আদিকাল থেকে চলে আসা মেয়েদের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা শুনলে মনে হবে যেন দুই বন্ধুর প্রাণখোলা কথোপকথন। ছবি- সংগৃহীত
শুটিংয়ের সময় ঋতুস্রাব হওয়ার ফলে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হয়েছে জয়া বচ্চনকে। নাতনির নেওয়া পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে প্রথম ঋতুস্রাবের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন জয়া। নাতনির সামনে যথেষ্ট সাবলীল জয়া বলেন, “নিশ্চয়ই মনে আছে। বিশেষ করে শুট থাকলে তো আমাকে খুবই সমস্যার মধ্যে পড়তে হত।”
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিজের শরীরে ধারণ করার যে শক্তি মেয়েদের মধ্যে রয়েছে, তা এক দিকে যেমন আশীর্বাদ, অন্য দিকে তেমন সমস্যারও। পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার মানসিক জোর মেয়েদের থাকলেও শারীরিক দিক থেকে একটু হলেও কি পিছিয়ে নেই মেয়েরা?
বিশেষ করে ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করা খুবই সমস্যার। এই প্রজন্মের মেয়েরা তাদের সমস্যার কথা জানাতে বিশেষ রাখঢাক না করলেও, আগের প্রজন্ম কিন্তু সেই ছোঁয়াচ কাটিয়ে উঠতে পারেননি। কারণ, সেই সময় মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব ছিল।
এখন যেমন সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে রাস্তার পাশে শৌচাগার তৈরি হয়েছে, মহিলাদের কথা ভেবে সেখানে রাখা থাকে স্যানিটারি ন্যাপকিন। কিন্তু ৩০-৪০ বছর আগে দেশের ছবিটা অন্য রকম ছিল। কলকাতা হোক বা মুম্বই, চিত্র কিন্তু কম-বেশি একই। সে সমাজের যে স্তরের মহিলাই হন না কেন, ঋতুস্রাবের বিড়ম্বনা সবাইকেই পোহাতে হয়েছে।
নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি উজাড় করে জয়া জানিয়েছেন, মুম্বাইয়ে সত্তর, আশির দশকের অভিনয় জগতের অব্যবস্থার কথা। অভিনয় শুরুর দিনগুলো থেকেই জয়াকে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সেটের মধ্যে থাকলে তা-ও এক রকম। কিন্তু বাইরে শুট থাকলে, মাসের ওই বিশেষ দিনগুলো হয়ে উঠত আরও অসহনীয়। জয়ার কথায়, “ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমাকে কাজ করতে হয়েছে। যা খুবই লজ্জাজনক। তখন তো আমাদের জন্য আলাদা করে ভ্যানিটি ভ্যান থাকত না। খোলা মাঠে বা পাহাড়ের চুড়োয় শৌচাগার পাওয়ার আশা ছেড়ে, ন্যাপকিন বদলাতে যেতে হত ঝোপের পিছনে।”
খোলামেলা এই আলোচনায় ঋতুস্রাব প্রসঙ্গে জয়া বলেন, “এই প্রজন্মের মেয়েরা কল্পনাও করতে পারবে না, কী ভাবে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভিজে স্যানিটারি তোয়ালে নিয়ে বসে থাকতাম, ওই অবস্থায় শুট করতাম।”
স্যানিটারি ন্যাপকিনের যুগে, স্যানিটারি তোয়ালের কথা শুনে হয়তো অনেকে বুঝতেই পারবে না, যে জিনিসটি আসলে কেমন, বা তা কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়।
আদিকাল থেকে চলে আসা মেয়েদের এই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা শুনলে মনে হবে যেন দুই বন্ধুর প্রাণখোলা কথোপকথন। জন্মের পর থেকে মেয়েদের বড় হয়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়ে, শারীরিক এবং মানসিক বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে অভিভাবক হিসেবে নয়, বন্ধু হিসাবে মেশার টিপসও দিয়েছেন জয়া।