পোকামাকড়ের ‘শ্রাদ্ধ’। ছবি: সংগৃহীত।
কীটনাশক বাজারে পাঠানোর আগ তার কার্যক্ষমতা যাচাই করতে কীটপতঙ্গের উপরে প্রয়োগ করা হয়। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে প্রচুর কীটপতঙ্গ তাদের জীবন ‘উৎসর্গ’ করে। সেই মৃত কীটপতঙ্গের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর জাপানের কীটনাশক প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘আর্থ ফার্মোসিউটিক্যাল রিসার্চ’ স্থানীয় মায়োদাজি মন্দিরে পুজোর আয়োজন করে। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
গৃহস্থালীর কীটপতঙ্গে মারার জন্য যে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, সেগুলি তৈরি করে ওই সংস্থাটি। কীটনাশক তৈরি করার পরেই সঙ্গে সঙ্গে তা রপ্তানি করা হয় না। আদৌ সেগুলি ফলদায়ক কি না তা বুঝতে পরীক্ষাগারে কীটপতঙ্গের উপর কীটনাশক প্রয়োগ করে পরীক্ষা করা হয়। ক্ষুদ্র কীট বলে তাদের নির্মম ভেবে মেরে ফেলতে খারাপ লাগে। সংস্থা কর্তৃপক্ষের মনে হয়েছে নিজেদের স্বার্থে কীটপতঙ্গের উপর অবিচার করা হচ্ছে। তাই মূলত তাদের উদ্দেশে সম্মান জানাতেই এমন প্রয়াস সংস্থার।
মশা, মাছি, আরশোলা, পিঁপড়ে, টিকটিকির ছবি সার দিয়ে সাজানো। কীটপতঙ্গের ছবির সামনে হোমযজ্ঞ, পুজোপাঠ করছেন পুরোহিত। পুজোর আয়োজনে কোথাও কোনও ত্রুটি নেই। সংস্থার কর্মীরা এবং তাঁদের বাড়ির লোকজনে ছয়লাপ মন্দির চত্বর। সকলেই জোড়হাতে, চোখ বন্ধ করে কীটপতঙ্গের আত্মার শান্তি কামনায় ব্যস্ত। তবে জাপানে এই ঘটনা নতুন কিছু নয়। জাপানের প্রাচীনতম জেন বৌদ্ধ ধর্মের এই রীতি বহুকাল আগের। মৃত পোকামাকড়ের শান্তি কামনায় শুধু নয় পুজোপাঠই নয়, স্মারকও স্থাপন করা হয়। জাপানি ভাষায় একে ‘মুশিজুকা’ বলা হয়। মৃত কীটপতঙ্গগুলি সমাধিস্থ করা হয়। এবং এই সমাধির উপরেই স্মারকগুলি তৈরি করা হয়।
সংস্থার প্রধান টোমিহিরো কোবরি এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিজ্ঞানের যুগে আলাদা করে কারও প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের প্রবণতা কমে আসছে। তবে এই হাজার হাজার মৃত কীটপতঙ্গের প্রতি আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।’