Anuttama Banerjee

‘সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে পারি না, পিছিয়ে পড়ছি, লোককে কী করে বলব?’ আলোচনায় মনোবিদ

‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘কাজ ফেলে রাখি’।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৩ ২০:৩৫
Anuttama Banerjee

কাজের প্রতি এত অনীহা কেন? ছবি: সংগৃহীত

সময় মতো অফিসের কাজ শেষ না করতে পারায় রোজ বসের বকুনি শোনেন, এমন অনেকেই আছেন। কেবল অফিস কেন, বাড়ির কাজেও তো একই হাল! কোনও কাজই সময়ে শেষ হয় না। যাঁরা সত্যিই কাজ হাতে নিয়ে শেষ করতে পারেন না, যাঁদের সত্যিই মনে হয় এখন থাক পরে করব! তাঁদের মনের মধ্যে আসলে কী চলে? তাঁরাও কী তাঁদের লক্ষে পৌঁছতে চান না? সত্যিই কি শ্রমে অনীহা? তাঁদের কি জীবনে সফল হতে মন চায় না? কোথায় সমস্যা হচ্ছে আর এই সমস্যা থেকে মুক্তিই বা কোন পথে, এ সব নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘কাজ ফেলে রাখি’।

প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও ই-মেলে তেমন কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ। সূর্য লিখেছেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই আমার কাজ ফেলে রাখার স্বভাব। পড়াশোনার থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় আমাকে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে, কারণ আমি সময়ের কাজ সময় মতো শেষ করতে পারি না। অনেক সময়ে লক্ষ্য স্থির করি বটে, তবে কয়েক দিন পরেই আবার ফাঁকি দিতে শুরু করি। আমার লক্ষ্য আর কাজ শেষ করার মধ্যে বিরাট ফারাক তৈরি হয়ে যায়। বার বার চেষ্টা করেও লাভ হয় না।’’

Advertisement

কেবল শিক্ষার্থীর জীবনেই এমন সমস্যা হচ্ছে তা নয়, শিক্ষক-শিক্ষিকারাও একই সমস্যায় ভুগছেন। রিয়াঙ্কা লিখেছেন, ‘‘আমার বয়স ২৯ বছর। আমি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। কাজ ফেলে রাখার অভ্যাস আমার বহু দিনের। পরে লিখব বলে রিসার্চ পেপারও আমি শেষ করে উঠতে পারি না। একাধিক বার ফর্ম ভরারও সময়ে পেরিয়ে গিয়েছে আমার। কোনও প্রতিযোগীতায় ফেলে দিলে আমি ভাল কাজ করে দেখাতে পারি, তবে কোনও চাপ না থাকলে ভিতর থেকে কাজ করার ইচ্ছা আসে না।’’

সত্যিই যদি মানুষ কাজগুলি শেষ করতে চান, তা হলে নিজেই নিজের চাওয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়ি কেন? অনুত্তমা বললেন, ‘‘কাজ ফেলে রাখা নিয়ে মনস্তত্ত্বের যে গবেষণা সেখানে দেখা গিয়েছে, এই পুরো বিষয়টি কিন্তু টাইম ম্যানেজমেন্টের সমস্যা নয়। এর মধ্যে অন্য আবেগের জট থেকে যাচ্ছে। আবেগের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া করতে অসুবিধা হচ্ছে। এখানে মূলত নেতিবাচক আবেগের কথা বলা হয়েছে। পড়াশোনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মূল্যায়ন ও পরীক্ষা। এ ক্ষেত্রে কোথাও একটা সফল না হওয়ার ভয় কাজ করে। সেই ভয়কে লুকিয়ে রাখতেই আমরা বিনোদনের উপর নির্ভর করি। সাময়িক উদ্বেগের থেকে বাঁচতে আমরা সাময়িক পলায়নের পথ খুঁজে নিচ্ছি, কিন্তু পরবর্তী কালে লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। বরং ভয়, উদ্বেগ আরও বাড়ছে। ফলে কাজের বারোটা বাজে। অনেকে পড়ি কি মরি করে কাজটা শেষ মুহূর্তে করছেন বটে, তবে যেই মনোযোগ নিয়ে কাজটা করা হচ্ছিল, সেটা আর করা হয়ে ওঠে না। গলদ আদতে ভাল না লাগার সঙ্গে বোঝাপড়ার অভাব। অনেকে আবার বাইরের উদ্দীপকের ঠেলায় কাজগুলি করে ফেলেন, ভিতর থেকে সেই তাগিদ না এলেও। কাজের ক্ষেত্রে একঘেয়েমি থেকেও কাজ ফেলে রাখার প্রবণতা আসে। তবে আমাদের বুঝতে হবে সময়ে কাজে সমান উত্তেজনা থাকবে না। আমাদের বুঝতে হবে এমন কাজ আমাদের করতে হবে, যা করতে হয়তো আমাদের ভাল লাগে না। কিন্তু যার ফল ভাল হবে। বড় প্রাপ্তির কথা মাথায় রেখে এখনকার অপছন্দ, ভাল না লাগাগুলিকে গ্রাহ্য করা চলবে না। যাঁরা বলছেন যে, অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু হচ্ছে না, তাঁদের তাগিদ কিন্তু আর একটু বাড়াতে হবে। নিজেকে বোঝাতে হবে, সাময়িক কোনও পরিস্থিতি থেকে পালাতে গিয়ে বড় কোনও সুযোগ বা বড় কোনও লাভ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে না তো! আর যাঁরা কাজ শেষ করার জন্য বাইরের উদ্দীপকের উপর নির্ভর করেন, তাঁদের বলব নিজেকেই কাজ শেষের পর পুরস্কার দিন। দেখবেন কাজের তাগিদ বেড়েছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement