‘সাশ্রয়ের রানি’ বলেও ডাকা হয়। ছবিঃ সংগৃহীত
কেনাকাটা করতে যান না, আবর্জনাও জমিয়ে রাখেন, এক ফোঁটা জলও নষ্ট করেন না। এমনকি, দিতে হয় না বিদ্যুতের বিলও। ওড়িশার বাসিন্দা ৭৪ বছর বয়সি জনক পালটা ম্যাকগিলিগান-এর এই পরিবেশ বাঁচানোর কাহিনি সকলের মুখে মুখে ঘুরছে। শুধু নিজের বাড়িতে নয়, গ্রামের আরও ৫০টি বাড়িতেও একই নিয়ম চালু করেছেন তিনি। ‘সাশ্রয়ের রানি’ বলেও ডাকা হয়।
১৭ বছর বয়সে তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছিল কঠিন অসুখ। করতে হয়েছিল ‘ওপেন হার্ট সার্জারি’ও। অস্ত্রোপচারের পরেই ফিরে পেয়েছিলেন নতুন জীবন। মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরে এসে ঠিক করেছিলেন এ বার থেকে তিনি সেই কাজই করবেন, যা মানুষের বেঁচে থাকার সহায়ক হয়। তার জন্য সবচেয়ে আগে প্রকৃতিকে বাঁচানো জরুরি। মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা তাঁর দীর্ঘ দিনের। ছোট থেকেই ভাবতেন, সমাজের জন্য কিছু করবেন। প়়ড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন গ্রামোন্নয়ন সংস্থার হয়ে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। পরিবেশ দূষণের সমস্যা নিয়েও ছিল তাঁর লড়াই। ব্রাজিলে এই বিষয়ক একটি সামিটে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকেই প্রকৃতিকে বাঁচানো যে কতটা জরুরি, সে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় জনকের কাছে। পরিবেশ দূষণের প্রভাব মানুষের শরীরে কী ভাবে পড়তে পারে, এর ফলে কী কী ক্ষতি হতে পারে, এ সব নিয়ে শুরু করেন পড়াশোনা।
যে বাড়িতে তিনি থাকেন, সেখানে সম্পূর্ণ অপ্রচলিত শক্তিচালিত করে তোলেন, একই সঙ্গে গ্রামের অন্য বাড়িগুলিতেও একই ব্যবস্থা করেন। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উইন্ডমিল অর্থাৎ বায়ুকল বসান। যার ফলে আলাদা করে বিদ্যুতের ঘাটতি হয় না। সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে রান্না করেন। পুরনো খবরের কাগজ ব্যবহার করে বিশেষ ধরনের ইট তৈরি করেন। যা সূর্যের আলো ছাড়াই রান্নার কাজে আসবে। এ ছাড়াও জনকের বাগানে রয়েছে ১৬০টি গাছ। একইসঙ্গে ১৩ রকম সব্জি চাষ হয়। বর্তমানে তিনি একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন, যেখানে অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার নিয়ে ছেলেময়েদের পড়ানো হয়। ভারত সরকারও তাঁর এই প্রয়াসকে সম্মান জানিয়ে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছে তাঁকে।