দিনে তার প্রসাদ পাওয়া যেত ‘কনভেন্ট’ পরিচালিত স্কুল থেকে। উৎসব মানে তখন শুধুই উদ্‌যাপন ছিল। খ্রিস্টধর্মের মানুষ না হয়েও উৎসব পালনে কোনও অস্বস্তি ছিল না। আবার খ্রিস্টধর্মাবলম্বী হয়েও হিন্দু মিশন পরিচালিত স্কুলে সন্ধ্যারতি দেখতেও অস্বস্তি হওয়ার কথা নয়। তবে ধর্ম বা আধ্যাত্মিকতা ব্যক্তিগত চেতনা। তা কেউ হাতে ধরে নির্ধারণ করে দিতে পারেন না। এই বোধ জাগ্রত করতেই আনন্দবাজার অনলাইনের ইউটিউব চ্যানেলের আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে রয়েছেন বিশেষ পর্বের তিন অতিথি। লোরেটো কলেজের অধ্যাপক দিনাজ় জিজিভয়, ডায়োসেশন স্কুলের অধ্যক্ষ স্নিগ্ধা গায়েন এবং আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাজউদ্দিন আহমেদ। ‘লোকে কী বলবে? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ সপ্তাহের বিশেষ পর্ব ‘মঙ্গলবার্তা’।

Advertisement

এত ক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন, বড়দিনের পর্ব একটু আলাদা। অন্যান্য সপ্তাহের মতো এই পর্বে মনোবিদের কাছে চিঠি পাঠানোর উপায় নেই। তবে উৎসব উদ্‌যাপনের পাশাপাশি, ধর্মবোধ জাগ্রত করার প্রয়োজন রয়েছে। পৃথিবীর আলো দেখা মাত্রই কারও ধর্ম নির্ধারিত হয় না। কোন মানুষ কোন ধর্মের, তা বাইরে থেকে দেখে বোঝাও যায় না। ছোটবেলায় বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে স্থানীয় গির্জায় ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা, উপহার আদানপ্রদানই ছিল শিক্ষক তাজউদ্দিনের ছেলেবেলার স্মৃতি। আবার, ২৪ ডিসেম্বর রাতে রামকৃষ্ণ মিশনে খ্রিস্টপুজো দেখার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। সেখানে প্রসাদ ছিল পায়েস। তাঁর কথায়, “খ্রিস্ট উৎসব আমার কাছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া ছাড়া অন্য কিছুই নয়।”

ডায়সেশন স্কুলের অধ্যক্ষ স্নিগ্ধা গায়েনের জন্ম খ্রিস্ট পরিবারে। তাই আলাদা করে বড়দিন নিয়ে ছোট থেকে উন্মাদনা ছিলই। তবে বড়দিনের ছুটির আনন্দ আরও দ্বিগুণ হয়ে যেত স্কুলের পরীক্ষা শেষ হত বলে। স্কুলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হত সপ্তাহ জুড়ে। উপহার পাওয়ার আনন্দ তো ছিলই। ছোটবেলায় বাইবেলের তাৎপর্য না বুঝলেও সেই সময় থেকেই তিনি বুঝেছিলেন বড়দিনের বার্তা। আনন্দ ভাগ করে নিলে যে তা আরও বেড়ে যায়, সে কথা ছোটবেলাতেই বুঝে গিয়েছিলেন। স্নিগ্ধা বলেন, “খ্রিস্টার্ন গোষ্ঠীর বাইরে গিয়েও যখন সকলে বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, তা দেখতে ভাল লাগে।”

পার্সি পরিবারে জন্ম হয়েছে অধ্যাপক দিনাজ় জিজিভয়ের। শহরে এই সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা খুবই কম। তবে বড়দিন হোক বা দীপাবলি, উৎসব তাঁর কাছে শুধুই উদ্‌যাপন। ছোটবেলায় সান্তাবুড়োর থেকে উপহার পাওয়ার চল আজকের নয়। সকলকে এক জায়গায় জড় করা, সমবেত হওয়া, আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার যে আনন্দ— তাই উৎসব। দিনাজ় বলছেন, “উৎসব উদ্‌যাপন করার যে আনন্দ, এই অভিজ্ঞতা ধর্মে আটকে থাকতে পারে না।”

আরও পড়ুন
Advertisement