নেতিয়ে পড়া সুতির শাড়ি। খুব একটা পরিপাটি করে পরা হয়েছে, তা-ও না। ব্লাউজের বদলে একটা ঢিলে ঢালা শার্ট গলিয়ে, তার কাঁধে জড়ো করা রাখা হয়েছে আঁচল। গলায় কালচে হয়ে আসা রুপোর হার। আর হাতে কয়েক গাছা চুরি। আলগা খোঁপায় গোঁজা একটা কাঠচাঁপা ফুল।
এমন সাজ কার বলুন তো! পাহাড়ি বসতির শ্রমিক রমণী? হলে যদিও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। কিন্তু, ইনি কঙ্কনা সেন শর্মা।
শাড়ি পরতে খুব ভালবাসেন, তা তাঁর সমাজ মাধ্যমের ৩ লক্ষ ২২ হাজার অনুগামীর জানতে বাকি নেই। সিনেমার প্রিমিয়ার হোক বা পুরস্কার দেওয়ার অনুষ্ঠান কিংবা পত্রিকার প্রচ্ছদের ফটোশ্যুট— সর্বত্র শাড়িতেই হাজির হন কঙ্কনা। বল গাউন, শাড়ি গাউন, অউত কুচারের ভিড়ে দিব্যি আলাদা করে নজর কাড়েন। ১২ হাতের রকমফেরে তৈরি করেন সুন্দর ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। সেই কঙ্কনারই সাম্প্রতিক শাড়ি-স্টাইল উপরের লেখাটি।
পারেনও বটে তিনি! মানছি, বঙ্গললনা। শাড়ি পরা তাঁর বাঁয়ে হাত কা খেল! তা বলে যে ভাবেই পরবেন, তাতেই এমন একশোয় একশো পেতে হবে! এমন অনুজ্জ্বল সুতির শাড়ির সঙ্গে ঢিলে ঢালা শার্ট পরেও একটু গ্ল্যামারের কমতি অনুভব হবে না? ইনস্টাগ্রামে অভিনেত্রী যে ছবিটি শেয়ার করেছেন, তার বিবরণে লেখা, ‘ব্লাউজ যখন ম্যাচ করে না’।
তা হলে কঙ্কনারও ব্লাউজ ম্যাচিংয়ের সমস্যা হয়! আর তেমন সমস্যায় পড়লে তিনি শাড়ির সঙ্গে পরে নেন শার্ট! ডিজাইনার অভিষেক দত্ত অবশ্য তাতে সমস্যার কিছু দেখছেন না। বরং জানালেন, ম্যাচিং ব্লাউজ না পাওয়া একটা চিরকালীন সমস্যা। তাছাড়া এক শাড়ি বার বার একই ব্লাউজের সঙ্গে পড়তেও তো একঘেয়ে লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রেমিক কিংবা বরের ঢিলে ঢালা শার্ট হয়ে উঠতে পারে আপনার উদ্ধারকর্তা।
কী ভাবে পরবেন
অভিষেক জানাচ্ছেন, শার্টকে কোমরের উপর পর্যন্ত বোতাম আটকে বাকি অংশটা দিয়ে ছোট্ট গিঁট বেঁধে নিয়ে তার উপর শাড়ি পরুন। আর যদি একটু রক্ষণশীল হতে চান, তবে শার্ট গুঁজে নিন পেটিকোটের সঙ্গে। গলার কাছের দু’টো বোতাম খোলা রাখুন। শার্টকে প্রাধান্য দিতে সাধারণ ভাবে গায়ে আঁচল না ফেলে, একটু ঝুলিয়ে সরু করে নিতে পারেন আঁচল। আর যদি একটু সাহসী হতে ইচ্ছে হয়, তবে শার্টের বোতাম খোলাই রাখুন। ভিতরে থাকুক বিকিনি টপ, স্পোর্টস ব্রা কিংবা ব্রা লেট। এক্ষেত্রেও আঁচল সরু করে নিলে ভাল লাগবে। চেকস, ফ্লোরাল, ডেনিম শার্ট বা এক রঙা শার্ট সব কিছুই মানিয়ে নেওয়া যায় শাড়ির সঙ্গে। এমনকি বাংলার তাঁতের শাড়িকেও শার্টের সঙ্গে পড়ে দারুণ ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরি করা যেতে পারে। শুধু এর সঙ্গে কি গয়না পরছেন, কেমন জুতো বা ব্যাগ নিচ্ছেন, তার উপরও কিছুটা নির্ভর করবে।
আর কী কী বিকল্প
ব্লাউজ ম্যাচ না করতেই পারে। তবে হাতের কাছে শার্ট না পেলে কি করবেন! ‘‘টি শার্ট পরুন। এখন শীতকাল, তাই লেদার জ্যাকেটও পরতে পারেন। ব্লেজার আর লেদার জ্যাকেটের সঙ্গে শাড়ি নিয়ে আমি নিজে কাজ করেছি। অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তীকে ব্লেজারের সঙ্গে শাড়ি পরিয়েছি বাংলার পুরনো ঘরোয়া স্টাইলে।’’ জানালেন অভিষেক। আবার ব্লেজারের সঙ্গেই ধুতির স্টাইলে শাড়ি পরে কোমরে মোটা বেল্ট দিয়ে নিলে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ অন্য লুক তৈরি করবে।
গয়না
কঙ্কনা শার্টের সঙ্গে পরেছেন রুপোর হার আর এক গোছা কালো চুরি। কিন্তু, ব্লেজার, জ্যাকেটের সঙ্গে গয়না পরা যাবে কি! বড় গয়না পরা যেতেই পারে। বড় দুল, ব্যাঙ্গলস বা লম্বাটে হার— তবে যে কোনও একটা পরুন। একই সঙ্গে বড় দুল আর হার পরলে ভাল লাগবে না।
জুতো
শার্টের সঙ্গে শাড়ি পরলে তার সঙ্গে ক্যানভাসের জুতো ভাল লাগে, জানাচ্ছেন অভিষেক। লেদার জ্যাকেট, ব্লেজার, পরলে বুট পরতে পারেন। তবে গরমকালে বুটের বদলে স্টিলেটো বা হাই হিল স্যান্ডাল পরতে পারেন।